বিহার বিধানসভা ভোটে শোচনীয় ফল করেছে লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি। রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৪৩টিতে লড়ে তাদের প্রাপ্তি ২৫টি আসন!
এর আগে ২০১০ সালের বিধানসভা ভোটে ২২টি আসনে জিতেছিল লালুর দল। তার পরে এ বারই তারা সবচেয়ে কম আসন পেল।
লালু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা দীর্ঘ দিন শাসন করেছেন বিহারের রাজনীতিতে। পাশাপাশি, আরজেডি প্রধানের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়েও কৌতূহল আছে মানুষের মনে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কত সম্পত্তি রয়েছে লালু এবং তাঁর পরিবারের।
আরজেডি প্রধান লালু এবং তাঁর পরিবারের আর্থিক উত্তরাধিকার ভারতীয় রাজনীতিতে অনেক বারই খতিয়ে দেখা হয়েছে। নির্বাচনী হলফনামার হিসাব তো রয়েছেই, পাশাপাশি রয়েছে অতীতে বিবিধ তদন্তের সময় বাজেয়াপ্ত করা বিশাল বেনামি সম্পত্তি।
লালুপ্রসাদ যাদবের সর্বশেষ সরকারি হলফনামা ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। সেই হলফনামা অনুযায়ী, আরজেডি প্রধানের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩.২ কোটি টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, লালুর জ্যেষ্ঠ পুত্র তেজপ্রতাপ যাদবের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২.৮৮ কোটি টাকা। যদিও আরজেডির সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই তেজপ্রতাপের। ‘জনশক্তি জনতা দল’ (জেজেডি) নামে নতুন দল গড়েছেন তিনি।
হলফনামার হিসাব বলছে, লালুর কনিষ্ঠ পুত্র তথা বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের সম্পত্তির পরিমাণ ৬.১২ কোটি টাকা। তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানের নামে অতিরিক্ত ১.৮৯ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। ফলে তেজস্বীর পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮.০১ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
সম্মিলিত ভাবে, লালু এবং তাঁর পরিবারের ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১২.২ কোটি টাকা।
লালু এবং তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে অন্যতম জমির বিনিময়ে চাকরির অভিযোগ।
লালু প্রথম ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন (২০০৪-০৯) বিহারের বহু যুবককে জমির বিনিময়ে রেলের ‘গ্রুপ ডি’ পদে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ওঠে লালুর স্ত্রী তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং তাঁদের দুই কন্যা মিসা এবং হেমার বিরুদ্ধেও।
জমির বিনিময়ে চাকরি কেলেঙ্কারির অংশ হিসাবে লালু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের একাধিক সম্পত্তি কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সিবিআই তদন্তের অধীনে রয়েছে।
লালু বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং সেগুলিকে ‘রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন। যদিও ইডির দাবি, তাঁর মালিকানা গোপন করার জন্য সেগুলি একাধিক সংস্থার অধীনে নিবন্ধিত করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে বার বার আলোচনায় উঠে এসেছে লালুর পারিবারিক বিবাদও। এক দশক আগেই জ্যেষ্ঠ পুত্র তেজপ্রতাপকে পিছনের সারিতে ঠেলে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে কনিষ্ঠ পুত্র তেজস্বীকে বেছে নিয়েছিলেন আরজেডি প্রধান।
২০১৫ সালে জেডিইউ এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তেজস্বী (তেজপ্রতাপও সেই সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন)। তার বছর দেড়েকের মধ্যেই লালুর পরিবারের অন্তর্বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল।
দলের অন্দরে তাঁকে ‘কোণঠাসা’ করা হচ্ছে বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন তেজপ্রতাপ। ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ এবং ‘পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ’ করার কারণে গত মে মাসে তেজপ্রতাপকে দল এবং পরিবার থেকে বিতাড়িত করেন লালু।
এর পর ‘জনশক্তি জনতা দল’ (জেজেডি) নামে নতুন সংগঠন গড়েন তেজপ্রতাপ। এ বারের বিধানসভা ভোটে নাম না করে তাঁর বিতাড়নের জন্য ধারাবাহিক ভাবে তেজস্বীকেই দুষে গিয়েছেন তেজপ্রতাপ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে লালুর কন্যা রোহিণীও এই পারিবারিক লড়াইয়ে তেজপ্রতাপের পাশে দাঁড়িয়ে নিশানা করেছিলেন তেজস্বীকে।
লালু পরিবারের এই কাদা ছোড়াছুড়ি তাঁর চিরাচরিত ‘যাদব ভোটব্যাঙ্কে’ প্রভাব ফেলেছে। আর সে কারণেই বিহারে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি ধরাশায়ী হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ভোটে আরজেডির ভরাডুবি হলেও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে তেজপ্রতাপের দল। বৈশালী জেলার মহুয়া আসনে লালুর জ্যেষ্ঠ পুত্রের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।