২০২৪ সালে হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তবে কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ভোটচুরি করে সেই নির্বাচন জিতেছে পদ্মশিবির।
রাহুল শুধু অভিযোগই করেননি, সঙ্গে ‘প্রমাণ’ও দিয়েছেন। তাঁর দাবি, হরিয়ানার ভোটার তালিকায় এক ব্রাজ়িলিয়ান মডেলের ছবি ভিন্ন ভিন্ন নামের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্তত ২২টি ‘ভুয়ো’ ভোটার কার্ডে বিজেপি ওই মডেলের ছবি ব্যবহার করে ‘জালিয়াতি’ করেছে বলে অভিযোগ কংগ্রেস সাংসদের।
রাহুল যে ব্রাজ়িলিয়ান ‘মডেলের’ কথা বলেছেন, তাঁর নাম ম্যাথুজ় ফেরেরো বলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, তাঁর নাম ল্যারিসা নেরি।
রাহুলের দাবি, ওই ব্রাজ়িলিয়ান মডেল হরিয়ানার অন্তত ১০টি ভিন্ন বুথে ‘ভোট দিয়েছেন’! তবে ভিন্ন নামে। কখনও সীমা, কখনও সুইটি, কখনও আবার সরস্বতী নামে ভোট পড়েছে!
কিন্তু কে সেই রহস্যময়ী? রাহুলের অভিযোগের পর থেকেই ব্রাজ়িলের ওই ‘মডেল’কে নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে নেটপাড়ায়। তাঁকে খুঁজতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন অনেকে।
কোনও নাম উল্লেখ করেননি রাহুল। তবে গুগ্ল সার্চ অনুযায়ী, প্রথমে অনেকেই মনে করেছিলেন মডেলের নাম ম্যাথুজ় ফেরেরো। কিন্তু ফেরেরো মডেল নন, এক জন ব্রাজ়িলিয়ান আলোকচিত্রী। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাঁর তোলা ছবি দেখতে পাওয়া যায়। তিনিই ওই মডেলের ছবি তুলেছিলেন।
এর পর রাহুলের দেখানো সেই ছবি গুগ্লে রিভার্স সার্চ করার পর দেখা যায়, ওই তরুণীর নাম ল্যারিসা। তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ার পর নিজে থেকেই সমাজমাধ্যমে ধরা দিয়েছেন ‘মডেল’। জানিয়েছেন নিজের মতামত।
জানা গিয়েছে, ‘মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত ল্যারিসা আদৌ মডেল নন। তিনি ব্রাজ়িলের এক পেশাদার কেশসজ্জা শিল্পী। দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজ়িলের মিনাস গেরাইসের বাসিন্দা। মিনাস গেরাইসের বেলো হরিজ়ন্টের একটি স্যাঁলোয় কাজ করেন।
ল্যারিসা জানিয়েছেন, রাহুল তাঁর যে ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন, তা বেশ কয়েক বছর আগে ২০১৭ সালে তোলা। তখন তাঁর ১৮-২০ বছর বয়স। ছবিটি তুলেছিলেন চিত্রগ্রাহক ফেরেরো। এবং, তিনি আর ফেরেরো এক মানুষ নন।
ল্যারিসা এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর ছবি সমাজমাধ্যম থেকে চুরি করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে সেটি। ছবিটি একাধিক ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। তবে এখন তা মুছে ফেলা হয়েছে।
অন্য দিকে ব্রাজ়িলের তথ্য-যাচাইকারী সংবাদমাধ্যম ‘আওস ফাতোস’ জানিয়েছে, ল্যারিসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল তারা। তবে ল্যারিসার দাবি, হরিয়ানা নির্বাচনে তাঁর ছবি ব্যবহারের বিষয়ে অবগত ছিলেন না তিনি। কোনও জ্ঞানই ছিল না তাঁর।
ল্যারিসার কথায়, ‘‘আমি কোনও মডেল নই। সেই সময় শুধুমাত্র বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য ক্যামেরার সামনে পোজ় দিয়েছিলাম।’’
সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে পুরো বিষয়টি নিয়ে রসিকতাও করেছেন ল্যারিসা। রাহুলের দাবি প্রকাশ্যে আসার পরপরই নেরির ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে।
সেই ভিডিয়োয় ল্যারিসা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কোনও যোগ নেই তাঁর। বিষয়টিকে ‘রসিকতা (জোক)’ বলে কটাক্ষও করেছেন তিনি।
ভিডিয়োয় পর্তুগিজ় ভাষায় কথা বলতে দেখা গিয়েছে ল্যারিসাকে। ভিডিয়োয় মজা করে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বন্ধুরা আমি তোমাদের একটি মজার কথা বলতে যাচ্ছি। ওরা আমার একটি পুরোনো ছবি ব্যবহার করছে। ছবিটি তোলার সময় আমার ১৮-২০ বছর বয়স ছিল। ভারতে ভোটদান বা নির্বাচনে ছবিটি কী ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমি শুনলাম আমার ছবি ব্যবহার করে এবং আমাকে ভারতীয় মহিলা হিসাবে দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকানো হয়েছে।’’
ল্যারিসা আরও জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর থেকেই সাংবাদিকেরা তাঁকে ফোন করতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘হে ভগবান, কী পাগলামি! আমরা কোন জগতে বাস করছি। আমার স্যাঁলোতেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। অনেকে আবার ইনস্টাগ্রামে আমাকে খুঁজে পেয়ে যোগাযোগ শুরু করেছেন।’’