Israel-Hamas War

শহরের নীচে মায়াজালের গোলকধাঁধা, গাজ়ার নীচে সুড়ঙ্গের আস্ত শহর বানিয়ে ফেলেছে হামাস!

সুড়ঙ্গগুলিতে ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সেন্টার রয়েছে। বেশির ভাগ সুড়ঙ্গ ১ মিটার চওড়া এবং আড়াই মিটার উঁচু।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:১১
Share:
০১ ১৫

৪০ কিলোমিটার লম্বা এবং ১০ কিলোমিটার চওড়া গাজ়া ভূখণ্ডে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বাস। ছিমছাম, গোছানো শহর। বিশাল বিশাল বাড়ি, বহুতল, স্কুল, হাসপাতাল থেকে শুরু করে এক শহরে যা যা থাকা দরকার সবই রয়েছে এখানে। অনেকটা আর পাঁচটা শহরের মতোই। তবে এটি শুধুমাত্র শহরের একটি বহিরঙ্গ। এই শহরের নীচেই রয়েছে সন্ত্রাসের এক অন্য জগৎ। সেই জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র বাহিনী হামাস।

০২ ১৫

২০২১ সালে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করেছিল, হামাসের তৈরি ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি সুড়ঙ্গপথ ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। কিন্তু হামাস নেতা ইয়াহা সিনবার পরবর্তী কালে দাবি করেন, গাজ়ায় ৫০০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গপথ রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সুড়ঙ্গগুলি কোনওটি কোনও বহুতল থেকে, কোনওটি আবার কোনও স্কুল এবং মসজিদ থেকে খোঁড়া হয়েছে। শহরের কোথা থেকে এই সুড়ঙ্গের শুরু এবং কোথায় শেষ, তা একমাত্র হামাসই জানে।

Advertisement
০৩ ১৫

মনে করা হচ্ছে, গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল হামাস, এই ধরনের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেই ঢুকেছিল তারা। বেশ কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এমন বেশ কিছু সুড়ঙ্গ আছে যেগুলি ইজ়রায়েলের কিবুৎজ় শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্য দিকে, গাজ়া সীমান্তলাগোয়া মিশরেও এই সুড়ঙ্গের জাল বিছিয়েছে হামাস। বহির্জগতের কাছে এই সুড়ঙ্গ একটি রহস্য হয়েই রয়েছে।

০৪ ১৫

সাল ২০০১। গাজ়া শহরের নীচে সুড়ঙ্গের এই জাল বোনা শুরু হয়েছিল ওই সময় থেকে। ওই বছরে গাজ়া কব্জা করে নেয় ইজ়রায়েল। গাজ়া থেকে তাদের তাড়ানোর জন্য পুরো শক্তি লাগিয়েছিল প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি সংগঠন। কিন্তু ইজ়রায়েলের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের কাছে টিকতে পারছিল না তারা। তখন ওই জঙ্গি সংগঠন অন্য কৌশল নেওয়া শুরু করল। চোরাগোপ্তা ভাবে হামলার কৌশল, যা কারও পক্ষে টের পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য।

০৫ ১৫

ইজ়রায়েল সেনার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে এবং একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করতে গাজ়ার নীচে সুড়ঙ্গ তৈরি করা শুরু করে জঙ্গিরা। সেই সুড়ঙ্গে বিস্ফোরক ভর্তি করে দিত তারা। আর এ ভাবেই ইজ়রায়েল সেনাদের ফাঁদে ফেলার নয়া কৌশল নিতে শুরু করে জঙ্গিরা।

০৬ ১৫

২০০৩ সালে গাজ়া থেকে মিশরের দিকেও বেশ কিছু সুড়ঙ্গ বানায় জঙ্গিরা। প্রয়োজনীয় সামগ্রী, মাদক এবং অস্ত্র পাচারের কাজে ব্যবহার করা শুরু হয় সেই সুড়ঙ্গগুলি। ২০০৪ সালে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন গাজ়া খালি করার কথা বলেন। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো গাজ়া খালি করে দেয় ইজ়রায়েলি সেনা।

০৭ ১৫

গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলি সেনা চলে যেতেই ফতেহ এবং হামাস— দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২০০৭ সালে ফতেহকে সরিয়ে গাজ়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় হামাস। আর তার পর থেকেই গাজ়ায় দ্রুত গতিতে সুড়ঙ্গের জাল বিস্তার হতে থাকে।

০৮ ১৫

রিচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফনে রিচমন্ড বরাক বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “হামাসের বানানো সুড়ঙ্গে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে। হামলা থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওই সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেয় তারা। সুড়ঙ্গগুলিতে ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সেন্টার রয়েছে। বেশির ভাগ সুড়ঙ্গ ১ মিটার চওড়া এবং আড়াই মিটার উঁচু।’’

০৯ ১৫

২০০৬ সালের একটি ঘটনা ইজ়রায়েলকেও চমকে দিয়েছিল। হামাস জঙ্গিরা গাজ়া-ইজ়রায়েল সীমান্তে সুড়ঙ্গ বানিয়ে ফেলে। আর সেই সুড়ঙ্গ ইজ়রায়েলের সেনাচৌকি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আর ওই সুড়ঙ্গপথেই ইজ়রায়েলের দুই সেনার উপর হামলা চালিয়ে আবার গাজ়ায় ফিরে আসে জঙ্গিরা। এক সেনাকে আবার অপহরণ করেও নিয়ে গিয়েছিল তারা। বেশ কিছু রিপোর্টের দাবি, ২০১১ সালে গাজ়া এবং প্যালেস্তাইনের এক হাজার বন্দির বিনিময়ে ওই সেনাকে ছাড়িয়ে আনা হয়।

১০ ১৫

এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০১৩ সালে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দেড় কিলোমিটার লম্বা এবং ১৮ মিটার গভীর এক সুড়ঙ্গের হদিস পায়। যে সুড়ঙ্গের দেওয়াল ছিল কংক্রিটের। সুড়ঙ্গটি গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলের কিবুৎজ় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

১১ ১৫

২০১৪ সালে ‘অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালানোর সময় ইজ়রায়েল প্রায় ৩০টি এমন ‘ক্রস বর্ডার’ সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছিল। পুরো গাজ়া ভূখণ্ডের নীচে ৫০০ কিলোমিটার জুড়ে সুড়ঙ্গের জাল তৈরি করেছে। সব ক’টি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথই গাজ়ায়, আর তার মধ্যে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ ইজ়রায়েল এবং মিশরের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

১২ ১৫

বেশ কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সুড়ঙ্গ বানানোর জন্য এমন জায়গা বেছে নেয় যেখানে ইজ়রায়েলের হামলার আশঙ্কা কম। সেই সব জায়গা চিহ্নিত করাও খুব একটা সহজ নয়। আর এই ধরনের সুড়ঙ্গগুলিকে বাঙ্কার, অস্ত্রাগার এবং কমান্ড সেন্টার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

১৩ ১৫

এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে যে বিপুল মাত্রায় রকেট হামলা চালিয়েছিল হামাস, সেই হামলার জন্য এই ধরনের সুড়ঙ্গকেই ব্যবহার করেছিল। ফলে ইজ়রায়েলের গোয়েন্দারাও তা টের পাননি।

১৪ ১৫

প্রসঙ্গত, গাজ়ায় ছড়িয়ে থাকা সুড়ঙ্গপথগুলিকে ভিয়েতনামের সুড়ঙ্গপথের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েও ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি আমেরিকা। কারণ আমেরিকার সেনা এই সুড়ঙ্গপথ পার করে ঢুকতে পারেনি। হামাসও সে রকমই গোটা গাজ়ায় সুড়ঙ্গের জাল বিছিয়ে রেখেছে। যা ইজ়রায়েলি সেনার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

১৫ ১৫

তবে এই ধরনের সুড়ঙ্গে লড়াই চালানোর জন্য ইজ়রায়েলও তাদের বিশেষ বাহিনীকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিশেষ বাহিনী হল ইয়ালোম কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। এটি ইজ়রায়েলের এলিট কমান্ডো ইউনিট। সুড়ঙ্গ খুঁজে বার করে সেগুলি ধ্বংস করার ক্ষেত্রে পারদর্শী। আর এই ইউনিটে সেনার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে ইজ়রায়েল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement