কোন কোন রাজ্য থেকে কী কী উপহার এল রামজন্মভূমিতে? উপহার সামলাতে হিমশিম মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই মিলেছে তার হিসাব। বিশেষ বিশেষ উপহারের কথা জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও।
উত্তরপ্রদেশেরই বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে নানা রকমের উপহার। এর মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি মথুরা থেকে এসেছে ২০০ কেজি লাড্ডু। ফিরোজাবাদ থেকে এসেছে ১০ হাজার চুড়ি। সেই চুড়িতে রাম-সীতা এবং হনুমানের ছবি খোদাই করা।
উত্তরপ্রদেশের আগ্রার পেঠা বা মিঠাই বিখ্যাত। আগ্রা থেকে ৫৬ রকমের বিশেষ মিঠাই এসেছে অযোধ্যায়। সঙ্গে এসেছে রত্নখচিত রামের পোশাক, রুপোর রেকাবি এবং আগ্রার বিশেষ সুগন্ধী আতর শামামা। যা গায়ে দিলে নাকি শীত কাছে ঘেঁষতেই পারে না।
উত্তরপ্রদেশের এটার বাসিন্দারা পাঠিয়েছেন ২৪০০ কেজি ওজনের একটি ঘণ্টা। যা তৈরি করা হয়েছে অষ্টধাতু দিয়ে।
আলিগড়ের এক তালাশিল্পী বিশ্বের সবচেয়ে বড় তালা চাবি তৈরি করেছেন রাম মন্দিরের জন্য। ৪০০ কেজি ওজনের ওই তালা উচ্চতায় প্রায় দু’মানুষ সমান— ১০ ফুট। প্রস্থে ৪.৬ ফুট। বেধ সাড়ে ৯ ইঞ্চি। সত্য প্রকাশ শর্মা নামে ওই তালার কারিগর জানিয়েছেন, এই তালা তিনি মন্দির ট্রাস্টকে দিয়েছেন প্রতীকী ভাবে রামমন্দিরে ব্যবহার করার জন্য।
লখনউয়ের এক সব্জি বিক্রেতাও রামলালার জন্য নিজের হাতে তৈরি করেছেন বিশেষ উপহার। অযোধ্যার রামমন্দিরকে তিনি দিয়েছেন একটি ঘড়ি। ৭৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের ওই ঘড়িতে এক সঙ্গে ৮টি দেশের সময় দেখা যায়। ভারত, জাপান, রাশিয়া, সংযুক্ত আমিরশাহ, চিন, সিঙ্গাপুর, মেক্সিকো, আমেরিকার ওয়াশিংটন এবং নিউ ইয়র্ক।
এ তো গেল উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা বিভিন্ন উপহারের কথা। সোমবার শিশু রামের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর রাজ্য থেকেও এসেছে নানারকম উপহার। এর মধ্যে আবার একটি উপহার ইতিমধ্যে ব্যবহার করাও হয়ে গিয়েছে।
গুজরাতের বরোদা থেকে রামভূমিতে পৌঁছেছে ১০৮ ফুট দীর্ঘ ধূপকাঠি। প্রস্থে সাড়ে তিন ফুট চওড়া এই ধূপকাঠির ওজন ৩৬১০ কেজি। সোজাসুজি দাঁড় করানো হলে কুতুব মিনারের অর্ধেক ছাড়িয়ে যাবে এই ধূপকাঠি। যা তৈরি করতে সময় লেগেছে ছ’মাস। ৩৭৬ কেজি গুগগুল বা গন্ধরসের উপাদান, সম পরিমাণে নারকেলের খোলা, ১৯০ কেজি ঘি, ৪২০ কেজি সুগন্ধি গাছ-গাছড়া এবং ১৪৭০ কেজি ঘুঁটে। উল্লেখ্য, শনিবারই ওই ধূপকাঠি জ্বালানো হয় অযোধ্যায়। তবে এই ধূপকাঠি একবার জ্বালালে টানা দেড় মাস জ্বলবে।
এ ছাড়া গুজরাত থেকে এসেছে একটি নাগাড়ু। মন্দিরে বিশেষ অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য বড় ঢাকের মতো দেখতে বাজনা। ৫৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট সোনার তবকে মোড়া ওই নাগাড়ু রাখা হয়েছে মন্দিরের সামনের উঠোনে।
এ ছাড়া সুরতের এক গহনা শিল্পী ৫০০০ আমেরিকান ডায়মন্ড এবং দু’কেজি রুপো দিয়ে তৈরি করেছেন একটি হার। অবিকল রামমন্দিরের আদলের লকেট বানানো হয়েছে সেই হারের। হারের মালার অংশে খোদাই করা হয়েছে রামায়ণের চরিত্র।
সুরাতের টেক্সটাইল হাব থেকে বিশেষ শাড়ি বানানো হয়েছে রামমন্দিরের জন্য। রামের ছবি দেওয়া ওই বিশেষ শাড়িটি অবশ্য তৈরি করা হয়েছে সীতার জন্য।
