বহু জাতি, বহু ভাষার দেশ ভারত। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০০ স্বতন্ত্র ভাষায় কথা বলে থাকেন এই দেশের মানুষ।
বহু ভাষার দেশে সরকারি কাজের সুবিধার জন্য যে দু’টি ভাষাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল হিন্দি এবং ইংরেজি। এগুলি ভারতের সরকারি ভাষা।
ভারতের বাইরেও কোথাও কোথাও হিন্দি শোনা যায়। যেখানে প্রবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা বেশি, সেখানে হিন্দিতে কথাবার্তার চল রয়েছে। অর্থাৎ, বিদেশবিভুঁইয়ে হিন্দি একেবারে ব্রাত্য নয়।
কিন্তু হিন্দিই সরকারি ভাষা, অধিকাংশ মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলেন— ভারতের বাইরে এমন দেশের খোঁজ রাখেন ক’জন? অনেকেই হয়তো সেই দেশের কথা জানেন না।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের উপর ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র ফিজ়ি। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দেশ এশিয়া বা আমেরিকা নয়, ওশিয়ানিয়া মহাদেশের অন্তর্গত। দেশটিতে ভারতের ‘ছোঁয়া’ রয়েছে।
ফিজ়িতে সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে হিন্দি। বর্তমানে এই দেশে তিনটি সরকারি ভাষা রয়েছে। ইংরেজি, ফিজ়িয়ান এবং ফিজ়ি হিন্দি।
২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ফিজ়ি দ্বীপের মোট জনসংখ্যা মেরেকেটে ৯ লক্ষ ২৫ হাজার। তার মধ্যে ৩৮ শতাংশই হিন্দিভাষী। দেশের অধিকাংশ মানুষ হিন্দিতে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ।
ফিজ়িতে প্রচুর সংখ্যক মানুষ স্থায়ী ভাবে বাস করেন যাঁরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এঁরা কেউ কিন্তু প্রবাসী ভারতীয় নন। ফিজ়ির স্থায়ী নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁদের।
১৯৫৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূতেরাই ফিজ়িতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের সংখ্যা কিছুটা কমে। তবে বর্তমানেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপটি ‘ভারতময়’।
ফিজ়িতে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বেশির ভাগই আওয়াধি এবং ভোজপুরি সংস্কৃতির বাহক। উত্তর ভারতের হিন্দি বলয় থেকে ফিজ়িতে চলে গিয়েছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষেরা।
অতীতে মূলত কাজের সন্ধানেই ফিজ়ি দ্বীপে ভিড় করতেন ভারতীয়েরা। লখনউ, কানপুর, ফৈজাবাদ, গোরক্ষপুর, গাজিপুর, বালিয়া, সুলতানপুর, শাহবাদ, সিওয়ান থেকে দলে দলে শ্রমিক পাড়ি দিতেন ফিজ়িতে।
তাঁদের বংশধরেরাই এখন ফিজ়ির জনসংখ্যার একটা বড় অংশ। দক্ষিণ ভারতের তেলুগু এবং তামিলভাষী কিছু মানুষও ফিজ়িতে আছেন। এ ছাড়া আছেন আফগানিস্তান, নেপালের আদি বাসিন্দারা।
১৮৭৯ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে এক দল মানুষ আখের বাগানে কাজ করতে ফিজ়িতে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরাই দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। অনেকে আর ভারতে ফেরেননি।
ফিজ়ির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ভারতীয়েরা সক্রিয়। দ্বীপটির প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর নাম মহেন্দ্র চৌধরি। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন তিনি।
ফিজ়ি ছাড়াও ভারতের বাইরে বেশ কয়েকটি দেশে হিন্দি ভাষার প্রচলন আছে। নেপাল, ব্রিটেন, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো, মরিশাস, সুরিনাম, আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক বাসিন্দা হিন্দিতে কথা বলেন।