Russian presidential aircraft

বোকা বানাতে ওস্তাদ, রয়েছে পরমাণু অস্ত্রের বোতাম! পুতিনের ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ হার মানায় এয়ার ফোর্স ওয়ানকেও, কী এর বিশেষত্ব?

পুতিনের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীকের মধ্যে অন্যতম দু’টি। একটি হল বিশেষ লিমুজ়িন ও অন্যটি হল উড়ন্ত রাজপ্রাসাদ ‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’। মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেমন ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’, ঠিক তেমনই পুতিনের রয়েছে ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ ইলিউশিন আইএল–৯৬–৩০০ পিইউ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:০০
Share:
০১ ২০

বৃহস্পতিবার দিল্লির পালমে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি ছুঁয়েছে ‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’। ৩০ ঘণ্টার ভারত সফরে এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মোদীর আমন্ত্রণে ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন মস্কো-প্রধান।

০২ ২০

পুতিনকে স্বাগত জানাতে প্রোটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রানওয়েতে দাঁড়িয়েই করমর্দনের পরে পুতিনকে আলিঙ্গন করেন মোদী। মস্কো-দিল্লি বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলার বার্তা দেন মোদী। উষ্ণ অভিনন্দনের পালা শেষ হওয়ার পর দুই রাষ্ট্রপ্রধান রওনা দিয়েছিলেন একই গাড়িতে।

Advertisement
০৩ ২০

গত সেপ্টেম্বরে চিনে এসসিও সম্মেলনে মোদীকে নিজের গাড়িতে চাপিয়েছিলেন পুতিন। এই প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে গাড়িতে ঘোরার পরিকল্পনা আমারই ছিল। এটা আমাদের বন্ধুত্বের স্মারক।”

০৪ ২০

সফরে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষবৈঠকে যোগদান করবেন পুতিন। পাশাপাশি, শুক্রবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সই হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম, রাশিয়া থেকে আরও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করে পুতিন জানিয়েছেন, ভারত সফরের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। এই সফরে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা নিয়ে বহু আলোচনা হবে বলেও জানান মস্কো-প্রধান।

০৫ ২০

রুশ প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের আগে পাঁচস্তরীয় নিরাপত্তাবলয় প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রাশিয়া থেকে জনা পঞ্চাশ শীর্ষ নিরাপত্তাকর্মী আগেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন। রাশিয়ার শীর্ষনেতার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাধুনিক নিরাপত্তা জাল মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানীর বুকে। পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান বিদেশসফরে গেলেই দু’টি বিশেষ বাহনের উপস্থিতি নজর কাড়ে বিশ্বের।

০৬ ২০

দু’টিই পুতিনের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীক। একটি হল বিশেষ লিমুজ়িন এবং অন্যটি ‘উড়ন্ত রাজপ্রাসাদ’ ‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’— পুতিনের ব্যক্তিগত বিমান। বুলেটপ্রুফ বিলাসবহুল লিমুজ়িনটিকে ডাকা হয় ‘অরাস সেনাট’ নামে। রুশ প্রেসিডেন্টের সুরক্ষার জন্যে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে গাড়িটি।

০৭ ২০

১৯৪৫ সালে তৈরি সোভিয়েত যুগের লিমুজ়িন জ়েডআইএস-১১০-এর অনুকরণে তৈরি গাড়িটি রাশিয়ার অটোমোবাইল সংস্থা অরাস-এর নকশা করা। গাড়িটি তৈরি করেছে রাশিয়ার অটোমোটিভ প্রযুক্তি উন্নয়ন সংস্থা ‘সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ অটোমোবাইল অ্যান্ড অটোমোটিভ ইঞ্জিন ইনস্টিটিউট’ ওরফে ‘নমি’।

০৮ ২০

মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেমন ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’, ঠিক তেমনই পুতিনের রয়েছে ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ ইলিউশিন আইএল–৯৬–৩০০ পিইউ । একে বিমান না বলে উড়ন্ত দুর্গ বলাই শ্রেয়। বিশেষ ভাবে তৈরি এই বিমানে চড়েই রাশিয়া থেকে ভারতে উড়ে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘপাল্লার, চার ইঞ্জিনযুক্ত রুশ বিমানটি যেন ছোটখাটো এক প্রাসাদ। কী নেই তাতে!

০৯ ২০

ইলিউশিন ডিজ়াইন ব্যুরো ১৯৮০ সালে দূরপাল্লার এই রুশ বিমানটি তৈরি করে। এটি ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম বার আকাশে উড়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে রুশ প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিমানটি। আইএল-৯৬-৩০০পিইউ দূরপাল্লার আইএল-৯৬ প্ল্যাটফর্মে তৈরি, যার দৈর্ঘ্য ৫৫.৩৫ মিটার এবং ডানা বা উইংস্প্যান ৬০.১২ মিটার।

১০ ২০

‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’-এ রয়েছে উন্নত এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রযুক্তি। মাঝ-আকাশে হ্যাকিং বা কোনও বাধা তৈরি হলে তা রুখে দেওয়ার সমস্ত কঠোর সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা রয়েছে বিমানে। শত্রুপক্ষের হামলা থেকে সব রকম ভাবে রাষ্ট্রনেতাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পারে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এর রুশ সংস্করণটি।