বরোদা থেকে এসেছে ১১০০ কেজি ওজনের প্রদীপ। বরোদার এক কৃষক পঞ্চ ধাতু অর্থাৎ সোনা, রুপো, তামা, লোহা এবং দস্তা দিয়ে তৈরি ওই প্রদীপে ৮৫১ কেজি ঘি ধরবে। প্রদীপ জ্বলবে দীর্ঘ ক্ষণ।
মধ্যপ্রদেশ থেকে গিয়েছে ১০ হাজার বোগেনভেলিয়া ফুল। যা দিয়ে সোমবার সেজে উঠবে রাম মন্দির চত্বর। এ ছাড়া পাঁচ লক্ষ লাড্ডু এবং চার কোটি ৩১ লক্ষ বার রাম নাম লেখা একটি কাগজও পাঠানো হবে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া থেকে।
রামের ‘মামারবাড়ি’ ছত্তীসগঢ় থেকে আগের মাসেই অযোধ্যায় পৌঁছেছিল ৩০০ টন সুগন্ধি চাল। এর পাশাপাশি দু’টি ট্রাকে বোঝাই করে সব্জিও পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়।
মহারাষ্ট্রের নাগপুরের শেফ বিষ্ণু মনোহর ঘোষণা করেছেন, তিনি সাত হাজার কেজি রাম হালুয়া রান্না করে দেবেন রামমন্দিরের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠানের অতিথিদের জন্য।
তেলঙ্গানা থেকে এসেছে রামের সোনার পাদুকা। ৬৪ বছরের বৃদ্ধ ছল্লা শ্রীনিবাস শাস্ত্রী তাঁর করসেবক বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য ওই সোনার পাতে মোড়া পাদুকা নিয়ে ৮০০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছেছেন রামভূমিতে। নিজের হাতে উপহার রামমন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবেন বলে।
হায়দরাবাদ থেকে ১২৬৫ কেজি ওজনের লাড্ডু পাঠানো হয়েছে রামের জন্য। ২৫ জন কারিগর দেশি ঘি দিয়ে এই লাড্ডু তৈরি করেছেন তিন দিন ধরে।
কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দির থেকে রামের জন্য এসেছে বিশেষ ধনুক। যার নাম ওনাভিল্লু।
তামিলনাড়ু থেকে রামমন্দিরের জন্য এসেছে খাঁটি রেশমের বিছানার চাদর। এ ছাড়া কলার খোসার আঁশ থেকে তৈরি ২০ ফুট দীর্ঘ এবং চার ফুট বহরের শাড়িও পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়।
বিহার থেকে রামের জন্য এসেছে পাগড়ি, পান এবং মাখনা।
রাজস্থান থেকে রামের জন্য এসেছে কম্বল। এছাড়াও ভক্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য আরও ৭০০০ কম্বল পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়। দেড় লক্ষ লাড্ডুর বাক্স পাঠানো হয়েছে প্রসাদ হিসাবে বিতরণের জন্য। যোধপুর থেকে পাঠানো হয়েছে ৬০০ কেজি দেশি ঘি।
কাশ্মীর থেকে এসেছে ২ কেজি কেশর। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি আলোক কুমার বলেন, ‘‘কাশ্মীরের মুসলিম ভাই বোনেরা এই কেশর উপহার হিসাবে দিয়েছেন। ওঁরা বলেছেন, যদিও আমরা ভিন্ন ধর্মের মানুষ, তবু আমাদের পূর্বপুরুষেরা আসলে এক। আর পূর্বপুরুষ রামকে তাঁদের পছন্দ। তাই তাঁর জন্য এই উপহার এনেছেন তাঁরা।’’
এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও এসেছে নানা উপহার। শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতিনিধিরা এসে দিয়ে গিয়েছেন অশোক বটিকার বিশেষ পাথর। যে অশোক বনে রামের পত্নী সীতাকে রাবণ বন্দি করে রেখেছিলেন বলে লেখা আছে রামায়ণে।
নেপালের জনকপুরের কন্যা বলে সীতার নাম জানকী। সেই নেপাল থেকে রামমন্দিরের জন্য এসেছে অন্তত ৩০০০ উপহার। এর মধ্যে রূপোর জুতো, গহনা, মূল্যবান কাপড়ে তৈরি বস্ত্রও রয়েছে। ৩০টি গাড়িতে এই সমস্ত উপহার জনকপুরের রামজানকী মন্দির থেকে এসে পৌঁছেছে অযোধ্যার রামমন্দিরে।
সুদূর আফগানিস্তান থেকেও উপহার পাঠানো হয়েছে রামমন্দিরের জন্য। কাবুল নদীর জল রামমন্দিরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি।