US Canada Conflict

আগ্রাসী ট্রাম্পকে জবাব দেওয়ার হিম্মত রাতারাতি হাওয়া, অপদার্থ নেতৃত্বের হাতে পড়ে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ কানাডার ফৌজ!

কানাডার সেনাবাহিনীর হতাশাজনক পরিস্থিতি এ বার বেআব্রু করল সেখানকারই একটি গণমাধ্যম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংযুক্তিকরণের হুমকির মুখে অটোয়ার অবস্থা যে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’, তা আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ১৬:০৯
Share:
০১ ১৮

কানাডাকে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত করতে বদ্ধপরিকর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এ হেন আগ্রাসী মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেছে অটোয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব। অন্য দিকে এ ব্যাপারে ফৌজি অভিযানের চিন্তাভাবনা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন। শেষ পর্যন্ত ‘সুপার পাওয়ার’ আমেরিকা আক্রমণ করলে, তা ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত কানাডার সেনা? অনুসন্ধানে উঠে এল করুণ ছবি।

০২ ১৮

সম্প্রতি অটোয়ার সশস্ত্র বাহিনীর (পড়ুন কানাডিয়ান আর্মড ফোর্স বা সিএএফ) হতাশাজনক দশা রেডিয়ো কানাডার একটি অনুষ্ঠানে বেআব্রু হয়ে যায়। প্রকাশ্যে আসে, গোলাবারুদ থেকে শুরু করে অন্যান্য অস্ত্রের অভাবে কতটা ভুগছে ওই ফৌজ। যদিও আসল সমস্যা হিসাবে একে চিহ্নিত করা হয়নি। বিশ্লেষকদের দাবি, সম্পদ বণ্টনের অদক্ষতা, যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এবং কৌশলগত পরিকল্পনা না থাকায় ছন্নছাড়া দশায় রয়েছে কানাডার বাহিনী।

Advertisement
০৩ ১৮

চলতি বছরের মার্চে একটি অনুষ্ঠানে সিএএফের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ‘সর্পিল মৃত্যু’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৬ হাজারের বেশি কর্মীর অভাবে ভুগছে অটোয়ার ফৌজ। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেটোভুক্ত দেশগুলি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস বা জিডিপি) অন্তত দু’শতাংশ সেনাবাহিনীর জন্য খরচ করার আহ্বান জানিয়েছে।

০৪ ১৮

নেটোর এই লক্ষ্যমাত্রা আদৌ পূরণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান কানাডার সরকার। তবে গত আট বছর ধরে লাগাতার প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে চলেছে অটোয়া। ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। উল্লেখ্য, হাতিয়ার কেনার তুলনায় দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেশি। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারের এই নীতির জন্যেই দুর্বল হচ্ছে কানাডার বাহিনী।

০৫ ১৮

উদাহরণ হিসাবে ফ্রিগেট শ্রেণির রণতরী, ডুবোজাহাজ এবং কৌশলগত যানবাহনের কথা বলা যেতে পারে। অটোয়ার ফৌজে এগুলির মারাত্মক অভাব রয়েছে। গত ২০ বছরে ১০০টি কামানও বাহিনীতে শামিল হয়নি। সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে অদক্ষতা এবং পদ্ধতিগত সমস্যার শিকড় কতটা গভীর, এই তথ্যেই মিলবে তার প্রমাণ। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে কানাডার কয়েক দশক সময় লাগবে বলে মনে করেন বিশ্বের তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

০৬ ১৮

রেডিয়ো কানাডায় সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, ‘‘কাল সকালে যদি নেটোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে প্রতিরক্ষা খাতে সরকার ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার বরাদ্দ করে, তা হলেও সমস্যা যেমনকার তেমনই থাকবে। কারণ মন্ত্রক তো জানেই না ওই অর্থ কোন কোন জায়গায় খরচ করতে হবে। এ ব্যাপারে ফৌজি জেনারেলদের জ্ঞানও খুব সীমিত।’’

০৭ ১৮

এ ব্যাপারে সরকারি তথ্য প্রকাশ্যে এনে উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করেছে রেডিয়ো কানাডা। তাদের দাবি, ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ হওয়া ৫০ লক্ষ ডলার খরচ করতে ব্যর্থ হয় অটোয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে এই অব্যবহৃত তহবিলের অঙ্ক বাড়তে বাড়তে ২৫০ কোটিতে পৌঁছে যায়, যা মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৯.৪ শতাংশ।

০৮ ১৮

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনের সময় হাতিয়ার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থের এক চতুর্থাংশ খরচ করতে ব্যর্থ হয় কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। অবস্থার বদল আনতে ২০১৭ সালে নতুন প্রতিরক্ষা নীতি ঘোষণা করে অটোয়ার সরকার। এর শিরোনাম ছিল, ‘শক্তিশালী ও সুরক্ষিত কানাডা’। তবে তাতে যে বিশেষ লাভ হয়েছিল, এমনটা নয়।