১১ ২০

বিমানটিতে রয়েছে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ডাইনিং রুম এবং কনফারেন্স রুম। এ ছাড়াও বিমানে সিনিয়র সদস্যদের জন্য আলাদা অফিস রুম আছে। বিমানে সব সময় মজুত থাকে প্রেসিডেন্টের জন্য রক্ত ও চিকিৎসক। রাস্তায় চলার সময় প্রেসিডেন্টের গাড়ির আগে-পিছে যেমন আরও অন্য গাড়ি থাকে কনভয়ে, তেমন সুরক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের বিমানের আগেও একাধিক নজরদারি বিমান উড়তে থাকে।

১২ ২০

প্রেসিডেন্টের বিমানের সুরক্ষাব্যবস্থাও দুর্ভেদ্য দুর্গের মতোই। শত্রুর রেডারের নজর এড়াতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আটকানোর জন্য ইলেকট্রনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই ক্ষেপণাস্ত্র এড়াতে ইনফ্রারেড ডিকয় ব্যবস্থা বসানো রয়েছে বিমানে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে মাছিও যাতে গলতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা।

১৩ ২০

অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে বিমানে। ফলে যে কোনও সময়ে বিমানে বসেই মস্কোকে জরুরি নির্দেশ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের যে প্রান্তেই বিমানটি উড়ুক না কেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগারের সঙ্গে যে কোনও সময়ে এনক্রিপ্টেড এবং নিরাপদ যোগাযোগ করতে পারেন প্রেসিডেন্ট।

১৪ ২০

রুশ প্রেসিডেন্টের বিমানের অন্দরসজ্জাও চোখধাঁধানো। দামি আখরোট কাঠের আসবাব, চামড়া ও গৃহসজ্জার সামগ্রী, তাতে বসানো সোনার পাত। রান্নাঘর ও খাবারের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা। ব্যায়ামের জন্য ফিটনেস এরিয়া বা জিমও।

১৫ ২০

একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে পুতিনের জেটে একটি ‘পারমাণবিক বোতাম’ রাখা রয়েছে। যদিও এটি এখনও নিশ্চিত নয়। পারমাণবিক বোতাম মূলত একটি জটিল ‘চেন-অফ-কমান্ড সিস্টেম’। কঠোর প্রোটোকল ও সুরক্ষা ব্যবস্থা জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। একক কোনও ব্যক্তির নির্দেশে এই বোতামটি কার্যকর হয় না। একাধিক নিরাপত্তা ধাপ পেরিয়ে পারমাণবিক আক্রমণের নির্দেশে কোড সম্পূর্ণ করা সম্ভব।

১৬ ২০

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, রাশিয়ার পারমাণবিক অনুমোদন প্রক্রিয়াটি রুশ প্রেসিডেন্টের চেগেট পারমাণবিক ব্রিফকেসের সঙ্গে সংযুক্ত। বিমানের কোনও পৃথক ‘বোতাম’ নেই। যদিও বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, প্রয়োজনে জেটটি পারমাণবিক কম্যান্ড পরিচালনা করতে সক্ষম। তবে এ যাবৎ এই বিষয়ে ক্রেমলিন বা মস্কো কেউই কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

১৭ ২০

ভারতের আকাশে পুতিনের বিমান প্রবেশের মুহূর্ত থেকে ল্যান্ডিং পর্যন্ত এক দিনে হাজার হাজার বার বিমানটির গতিপথ নজরবন্দি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের যাত্রাপথটি আঁটসাঁট নিরাপত্তার জালে মুড়ে ফেলে রুশ পাহারাদার প্রযুক্তি। ফলে পুরো রুটেই নজিরবিহীন সতর্কতা বজায় রাখা হয়। ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের পর বিমানটিকে নজরদারি বিমানের সঙ্গে দেখা গিয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

১৮ ২০

ফ্লাইট রেডার ২৪ থেকে প্রাপ্ত সূত্র অনুসারে ভ্লাদিমির পুতিনের জেট বিমানটি বৃহস্পতিবার গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নজরদারির আওতায় থাকা বিমান হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ভারত সফরের পথে নয়া নজির গড়ে ফেলেছে পুতিনের ‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’ বা উড়ন্ত দুর্গটি।

১৯ ২০

পুতিনের কনভয় যে সব পথ ধরে যাওয়ার কথা, সেগুলিতে দিল্লি পুলিশ এবং এনএসজি-র কর্তাদের সঙ্গে এক বার টহল দিয়ে ফেলেছেন মস্কোর গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও, পুতিনের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ড্রোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২০ ২০

রুশ প্রেসিডেন্টের কনভয়ের উপর সর্ব ক্ষণ নজরদারি চালানোর জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। গোটা পথ জুড়ে বেশ কয়েক জন স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও থাকছে জ্যামার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মনিটরিং এবং ফেশিয়াল রেকগনিশন ক্যামেরা।

সব ছবি: পিটিআই, রয়টার্স ও সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement