Aditya-L1 Solar Mission

আদিত্য-এল১-এর যাত্রা শুরু, জুড়ে গিয়েছে বঙ্গসন্তানদের নাম, নেপথ্য নায়ক কারা?

সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার চিন্তা ভারতের কাছে প্রথম। সৌরজগতের কেন্দ্রের অতি কাছে থাকা রবির পর্যবেক্ষণের জন্য এই অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৫
Share:
০১ ২৩

চাঁদের মাটিতে পা রাখার পর এ বার সূর্যের দিকে পাখির চোখ ভারতের। তবে রবির অভিযানে পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রায় দেড় দশক আগে থেকেই চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছিল। কেমন ছিল সেই প্রস্তুতি? এই অভিযানের খুঁটিনাটি জানতে এক বার পিছন ফিরে তাকানো যাক।

০২ ২৩

দেশের প্রথম সূর্য অভিযান শুরু হল শনিবার। এ অভিযানে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো বাজি রেখেছে আদিত্য-এল১ মহাকাশযানের উপর। ইসরো-র প্রধান এস সোমনাথ আগেই জানিয়েছিলেন, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে এর উৎক্ষেপণ করা হল শনিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে।

Advertisement
০৩ ২৩

শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাডে আদিত্য-এল১ স্থাপন করে ফেলেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের কাছে সংস্থার চেয়ারম্যান সোমনাথ বলেন, ‘‘উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি হচ্ছি আমরা। রকেট এবং উপগ্রহ প্রস্তুত। চূড়ান্ত মহড়াও সারা হয়ে গিয়েছে।’’

০৪ ২৩

সূর্য অভিযানের কয়েক সপ্তাহ আগেই চন্দ্রাযভিযানে সাফল্যের মুখ দেখেছে ভারত। ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটিতে নেমেছে ইসরো-র চন্দ্রযান-৩। ভারতই প্রথম পা রেখেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম পাখির পালকের মতো অবতরণ করেছে চাঁদে। তা থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের নানা প্রান্তে ঘুরে মোট ১৪ দিন অনুসন্ধান চালাবে সেটি।

০৫ ২৩

তবে সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার চিন্তা ভারতের কাছে প্রথম। সৌরজগতের কেন্দ্রের অতি কাছে থাকা রবির পর্যবেক্ষণের জন্য এই অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে। ২০০৮ সালে প্রথম বার ‘আদিত্য’ (সংস্কৃতে যার অর্থ সূর্য) নামে একটি মহাকাশযানে তৈরির কথা ভেবেছিল ইসরো-র পরামর্শদাতা কমিটি।

০৬ ২৩

গোড়ায় ওই কমিটি মনে করেছিল, সূর্যের বাইরের স্তরের (করোনা) পর্যবেক্ষণে করোনাগ্রাফযুক্ত একটি ছোটখাটো উপগ্রহ কাজে লাগানো হবে। যার ওজন হবে মোটে ৪০০ কেজি।

০৭ ২৩

পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরে এই পরিকল্পনার রূপায়ণে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা আড়েবহরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আদিত্য থেকে মহাকাশযানের নামকরণ হয় আদিত্য-এল১। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুধুমাত্র এর উৎক্ষেপণের ব্যয়ভার নাকি দাঁড়ায় ৩৭৮ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা।

০৮ ২৩

ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য-এল১-কে পৃথিবী থেকে সাড়ে ১০ লক্ষ কিলোমিটার দূরে পাঠানো হবে। এই অংশকে বলা হয় ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট’। যেখানে সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল একই সঙ্গে ক্রিয়াশীল থাকে। ফলে ওই অঞ্চলে স্থির থাকতে পারে কৃত্রিম উপগ্রহ।

০৯ ২৩

ইসরো আরও জানিয়েছে, মহাকাশের পরিবেশ, আবহাওয়া এবং তার উপর সূর্যের কী প্রভাব পড়ে, সে সবই পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করবে আদিত্য-এল১। এর ফলে সূর্য সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১০ ২৩

আদিত্য-এল১ উৎক্ষেপণের জন্য পিএসএলভি-সি৫৭ রকেট ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরো। এই অভিযানের সাতটি বিশেষ পেলোড থাকবে। সূর্যের ফোটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার, করোনার পর্যবেক্ষণে যাকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

১১ ২৩

উৎক্ষেপণের পর সূর্যের অভিমুখে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে ছোট একটি কক্ষপথে পাক খেতে শুরু করবে আদিত্য-এল১। সেখান থেকে সৌরমণ্ডল সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করবে। এর যাত্রাপথ নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর রাখা হবে বিশ্বের পাঁচ প্রান্ত থেকে।

১২ ২৩

শ্রীহরিকোটা এবং আন্দামান ছাড়া ব্রুনেই, ফিজ়ি এবং আমেরিকার লস এঞ্জেলসের মাটিতে বসে সে কাজ করবেন বিশেষজ্ঞরা। এই অভিযানের সঙ্গে এক বঙ্গসন্তানও শিরোনামে চলে এসেছেন। ইসরো-র হয়ে ওই পাঁচটি দলে রয়েছেন নদিয়ার বরুণ বিশ্বাস।

১৩ ২৩

বরুণ জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের সময় থেকে রকেট তথা মহাকাশযান অভিপ্রেত কক্ষপথে যাচ্ছে, না কি সামান্য হলেও বিচ্যুতি হচ্ছে, সে দিকে সারাক্ষণ নজর রাখা হয়। তেমন কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়ে তাকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনা হয়।

১৪ ২৩

বরুণ বলেন, ‘‘আদিত্য-এল১ থেকে সূর্যের সবচেয়ে বাইরের স্তরের আবহাওয়া, উত্তাপের উৎস, প্রকৃতি ও আচরণ এবং সৌরঝড় সম্পর্কিত বহু তথ্য পাওয়া যাবে।’’ তাঁর মতে, এই অভিযান সফল হলে মহাকাশ গবেষণার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে ভারত।

১৫ ২৩

নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে শ্রীহরিকোটায় চলে গিয়েছেন আইসার কলকাতার ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্স, ইন্ডিয়া’-র বিভাগীয় প্রধান দিব্যেন্দু নন্দী। আদিত্যর সাতটি প্রধান যন্ত্রের অন্যতম ‘সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ’ (সংক্ষেপে ‘সুট’) নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সূর্যের থেকে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে ছবি ফুটিয়ে তোলাই তার মূল কাজ। সূর্যের গায়ে ছড়ানো সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ ছাড়াও পৃথিবীর তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলা সৌরঝড়ের মেজাজ-মর্জির হদিসও দেবে এই টেলিস্কোপ।

১৬ ২৩

তৃতীয় চন্দ্রযানের সফল অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বীরভূমের সিউড়ি ১ ব্লকের রায়পুরের বাসিন্দা সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও মল্লারপুরের বিজয় দাই। দু’জনেই যুক্ত আছেন আদিত্যের উৎক্ষেপণের সঙ্গেও। নিউ টাউন আবাসন থেকে ফোনে সৌম্যজিতের বাবা দেবদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোজ বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে ভোরে বেরিয়ে ও ফিরছে সেই রাতে।’’

১৭ ২৩

তৃতীয় চন্দ্রযানের মতো সৌরযানের কাজেও যুক্ত রয়েছেন কোচবিহারের পিনাকীরঞ্জন সরকার। শ্রীহরিকোটা থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের টিমের কাজ সৌরযানকে তার কক্ষপথ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। সফল হব বলেই আমাদের আশা।’’ পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা কৌশিক মণ্ডল এখন রয়েছেন তিরুঅনন্তপুরমে ইসরোর কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘‘যে রকেটে সৌরযান সূর্যের দিকে যাবে, তার পুরো যাত্রাপথ নজরে রাখব আমরা।’’

১৮ ২৩

খড়্গপুর আইআইটি থেকে এম টেক করে ২০১৮ সাল থেকে ইসরোয় রয়েছেন রানিগঞ্জের সানি মিত্র। আদিত্যের ‘বিকাশ’ ইঞ্জিনের দেখভালের দায়িত্বে যে দল রয়েছে, তিনি সেটির সদস্য। উদ্বেগ ধরা পড়ে তাঁর কথায়, “দেড় বছর ধরে কাজ চলছে। অভিযান সফল না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ঘুম হবে না।”

১৯ ২৩

নদিয়ার বরুণের মতোই এ অভিযানের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে পুণের এক দল বিজ্ঞানীর। সে দলে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের সে শহরের ‘ইন্টার-ইউনির্ভাসিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর বিজ্ঞানী দুর্গেশ ত্রিপাঠী এবং এএন রামপ্রকাশ।

২০ ২৩

যে সাতটি পেলোডের প্রসঙ্গ বার বার উঠে এসেছে এই অভিযানে, তার একটি তৈরি করেছেন পুণের ওই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী দুর্গেশ এবং রামপ্রকাশ।

২১ ২৩

প্রায় দশ বছর ধরে সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসএউআইটি) তৈরি করেছেন তাঁরা। যা আদিত্য-এল১-এর অভিযানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

২২ ২৩

রামপ্রকাশরা জানিয়েছেন, সূর্যের বহির্জগতে অতিবেগনি অঞ্চলে চারটি স্তরের মধ্যে ফোটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ারের ছবি তোলার কাজও করবে এসএউআইটি। ফোটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা ৩,৭০০ থেকে ৬,২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। অন্য দিকে, এর উপরের স্তরে অর্থাৎ ক্রোমোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা থাকে ৩,৭০০ থেকে ৭,৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

২৩ ২৩

৫২ বছরের রামপ্রকাশ সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘আমাদের সকলের এখন অত্যন্ত উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে। কত প্রতিভাবান এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা মানুষ এতগুলো বছর ধরে এই অভিযানের জন্য খেটে চলেছেন। তবে একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চিত, এসএউআইটি-র মাধ্যমে যে নতুন দিশা দেখা যাবে, তা অসাধারণ!’’

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement