Chaudhry Aslam Khan

হাতে সব সময় থাকত সিগারেট, ভয়ে কাঁপত গ্যাংস্টাররা! ‘ধুরন্ধর’-এ সঞ্জয় দত্ত কি অভিনয় করছেন সেই পাক পুলিশ চৌধরির চরিত্রে?

‘ধুরন্ধর’ এই বছরের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলির মধ্যে একটি। ছবিটি তৈরি হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। অন্তত তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ছবির ট্রেলারে। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানে গিয়ে ভারতীয় কোনও বীর সেনার বিজয়ের গাথা দেখা যাবে ছবিটিতে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৪১
Share:
০১ ২৩

বলিউডের আসন্ন ছবি ‘ধুরন্ধর’-এর মূল ঝলক প্রকাশ্যে আসতেই তা হইচই ফেলেছে। গোলাগুলি, বিস্ফোরণ, মারপিট, রক্ত, ভয়ঙ্কর সব চরিত্র— আদিত্য ধর পরিচালিত এই ছবির ট্রেলার দেখেই শিউরে উঠছেন দর্শক। ছবিটি নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে।

০২ ২৩

‘ধুরন্ধর’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন রণবীর সিংহ। রণবীর ছাড়াও ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, আর মাধবন, অক্ষয় খন্না এবং অর্জুন রামপাল। তাঁদের প্রত্যেকেরই ‘লুক’ সাড়া ফেলেছে। ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় রয়েছেন সারা অর্জুন।

Advertisement
০৩ ২৩

২৮০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি হয়েছে ‘ধুরন্ধর’। আগামী ৫ ডিসেম্বর এই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা। তার মধ্যেই সূত্র মারফত খবর, ‘ধুরন্ধর’ ছবির এটি প্রথম পর্ব। পরে ছবির সিক্যুয়েলও মুক্তি পাবে।

০৪ ২৩

‘ধুরন্ধর’ এই বছরের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলির মধ্যে একটি। ছবিটি তৈরি হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। অন্তত তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ছবির ট্রেলারে। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানে গিয়ে ভারতীয় কোনও বীর সেনার বিজয়ের গাথা দেখা যাবে ছবিটিতে।

০৫ ২৩

প্রথমে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, রণবীর অভিনীত চরিত্রটি মেজর মোহিত শর্মার জীবনের উপর তৈরি। তবে পরিচালক আদিত্য ধর স্পষ্ট করেছেন, ছবিটি মেজর মোহিতের জীবনের উপর নির্ধারিত নয়। তবে মাধবন, অক্ষয় এবং সঞ্জয়ের সঙ্গে বাস্তবের কিছু চরিত্রের মিল খুঁজে পেয়েছেন সিনেমা নিয়ে চর্চা করা অনুরাগীরা। দর্শকের দাবি, মাধবন অভিনীত অজয় সান্যাল চরিত্রটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

০৬ ২৩

তবে ছবির মূল ঝলকে বিশেষ নজর কেড়েছে সঞ্জয় অভিনীত চরিত্র। ভয় ধরিয়েছে তাঁর বলা ডায়লগ এবং মারপিটের দৃশ্য। সিনেবোদ্ধাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজাখুঁজি চালিয়ে দাবি করছেন, ‘ধুরন্ধর’ ছবিতে সঞ্জয়ের চরিত্র করাচির দুঁদে পুলিশ অফিসার চৌধরি আসলাম খান থেকে অনুপ্রাণিত। অনেকে আবার আসলামের চেহারার সঙ্গে মিলও খুঁজে পেয়েছেন সঞ্জয় অভিনীত চরিত্রের।

০৭ ২৩

ঘটনাচক্রে, ‘ধুরন্ধর’ ছবিতে সঞ্জয়ের চরিত্রের নামও চৌধরি আসলাম এবং সে এক জন পুলিশ। কিন্তু সত্যিই কি ‘ধুরন্ধর’-এ পাক পুলিশকর্তা আসলাম খানের চরিত্রে অভিনয় করছেন সঞ্জয়? অনেকে তেমনটা দাবি করলেও ছবির নির্মাতাদের তরফে সে কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়নি। ছবিমুক্তির পর দর্শকের মনের ধোঁয়াশা কাটবে। তার আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক কে ছিলেন এই আসলাম।

০৮ ২৩

চৌধরি আসলাম খান ওরফে চৌধরি আসলাম খান স্বাতি ছিলেন পাকিস্তানের এক জন নাম করা পুলিশ অফিসার। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুহাজির কওমি মুভমেন্ট, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি), বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), টিএমপি, লশকর-ই-ঝাংভি (এলজে), লশকর-ই-ত্যায়বা (এলইটি) এবং সিপাহ-ই-সাহাবা পাকিস্তান (এসএসপি) সমর্থিত বহু জঙ্গি, গ্যাংস্টার, খুনি ও তোলাবাজদের গ্রেফতার এবং এনকাউন্টার করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি টিটিপির ছোড়া বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন আসলাম।

