নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বিলাকত খান (নাম পরিবর্তিত) নামে এক ভারতীয় জীবিকার সন্ধানে চলে যান পশ্চিম এশিয়ায়। ‘টাকার খেলা’য় যোগ দিতে ভারত থেকে তখন অনেকেই দুবাই-কাতার করে বেড়াতেন। উদ্দেশ্য ছিল, অর্থ উপার্জন করে আবার দেশে ফিরে আসা।
পশ্চিম এশিয়া গিয়ে কাজ করে কিছু টাকা হাতে আসতেই সেই টাকা ভারতের এক সংস্থায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন বিলাকত।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। প্রবাসী ভারতীয় হিসাবে ডাবর সংস্থার ১০০টি শেয়ার কিনে নেন তিনি।
বিলাকত যখন শেয়ার কিনেছিলেন, তখন শেয়ার কেনা হত সশরীরে উপস্থিত হয়ে। কাগুজে নথিতে সই করে হাতে আসত শেয়ার। পরে আবার সেই শেয়ার ভাঙিয়ে টাকা পাওয়া যেত।
একই ভাবে বিলাকতকেও ডাবরের শেয়ার কেনার জন্য শংসাপত্র দেওয়া হয়। তিনি সেই কাগজ সযত্নে রেখে দেন নিজের কাছে।
এক দশক ধরে, ডাবরের বোনাস এবং বিভাজন জনিত কৌশলের কারণে ১০০টি শেয়ার ছ’হাজার শেয়ারে পরিণত হয়।
বিলাকতও তত দিনে অবসর গ্রহণ করে ফিরে আসেন ভারতে। তখন তিনি প্রৌঢ়।
ডাবরের নথিতে বিলাকতের ঠিকানা ছিল পশ্চিম এশিয়ার। নিয়মানুযায়ী এর অর্থ, বোনাস শংসাপত্র এবং লভ্যাংশ ওয়ারেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত হওয়া। বিলাকতের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছিল।
বিলাকত ভারতে ফেরার কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্ব জুড়ে আঘাত হানে করোনা অতিমারি। আক্রান্ত হন বিলাকতও।
ভাইরাসজনিত অসুস্থতার কারণে বিলাকত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। প্রাণে বাঁচলেও আংশিক পক্ষাঘাত হয় তাঁর। জীবন কাটছিল বিছানায় শুয়ে। জমানো টাকা প্রায় ফুরিয়ে আসছিল।
এমন সময় নিজের কাছে থাকা ডাবরের শেয়ারগুলির কথা মনে পড়ে বিলাকতের। ঠিক করেন শেয়ারগুলি নিয়ে সংস্থার দ্বারস্থ হবেন তিনি।
বিলাকতের কাছে শেয়ার সংক্রান্ত যে নথি ছিল, তা নিয়ে শেয়ারের টাকা পুনরুদ্ধার করতে পারে এমন একটি সংস্থার দ্বারস্থ হন তিনি। টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে আশার আলোও দেখতে শুরু করেন।
বিলাকত যে সংস্থার কাছে গিয়েছিলেন, সেই সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ডিরেক্টর বিকাশ জৈন সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস নাও’কে বলেন, ‘‘আমরা ওই ব্যক্তির মামলা খতিয়ে দেখে জানতে পারি, তাঁর কাছে ছ’হাজার শেয়ারের মূল শংসাপত্র নেই। তিনি যে হেতু নিয়মিত ভাবে লভ্যাংশ জমা করেননি, তাই শেয়ার এবং লভ্যাংশ ভারত সরকারের অধীনে থাকা বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সুরক্ষা তহবিল কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।’’
এর পর সেই শংসাপত্র পাওয়ার জন্য যে যে নথি প্রয়োজন, সেগুলি জোগাড় করতে থাকে বিকাশের সংস্থা।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিলাকত কাগজে স্বাক্ষর করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফলত, নথিগুলিতে বিলাকতের বুড়ো আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ওই সংস্থা।
বিকাশ জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী, যদি বুড়ো আঙুলের ছাপ থাকে তা হলে তা কোনও ব্যাঙ্ক আধিকারিক বা কোনও গেজেটেড অফিসারের কাছে যাচাই করানো প্রয়োজন৷
পাশাপাশি, বিলাকত যখন শেয়ারগুলি কিনেছিলেন তখন তিনি ছিলেন প্রবাসী। কিন্তু ভারতে আসার পর তিনি কাগজকলমে ঠিকানা পরিবর্তন করেননি। বিকাশের সংস্থা সেই কাগজপত্র তৈরির ব্যবস্থা করে। বিলাকত যে ভারতে ফিরে এসেছেন, তার সরকারি নথি তৈরি হয়ে যায় শীঘ্রই।
সমস্ত নথি তৈরি করে বিলাকতের হয়ে সেই কাগজ নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করে বিকাশের সংস্থা। তবে বিলাকতের বুড়ো আঙুলের ছাপ থাকায় এবং তিনি আগে প্রবাসী ভারতীয় হওয়ায় বিলাকতকে আরও কিছু কাগজ জমা দিতে বলা হয়। কিছু সময়ের মধ্যে সেই নথিও ডাবরকে জমা দেওয়া হয়।
এর পরেই বিলাকতের প্রাপ্য তাঁকে দেওয়ার বিষয়টিতে সিলমোহর দেয় ডাবর। এর পর বিলাকতের নথিগুলি যাচাই করে দেখে বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সুরক্ষা তহবিল কর্তৃপক্ষও। তবে তাঁরা বিলাকতের আঙুলের ছাপের সত্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এর পর বিকাশের সংস্থা বিলাকতের হয়ে এ দরজা ও দরজা ঘুরে আরও কয়েকটি নথি জোগাড় করে। অবশেষে জয় হয় বিলাকতের। শেয়ারের মূল্য এবং বাকি থাকা লভ্যাংশ অনুয়ায়ী ৪০ লাখ টাকা তাঁর ‘ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে’ পাঠানো হয়।