০৯ ১৮

নতুন প্রতিরক্ষা নীতিতে পরবর্তী ২০ বছরে ফৌজি খাতে অতিরিক্ত ৫৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার খরচের প্রতিশ্রুতি দেয় কানাডার সরকার। মূলত নেটোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রতিরক্ষা ব্যয়ের নিরিখে একে সমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা জল হিসাবে গণ্য করেছেন সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রতিরক্ষার প্রকল্পগুলির জন্য সঠিক সময়ে অর্থের ঠিকমতো জোগান মেলে না। ফলে সময়ে কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে সেগুলি ব্যর্থ হয়েছে।’’

১০ ১৮

২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কানাডায় সরকারি কর্মীর সংখ্যা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এর সূচক মাত্র ০.২ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এই সময়সীমার মধ্যে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক এবং বেশ কয়েকটি রণতরী বাহিনীতে শামিল করেছে অটোয়া। বিরোধী দলগুলির আবার অভিযোগ, ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রতিরক্ষা খাতে খরচ প্রায় করতেন না বললেই চলে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপুল ব্যয়ের ঢালাও অনুমতি দেন তিনি।

১১ ১৮

গত আর্থিক বছর (পড়ুন ২০২৪-’২৫) থেকে বাহিনীতে কর্মীসঙ্কট ঘোচানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে হাতিয়ার বা অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে অটোয়ার গদাইলশকরি চালে কোনও বদল আসেনি। এর জন্য আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতাকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

১২ ১৮

২০১১ সালে ডেস্ট্রয়ার এবং ফ্রিগেট মিলিয়ে মোট ১৫টি রণতরী বদলের ঘোষণা করে তৎকালীন হার্পার সরকার। কিন্তু ১৩ বছর পরও সেগুলি হাতে পায়নি রয়্যাল কানাডা নৌবাহিনী। যুদ্ধজাহাজগুলির দাম প্রাথমিক ভাবে ২,৬০০ কোটি ডলার ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু, সেটা বেড়ে ছ’হাজার কোটিতে পৌঁছে যায়। এখন রণতরী বাহিনীতে শামিল করতে অটোয়াকে খরচ করতে হবে আট হাজার কোটির বেশি ডলার।

১৩ ১৮

গত তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উপর কড়া নজর রেখেছে কানাডা-সহ গোটা বিশ্ব। এই সংঘর্ষ থেকে একটি বিষয় উপলব্ধি করা গিয়েছে। লম্বা সময় ধরে লড়াই চালাতে গেলে হাতিয়ারের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সেই সক্ষমতা যার আছে, ভাগ্যদেবী তার প্রতি যে সহায় হবেন, তা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার।

১৪ ১৮

ইউক্রেন যুদ্ধে ‘সুপার পাওয়ার’ রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি দেখে চোখ কপালে তুলেছেন কানাডার ফৌজি জেনারেলরা। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, গত তিন বছরে হাজার দশেক সামরিক সরঞ্জাম হারিয়েছে মস্কো। এর মধ্যে রয়েছে ২,৪০০ ট্রাক, ২,২০০ সাঁজোয়া গাড়ি এবং ১,৯০০ ট্যাঙ্ক। গত বছরের অক্টোবরে বিভিন্ন রণাঙ্গনে ক্রেমলিনের ১০৩টি ট্যাঙ্ক এবং ৪১টি সাঁজোয়া গাড়ি ক্ষেপণাস্ত্র বা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ওড়াতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনের সেনা।

১৫ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করেন, কিভের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এর কয়েক গুণ। রুশ প্রত্যাঘাত সামলাতে গিয়ে পাঁচ লক্ষের বেশি সৈনিক হারিয়েছে পূর্ব ইউরোপের ওই দেশ। আহতের সংখ্যা আরও পাঁচ লক্ষ। এই পরিসংখ্যান কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বুকে কাঁপুনি ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে।

১৬ ১৮

বিষয়টি নিয়ে রেডিয়ো কানাডায় মুখ খোলেন অটোয়ার কার্লেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক স্টিভ সাইডম্যান। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের হয়তো ভবিষ্যতে রাশিয়া এবং চিনের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে যেতে হবে। তখন একসঙ্গে অনেকগুলি রণতরী ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ নামানোর প্রয়োজন হবে। সেটা করার মতো সক্ষমতা এখনও আমাদের তৈরি হয়নি।’’

১৭ ১৮

এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাবকে ‘গোদের উপর বিষফোড়া’ হিসাবে দেখছেন অধ্যাপক সাইডম্যান। আর তাই ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক মেরামতির উপর জোর দিয়েছেন তিনি। তবে সেটা নির্ভর করবে কানাডার রাজনৈতিক দলগুলির ইচ্ছাশক্তির উপর।

১৮ ১৮

কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কর্নি অবশ্য একেবারেই হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। বাহিনীর ফাঁকফোকর দ্রুত মেরামতির জন্য বিশেষ একটি কমিটি তৈরি করেছেন তিনি। পাশাপাশি, আটলান্টিকের ওপারে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন তিনি। অটোয়ার ফৌজকে অত্যাধুনিক ইউরোপীয় অস্ত্রে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement