বলিউডের এক যুগের অবসান। দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতার পর সোমবার মৃত্যু হয়েছে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রের। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বেশ কয়েক দিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। ভেন্টিলেশনে ছিলেন। বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। নিজের বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি অভিনেতা।
ছ’দশক ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ধর্মেন্দ্র। ৩০০টির বেশি ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন। তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে বহু সফল হিন্দি ছবি। তবে, ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের জোরে বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
ধর্মেন্দ্রের পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই বলিউডের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তবে জানা আছে কি ধর্মেন্দ্রের এমন এক জন ভাই ছিলেন, যিনি খোদ ধর্মেন্দ্রর নাম পেয়েছিলেন। পরিচিত ছিলেন ‘পঞ্জাবের ধর্মেন্দ্র’ নামে।
ধর্মেন্দ্রর সেই খুড়তুতো ভাইয়ের নাম ছিল বীরেন্দ্র সিংহ দেওল। তবে এটা ছিল তাঁর সিনেমার নাম। তাঁর আসল নাম ছিল সুভাষ ধাদওয়াল।
বলা হয়, আশির দশকে ধর্মেন্দ্রের চেয়েও বড় তারকা হয়ে উঠেছিলেন বীরেন্দ্র। পঞ্জাবি চলচিত্র জগতের সুপারস্টার ছিলেন তিনি। প্রযোজক এবং পরিচালকেরা তাঁর দরজায় লাইন দিয়ে থাকতেন। সকলেই মনে করতেন, বীরেন্দ্র থাকলে ছবি হিট হবেই।
কিন্তু প্রতিভাবান সেই চলচ্চিত্র তারকার মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ৪০ বছর বয়সে। স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, খুন হয়েছিলেন অভিনেতা। ১৯৮৮ সালে একটি ছবির সেটে তাঁকে হত্যা করা হয় তাঁকে। সেই কারণে, বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশের কাছেই তাঁর নাম অজানা।
বীরেন্দ্র অভিনয়ের নেশায় এমনই বুঁদ ছিলেন যে, জঙ্গিদের হুমকি উপেক্ষা করেই অভিনয় করতে গিয়েছিলেন। শুটিংয়ের সেটেই গুলি চালিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। তবে বীরেন্দ্রর মৃত্যুরহস্য আজও অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে।
১৯৪৮ সালে পঞ্জাবের ফাগোয়ারায় বীরেন্দ্রের জন্ম। বয়সে দাদা ধর্মেন্দ্রের থেকে প্রায় ১৩ বছরের ছোট ছিলেন তিনি। ছোট থেকেই অভিনয় করতে ভালবাসতেন বীরেন্দ্র। পঞ্জাবি সিনেমাজগতে অভিনয়ের সুযোগও জোটে।
১৯৭৫ সালে পঞ্জাবি ছবি ‘তেরি মেরি এক জিন্দরি’র মাধ্যমে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ করেন বীরেন্দ্র। সেই ছবিতে বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্রও। এর পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি বীরেন্দ্রকে। ১৯৮০-র দশকে পঞ্জাবি সিনেমা জগতে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন বীরেন্দ্র। প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন দক্ষ অভিনেতা হিসাবে।
বীরেন্দ্র অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি এক জন পরিচালক, প্রযোজক এবং লেখকও ছিলেন। ১২ বছরের কেরিয়ারে ৪০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বীরেন্দ্র। বেশ কয়েকটি ছবি পরিচালনাও করেছিলেন। পরিচালনা করেছিলেন একটি হিন্দি ছবিও। সেই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গোবিন্দ।
বীরেন্দ্রের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ছবির মধ্যে অন্যতম ছিল ‘লম্ভারদারনি’, ‘বলবীরো ভাবী’, ‘জাট শুরমে’, ‘রঞ্ঝা মেরা ইয়ার’ এবং ‘দুশমনি দি আগ’। এর মধ্যে ‘দুশমনি দি আগ’ ছবি তাঁর মৃত্যুর পর মুক্তি পেয়েছিল।
বীরেন্দ্রের হাবভাব, পোশাকআশাক সবই ছিল দাদা ধর্মেন্দ্রের মতো। তাঁকে দেখতেও অনেকটা ধর্মেন্দ্রের মতোই ছিল। তাই তিনি পরিচিত পেয়েছিলেন ‘পঞ্জাবের ধর্মেন্দ্র’ নামে।
১৯৮৮ সালের ঘটনা। বীরেন্দ্র একটি ছবিতে কাজ করছিলেন। ছবির নাম ছিল ‘জট তে জ়মিন’। সেই সময় পঞ্জাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছিল তুঙ্গে।
পঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদীরা হঠাৎ হুমকি দিয়েছিল, সিনেমার শুটিং করা যাবে না। ছবির কলাকুশলীদের বাড়ির বাইরে পা না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও বীরেন্দ্র শুটিংয়ের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বীরেন্দ্রের মত ছিল, মৃত্যু যখন খুশি আসতে পারে। তাই মৃত্যু নিয়ে আতঙ্কিত হলে চলবে না। তিনি যদি অভিনয় করতে করতে মারা যান, তা হলে সেটা তাঁর পরম সৌভাগ্য হবে বলেও জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠ মহলে।
সেই কারণেই জঙ্গিদের হুমকি উপেক্ষা করে ছবির শুটিংয়ে যান বীরেন্দ্র। ১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ছবির সেটেই তাঁকে গুলি করে খুন করে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। তবে তাঁকে কে বা কারা খুন করেছিল, সে রহস্যের সমাধান এখনও পর্যন্ত হয়নি।
সে সময় অনেকে দাবি করেন, বীরেন্দ্র অভিনয় জগতে সফল হতে শুরু করেছিলেন। তাঁর সাফল্য অনেকের কাছেই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। তাই তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করে দোষ চাপানো হয় সন্ত্রাসবাদীদের নামে।
বীরেন্দ্রের মৃত্যু পঞ্জাবি ছবির জগতে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। ভাইকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন ধর্মেন্দ্রও।