আইপিএলের নিলামের আগে ৮৯ জন ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিয়েছে ১০টি দল। অর্থাৎ, এই ৮৯ জন ক্রিকেটার আবার নিলামে উঠবেন। ১৯ ডিসেম্বর সেই নিলাম হবে। রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১১ জন ক্রিকেটারকে ছেড়েছে। হাতে রেখেছে ১৬ জনকে।
মুকেশ অম্বানীর দল যে ১১ জনকে ছেড়েছে, তাঁদের নাম নিলামে উঠবে। বাকি ১৬ জন আপাতত মুম্বই দলে স্থায়ী। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বর্তমানে রোহিতের দলে কোন কোন ক্রিকেটার রইলেন। নিলামে অংশগ্রহণ করতে কত টাকাই বা থাকল অম্বানীদের হাতে?
মুম্বইয়ের ১৬ জনের মধ্যে যেমন দেশীয় ক্রিকেটারেরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বিদেশি ক্রিকেটারও। তালিকায় প্রথমেই রয়েছে অধিনায়ক রোহিতের নাম।
সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও বিশ্বকাপ জুড়ে দলকে সাবলীল ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। ওপেন করতে নেমে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং বেশির ভাগ ম্যাচেই ভারতকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বোলারদের শাসন করার ব্যাপারে তাঁর থেকে কেউ এগিয়ে নেই। মু্ম্বইকেও একই ভাবে দীর্ঘ দিন নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রোহিত।
ভারতের অধিনায়ক হিসাবে দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে না পারলেও মুম্বইকে পাঁচটি আইপিএল দিয়েছেন রোহিত।
রবিবার বিকাল পর্যন্ত জল্পনা চলছিল হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে। অবশেষে নাটক থেমেছে। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, গুজরাত ছেড়ে মুম্বইয়ে যোগ দিয়েছেন হার্দিক। গুজরাত তাদের ধরে রাখা ক্রিকেটারদের তালিকায় রেখেছিল হার্দিককে। কিন্তু পরে জানা যায়, মুম্বইয়ে সই করেছেন তিনি। চুক্তি হয়ে গিয়েছে। রবিবার কোনও দল কিছু জানায়নি। সোমবার বেলায় সবটা পরিষ্কার হয়েছে। ২০২২-এ হার্দিকের নেতৃত্বে গুজরাত দল আইপিএল জিতলেও ২০২৪ সালের আইপিএলে রোহিতের দলেই খেলবেন হার্দিক।
দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ় খেলছে ভারত। আইপিএলের ময়দানে মারকুটে ব্যাটার হিসাবে নাম রয়েছে ‘স্কাই’-এর।
সূর্যকুমারের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ় খেলছেন ব্যাটার ঈশান কিশনও। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকেই বাজিমাত করেছিলেন ঈশান। বিশ্বকাপের প্রথম একাদশে তিনি ছিলেন না। তবে মুম্বইয়ের দলে অন্যতম ভরসার জায়গা তিনি।
আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মিডল অর্ডারের বড় ভরসা তিলক বর্মা। রোহিত, সূর্যকুমার কোনও ম্যাচে ব্যর্থ হলেও তিলক বাঁচিয়ে দেন। আগের আইপিএলে ধারাবাহিক ভাবে রান পেয়েছিলেন। ১১টি ম্যাচে করেছিলেন ৩৪৩ রান। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করে দলকে জিতিয়েছিলেন। কঠিন ম্যাচও জিতিয়েছিলেন। সেই তিলককে হাতছাড়া করেননি অম্বানীরা। তিলকও চলতি টি২০ সিরিজ়ে খেলছেন ভারতের হয়ে।
তরুণ তুর্কি নেহাল ওয়াধেরাকেও হাত থেকে যেতে দেয়নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আগের মরসুমে তিলকের সঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ কয়েকটি ম্যাচ উতরে ছিলেন নেহাল। পরের আইপিএলেও তাঁর উপর ভরসা থাকছে দলের।
মুম্বই দলে রয়েছেন ব্যাটার বিষ্ণু বিনোদ এবং সচিন-পুত্র অর্জুন তেন্ডুলকরও। তবে দু’জনেই আগের আইপিএলে বিশেষ কিছু করতে পারেননি।
বোলিংয়ের দিক থেকে অনেক দিন ধরেই মুম্বইয়ের ভরসার জায়গা যশপ্রীত বুমরা। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপেও তাঁর উপরে ভরসা করেছিল ভারতীয় দল। সেই ভরসা রেখেওছেন এই পেসার।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলার আকাশ মাধোয়ালকে ২০২৩-এর আইপিএলের আগে কেউই চিনতেন না। টেনিস বলে খেলতেন তিনি। সেই আকাশকে এখন সকলেই চিনে গিয়েছেন। আগের আইপিএলে মুম্বই দলে বুমরার অভাব ঢেকে দিয়েছিলেন মাধোয়াল। একটি ম্যাচে পাঁচ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আট ম্যাচে ১৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। দলকে ফাইনালে তুলতে না পারলেও আগামী দিনে মুম্বই দলের পেস আক্রমণ তৈরি হতে পারে তাঁকে ঘিরেই। এক সময় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মাধোয়াল। এখন তাঁর নেশা ক্রিকেটকেই পেশা করে নিয়েছেন।
আইপিএল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত নাম শামস মুলানি। বাঁহাতি এই স্পিনারকেও দলে রেখে দিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। রঞ্জি খেলোয়াড় হিসাবেও নাম রয়েছে তাঁর। আইপিএলে টুকটাক উইকেট নিলেও সে ভাবে কখনও দলের হাল ধরতে দেখা যায়নি মুলানিকে।
আইপিএলে মুম্বই দলের নেট বোলার হিসাবে শুরু করে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন কুমার কার্তিকেয়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আগের আইপিএলে বেশ কয়েকটি উইকেটও পেয়েছিলেন কার্তিকেয়। তাঁকেও দলে রেখেছেন অম্বানীরা।
২০২১-এর আইপিএলের আগে ডানহাতি স্পিনার পীযূষ চাওলাকে কিনে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ২০২২-এর আইপিএলে পীযূষকে কেনেনি কোনও দল। তবে ২০২৩ সালে নিলামের সময় ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আবার তাঁকে কিনে নিয়েছিল মুম্বই। ২০২৪ সালের আইপিএলেও তাঁকে দলেই রাখছেন অম্বানীরা।
বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে মুম্বই দলে রয়েছেন ডেওলাল্ড ব্রেভিস, টিম ডেভিড এবং জেসন বেহরেনডর্ফ। এঁদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ ক্রিকেটার ব্রেভিসকে মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
বিদেশি ক্রিকেটার ক্যামেরন গ্রিনকে আরসিবি-র কাছে বিক্রি করেছে রোহিতের দল। ফলে তাদের কাছে যে টাকা এসেছে তা দিয়ে গুজরাত থেকে হার্দিককে কিনেছে মুম্বই।
১৬ জনকে রাখার পাশাপাশি যে ১১ জনকে মুম্বই ছেড়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহম্মদ আরশাদ খান, রমনদীপ সিংহ, জোফ্রা আর্চার, ক্রিস জর্ডন-সহ আরও অনেকে। তার মধ্যে বিদেশিদের সংখ্যা বেশি।
ক্রিকেটারদের রেখে এবং ছেড়ে আইপিএলের নিলামের জন্য এখনও ১৭.৭৫ কোটি টাকা রয়েছে অম্বানীদের পকেটে। নিয়ম অনুযায়ী, এখনও তিন বিদেশিকে কিনতে পারবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।