০৯ ২৩

১৯৬৩ সালে হাজারা বিভাগের মানসেহরা জেলার ধোদিয়ালের ইউনিয়ন কাউন্সিলের আরঘুশাল গ্রামে জন্ম আসলামের। তাঁর বাবা আক্রম খান স্বাতি ছিলেন পেশায় আইনজীবী।

১০ ২৩

প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাবার সঙ্গে করাচি চলে আসেন আসলাম। বড় হওয়ার পর গুর্জর গোষ্ঠীর ঐক্য এবং অটল সাহসিকতার উপাখ্যানে গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকারি ভাবে ‘চৌধরি’ উপাধি গ্রহণ করেন আসলাম।

১১ ২৩

১৯৮৪ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর হিসাবে সিন্ধ পুলিশবাহিনীতে যোগ দেন আসলাম। তবে পরে করাচি এবং বালোচিস্তানের বেশ কয়েকটি থানায় দায়িত্ব পালন করেন।

১২ ২৩

পুলিশে যোগ দেওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট হিসাবে কুখ্যাতি অর্জন করেন আসলাম। ১৯৯২-১৯৯৪ পর্যন্ত এবং ১৯৯৬-১৯৯৭ পর্যন্ত পাক পুলিশের এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি।

১৩ ২৩

এর পর কিছু কারণবশত বরখাস্ত করা হয় আসলামকে। ২০০৪ সালে আবার চাকরিতে যোগ দেন তিনি। করাচির ‘টার্গেট কিলার’দের নির্মূল করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। করাচির উপকণ্ঠে ল্যারি শহর সেই সময় অপরাধী এবং পাক মাফিয়াদের গড় হয়ে উঠেছিল। মাঝেমধ্যেই রক্তাক্ত হয়ে উঠত সেই শহর।

১৪ ২৩

ল্যারি শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের তরফে এলটিএফ (ল্যারি টাস্ক ফোর্স) গড়ে তার মাথায় বসানো হয় আসলামকে। ল্যারি শহরে গ্যাংওয়ারের অবসান ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।

১৫ ২৩

২০১০ সালে আসলামকে পাক পুলিশের ‘ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট’-এর তদন্ত বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে ‘ল্যারি গ্র্যান্ড অপারেশন’-এর মাধ্যমে ল্যারিকে ‘অপরাধমুক্ত’ করার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।

১৬ ২৩

বলা হয়, আসলামের মেজাজ নাকি সব সময় তুঙ্গে থাকত। তাঁকে কেউই বিশেষ ঘাঁটাতেন না। ভয় করে চলতেন পুলিশের অনেক কর্তাও। বেশির ভাগ সময়েই আসলামের হাতে থাকত সিগারেট এবং পরনে থাকত সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি।

১৭ ২৩

পাক পুলিশকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক বার খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল আসলামকে। ২০১২ সালে তাঁর করাচির বাড়িতে হামলা চালায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)-র সদস্যেরা। ওই বোমা হামলায় আসলামের অর্ধেক বাড়ি উড়ে যায়। নিহত হন আট জন। তবে আসলাম অক্ষত ছিলেন।

১৮ ২৩

হামলার দায় স্বীকার করে টিটিপি সে সময় জানিয়েছিল, তাদের দলের সদস্যদের নির্বিচারে খুনের কারণেই তারা ওই পদক্ষেপ করেছিল। যদিও আসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে বিরত থাকবেন না তিনি। অপরাধীদের মেরে পুঁতে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

১৯ ২৩

তবে তার বছর দু’য়েক পরে ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি ল্যারি জাতীয় সড়কে আসলামের কনভয় লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। নিহত হন আসলাম। মৃত্যু হয় আরও দুই পুলিশকর্তা, আসলামের রক্ষী এবং গাড়ির চালকেরও।

২০ ২৩

টিটিপির ‘মোহমান্দ এজেন্সি’ শাখা এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। জঙ্গিগোষ্ঠীর মুখপাত্র সাজ্জাদ মোহমান্দ বলেন, ‘‘টিটিপির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্যই নিকেশ করা হয়েছে আসলামকে।”

২১ ২৩

পরে আসলামের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত উঠে এসেছিল, দুঁদে পুলিশকর্তাকে খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরই গাড়ির চালক। আসলামের গাড়ির গতিবিধি সম্পর্কে তিনিই বিদ্রোহীদের অবহিত করেছিলেন বলেও উঠে আসে।

২২ ২৩

আসলামের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আসলামের কাজের প্রশংসাও করেছিলেন তিনি।

২৩ ২৩

২০২২ সালে আসলামের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি ‘চৌধরি— দ্য মার্টার’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে আসলামের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তাঁরই খুড়তুতো ভাই তারিক ইসলাম। ‘ধুরন্ধর’ ছবিতেও সঞ্জয় দত্তের চরিত্র সেই আসলামের জীবনকে ভিত্তি করে তৈরি বলে জল্পনা ছড়িয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement