USA Vs Dubai Tech war

ভোল বদলে যাচ্ছে তেলের শহরের, বালির শহরে উঠছে প্রযুক্তির ঝড়! সিলিকন ভ্যালির এশীয় সংস্করণে পরিণত হচ্ছে দুবাই?

পশ্চিম এশিয়ার একটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে চলেছে সিলিকন ভ্যালির এশীয় সংস্করণ। স্টার্টআপ সংস্থাগুলি আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি থেকে মুখ ফিরিয়ে ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী প্রসারের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শহর দুবাইকে বেছে নিতে আগ্রহী হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ১০:১৬
Share:
০১ ১৭

বিশ্ব জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ছাঁটাই অব্যাহত। সিলিকন ভ্যালির তাবড় তাবড় টেক জায়ান্ট সংস্থার ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের ফলে চাকরি হারিয়েছেন হাজার হাজার কর্মী। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০২২-এ তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বে আড়াই লক্ষেরও বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। কোভিড পরবর্তী পর্বে গুগ্‌ল, মাইক্রোসফ্‌ট, অ্যামাজ়ন, এক্স, ফেসবুকের মতো একাধিক আমেরিকার সংস্থা কর্মীছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

০২ ১৭

২০২৫ সালের মধ্যে ইন্টেল, আইবিএম, গুগ্‌ল, ইনফোসিসের মতো টেক জায়ান্ট সংস্থাগুলি সর্বসাকুল্যে ১ লাখের বেশি কর্মীসঙ্কোচনের পথে হাঁটতে চলেছে বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমন রবও উঠছে যে, চাকরির বাজারে কর্মীছাঁটাইয়ের নেপথ্যে হাত রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।

Advertisement
০৩ ১৭

সিলিকন ভ্যালি থেকে যে বিপুল পরিমাণ কর্মীছাঁটাইয়ের নজির বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে তার অধিকাংশ কর্মী নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এঁদের মধ্যে অনেকেই আমেরিকা বা ইউরোপে চাকরি খোঁজার বদলে পশ্চিম এশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে চাকরির সন্ধান করতে শুরু করেছেন। আবার অনেকে চাকরির বদলে নিজের স্টার্টআপ সংস্থা খোলার তোড়জোড় করছেন।

০৪ ১৭

বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল দক্ষতার চাহিদা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রোগ্রামিং, এআই এবং ব্লকচেনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিপুল কর্মীঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতির কারণে দক্ষ প্রযুক্তি কর্মী, উদ্যোক্তারা তাঁদের কার্যক্রম কোথায় পরিচালনা করবেন সে সম্পর্কে দোলাচল তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বে। স্টার্টআপ সংস্থাগুলি ব্যবসাবৃদ্ধির জন্য নতুন এক ঠিকানা খুঁজে নিতে চাইছে।

০৫ ১৭

পশ্চিম এশিয়ার একটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে চলেছে সিলিকন ভ্যালির এশীয় সংস্করণ। স্টার্টআপ সংস্থাগুলি সিলিকন ভ্যালি থেকে মুখ ফিরিয়ে ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী প্রসারের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শহর দুবাইকে বেছে নিতে আগ্রহী হয়েছে।

০৬ ১৭

প্রযুক্তিক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সিলিকন ভ্যালির টেক জায়ান্ট থেকে শুরু করে ছোট ছোট স্টার্টআপগুলিও এশিয়ার এই উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিতে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হতে শুরু করেছে বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার এই দৌড়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং বিশেষ করে দুবাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। প্রযুক্তিনির্ভর আন্তর্জাতিক হাব হিসাবে গড়ে উঠেছে শহরটি।

০৭ ১৭

অত্যাধুনিক পরিকাঠামো, দুবাইকে ‘স্মার্ট সিটি’র রূপদান এবং ডিজিটাল ব্যবস্থায় ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে শহরটি বিশ্ব জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির পেশাদারদের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং ফিনটেকের মতো ক্ষেত্রগুলির পরিসর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ বাহ্যিক এবং মানবসম্পদ পরিকাঠামোকে বৈশ্বিক মানদণ্ডের নিরিখে গড়ে তুলে এশিয়ার মধ্যে নজির তৈরি করেছে দুবাই।

০৮ ১৭

এশিয়ার তো বটেই, ইউরোপ, আমেরিকার বহু বড় বড় বাণিজ্যিক সংস্থা তাদের ব্যবসায়িক কেন্দ্র স্থাপন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এদের মধ্যে আমাজ়ন, অ্যাপ্‌ল, সিসকো, গুগ্‌ল, মেটা এবং মাইক্রোসফ্‌টের মতো প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিও রয়েছে।

০৯ ১৭

বি‌শ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় নামতে হলে এবং সমস্ত প্রতিযোগীদের থেকে নিজের দিকে নজর কাড়তে হলে ব্যতিক্রমী আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিতে হয়। বছরের পর বছর ধরে দুবাই টানা বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ ও পরিষেবা দিতে সক্ষম হয়েছে। তারা তাদের অর্থনীতিকে তেল নির্ভরতা থেকে দূরে সরিয়ে উন্নত প্রযুক্তির, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে বি‌শেষ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে।

১০ ১৭

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে কোনও দেশ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে তার প্রথম শর্ত হল বিনিয়োগ বা পুঁজি। সেই বাণিজ্যিক প্রসারকে ত্বরান্বিত করতে আবু ধাবিতে এসজিএক্স নামের একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে সংস্থাটির বিনিয়োগ তহবিল ১০ হাজার কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কৃত্রিম মেধার পরিকাঠামো, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এবং এআইয়ের মূল প্রযুক্তি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রের সেরা সংস্থাকে বেছে নিয়ে তাদের অংশীদার করে বিনিয়োগ করবে সরকারপোষিত এই সংস্থাটি।

১১ ১৭

দ্বিতীয় পদক্ষেপটি হল বহুচর্চিত দুবাইয়ের ‘গোল্ডেন ভিসা’। মূলত বিদেশি পুঁজি এবং রিয়্যাল এস্টেটে বিনিয়োগ টানার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসার প্রচলন হয়েছিল ২০১৯ সালে। বিদেশি নাগরিকদের জন্য ১০ বছর মেয়াদের ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত ১০ বছর মেয়াদের যে ভিসা আবু ধাবি দিয়ে থাকে সেটিই গোল্ডেন ভিসা।

১২ ১৭

সেই ভিসার সুবিধা বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি এবং উন্নত ডিজিটাল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানার জন্যে ব্যবহার করতে চাইছে সে দেশের সরকার। বাণিজ্য পর্যবেক্ষকদের মতে, গোল্ডেন ভিসা প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারে এমন ব্যক্তি বা সংস্থার হাতে তুলে দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করার দিকেই বেশি আগ্রহী আবু ধাবি।

১৩ ১৭

২০২৩ সালের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র রাজধানী শহরেই ১ লক্ষ ৫৮ হাজার গোল্ডেন ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছে। গোটা দেশ জুড়ে সেই সংখ্যা ছিল কয়েক গুণ বেশি। পরবর্তী দুই বছরে গোল্ডেন ভিসা প্রাপকদের ক্ষেত্রগুলিতে পরিবর্তন এসেছে। গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ছিলেন বিনিয়োগকারী। ব্যাঙ্কিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিংয়ের সঙ্গে যুক্ত পেশাদারেরা ২২ শতাংশ গোল্ডেন ভিসা পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ১৭

এই সমস্ত ক্ষেত্র থেকে আবেদনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিসাপ্রার্থীদের অনেকেই বৃহৎ আকারের নানা প্রকল্পের পরিচালক অথবা নিজেরাই বিনিয়োগকারী, মূলধন এবং দক্ষতা উভয় নিয়েই দুবাইয়ে থিতু হতে চাই

১৫ ১৭

পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দুবাইকে বিশ্বের নিরাপদ এবং অত্যাধুনিক শহর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘দুবাই অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা’ চালু হয় ২০২৩ সালে। দুবাই চেম্বার প্রেসিডেন্ট এবং সিইও মহম্মদ আলি রাশেদ লুটাহ ২০২৫ সালের এপ্রিলে জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র ভারতীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।

১৬ ১৭

লুটাহ জানান, শুধুমাত্র ফিনটেক ক্ষেত্র থেকে ৬৫-৭০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছেন তাঁরা। প্রায় ৭৩ হাজার ভারতীয় সংস্থা দুবাইয়ে তাদের ব্যবসায়িক ভিত্তি স্থাপন করেছে। গত দশকের তুলনায় বাণিজ্যিক অগ্রগতি ১৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগের বেশির ভাগটাই এসেছে খাদ্য প্রযুক্তি, লজিস্টিক প্রযুক্তি এবং কৃষি প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলি থেকে।

১৭ ১৭

২০২৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সমীক্ষা প্রতিবেদন ‘ফিউচার টেক ট্যালেন্ট’-এ উল্লেখ করা হয়েছিল, ৮০ শতাংশ নিয়োগকর্তা দুবাইকে বেছে নিয়েছেন। ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে প্রযুক্তিকেন্দ্রগুলির তুলনায় দুবাইয়ের বেতন প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। আর্থিক সুবিধা, করছাড় ও বিনিয়োগ সহায়তার মতো সুযোগের বাইরেও জীবনযাত্রার মানের আকর্ষণও পেশাদারদের দুবাইকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement