অপেক্ষার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রবিবার বিকেলেই সাত পাকে বাঁধা পড়বেন ক্রিকেটতারকা এবং সুরকার তথা পরিচালক। স্মৃতি মন্ধানা ও পলাশ মুচ্ছলের প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠানের ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলীতে স্মৃতির পারিবারিক বাড়িতে এক অন্তরঙ্গ অনুষ্ঠানে চার হাত এক হবে বর-কনের।
বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটতারকা তাঁর দীর্ঘ দিনের প্রেমিক পলাশের সঙ্গে পা রাখবেন জীবনের নতুন অধ্যায়ে। পলাশের দিদি খ্যাতনামী গায়িকা পলক মুচ্ছলের শেয়ার করা ছবি ও ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে মেহন্দি, গায়েহলুদ ও প্রাক্বিবাহের নানা মুহূর্ত। মুচ্ছল ও মন্ধানা পরিবারের সদস্য ও বিশেষ কয়েক জন বন্ধুর উপস্থিতিতে সম্পন্ন হবে বিবাহ অনুষ্ঠান।
মন্ধানাকে বিয়ের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পলাশের সঙ্গে বাগ্দান সেরে ফেরেছিলেন আগেই। বিশ্বকাপজয়ী মহিলা ক্রিকেটার তাঁর বাগ্দানের খবর নিজেই দিয়েছেন। জাতীয় দলের চার সতীর্থের সঙ্গে নেচে সেই খবর জানিয়েছেন তিনি।
বাগ্দানের নাচের ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছিল ইনস্টাগ্রামে। সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে তাঁর সতীর্থদের। জেমাইমা রদ্রিগেজ়, রাধা যাদব, শ্রেয়ঙ্কা পাটিল ও অরুন্ধতী রেড্ডীর সঙ্গে নাচের তালে পা মিলিয়ে বাগ্দানের সংবাদ দিয়েছেন স্মৃতি। ভিডিয়োর শেষে বাগ্দানের আংটিও দেখিয়েছেন তিনি।
তারও আগে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল এই তারকাজুটির। সেখানে প্রেমিকাকে বিয়ের জন্য বিশেষ কায়দায় প্রস্তাব দেখা দিতে দেখা গিয়েছিল ইনদওরের পাত্র পলাশকে। লাল রঙের পোশাকে সজ্জিত হবু স্ত্রীকে ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে হাঁটুতে ভর দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে দেখা যায় পলাশকে। অনুষঙ্গ হিসাবে স্মৃতির অনামিকায় পরিয়ে দেন ভালবাসার চিহ্ন, হিরের আংটি।
শনিবার ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকজনদের নিয়ে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান সেরেছেন স্মৃতি ও পলাশ। ছিমছাম অথচ আনন্দের উষ্ণতায় ভরা অনুষ্ঠানে যুগলকে দেখা গিয়েছে একই রঙের পোশাকে। হবু বর ও কনে দু’জনেরই উজ্জ্বল হলুদ রঙের পোশাকে রুপোলি গোটা পাত্তির কাজ। স্মৃতি পরেছিলেন ঐতিহ্যবাহী চুড়িদার। পলাশের পরনে ছিল কুর্তা। পরিজনদের কাঁধে চেপে পলাশ প্রবেশ করেছেন অনুষ্ঠানের আসরে।
সঙ্গীত অনুষ্ঠানও সেরেছেন তারকাজুটি। ‘অগর ম্যায় কহুঁ’, ‘তেনু লে কে ম্যায় যাওয়াঙ্গা’ জনপ্রিয় হিন্দি গানের সঙ্গে নেচেছেন যুগল। সেই সমস্ত ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে। দু’জনে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে ছবিও তুলেছেন।
শনিবারই সম্পন্ন হয়েছিল একপ্রস্থ অনুষ্ঠান। মেহেন্দি অনুষ্ঠানটির সাজে চমকে দিয়েছেন ক্রিকেটতারকা। বেগুনি ও ল্যাভেন্ডারের মিশেলে জমকালো শাড়ি-গাউন বেছে নিয়েছিলেন স্মৃতি। বেগুনি পোশাকে ছিল সোনালি ও রুপোলি জরির জারদৌজ়ি কাজ। গলায় জমকালো চোকার নেকলেস। মাথায় মাঙ্গটিকা। প্রসাধনীতে ছিল না আতিশয্যের ছাপ। চুল টেনে পনিটেল করা। ছিমছাম অথচ আকর্ষণীয় সাজে হাজির হয়েছিলেন স্মৃতি।
পলাশ পরেছিলেন সাদা কুর্তা ও পাজামা। তার উপরে ঘিয়েরঙা নেহরু জ্যাকেট। তাতে ছিল সূক্ষ্ম সোনালি সুতোর কাজ। মেহেন্দি অনুষ্ঠানে স্মৃতির ননদ অর্থাৎ পলকের সাজও নজর কেড়েছে। হালকা গোলাপির উপর সুতো আর বি়ডসের কাজ করা লেহঙ্গা পরেছিলেন তিনি। হবু বর-কনে ও স্বামী মিথুনের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে মেহেন্দি অনুষ্ঠানে সেই ছবি শেয়ার করেছেন পলক। বলিউডের সঙ্গীত পরিচালক মিথুন পরেছিলেন গাঢ় নীল রঙের পাঞ্জাবি, জ্যাকেট ও লাল রঙের ধুতি।
পাত্র-পাত্রী দু’জনের হাত রাঙিয়ে তোলা হয়েছিল মেহেন্দি দিয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষ মোট ১৪০ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে সূত্রের খবর। পলাশের পক্ষ থেকে ৭০ জন এবং স্মৃতির পক্ষ থেকে ৭০ জন অতিথি হাজির থাকবেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। স্মৃতি ও পলাশ দু’জনেই বিয়েতে পোশাকশিল্পী অনিতা ডোঙ্গরের ডিজ়াইন করা পোশাক পরবেন বলে জানা গিয়েছে।
ইনদওরের পুত্রবধূ হতে চললেও তারকাজুটির বিয়ের আসর বসবে মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলীতে। সেটিই কনের ইচ্ছা। কারণ ওখানেই স্মৃতির পৈতৃক বাড়ি। একটু বড় হতেই স্মৃতি চলে আসেন মাধবনগরে। এটি সাঙ্গলীর শহরতলি এলাকা। সেখানেই স্মৃতি তাঁর পড়াশোনা শেষ করেন। সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান মেনেই বিয়ে হবে পলাশ ও স্মৃতির।
২০১৯ সাল থেকে সম্পর্কে রয়েছেন স্মৃতি ও পলাশ। প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে গোড়া থেকে রাখঢাক ছিল তারকাজুটির। খুব কমই জনসমক্ষে একসঙ্গে দেখা যেত তাঁদের। একসঙ্গে তাঁদের দু’জনের ছবি প্রথম প্রকাশিত হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে। দীর্ঘ দিন ধরেই পলাশ এবং স্মৃতির সম্পর্ক নিয়ে চর্চা চলছিল। তবে দু’জনের কেউই সে কথা স্বীকার করেননি।
বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সায়াজি হোটেল বুক করা হয়েছে। হলদি ও বাকি অনুষ্ঠানও সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যেরাই জানতেন এই সম্পর্কের কথা। একে অপরের প্রেমে পড়লেও দু’জনেই কেরিয়ারের দিকে মনোযোগী হয়ে পড়েন। স্মৃতি ক্রিকেটে ও পলাশ বলিউডে নিজের জমি শক্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
এক ‘কমন ফ্রেন্ডের’ মারফত আলাপ হয়েছিল স্মৃতি ও পলাশের। সঙ্গীত ও খেলাধুলায় একে অপরের আগ্রহই তাঁদের বন্ধুত্বের কারণ। পরে সেই বন্ধুত্ব বদলে যায় প্রেমের রসায়নে। ২০২৪ সালে পলাশ তাঁদের সম্পর্কের পাঁচ বছর উদ্যাপনের মিষ্টি ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন। তার পরই তাঁদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে।
পলাশ ও স্মৃতির সম্পর্ককে প্রথম থেকেই খোলাখুলি ভাবে মেনে নিয়েছিল মুচ্ছল ও মন্ধানা পরিবার। খুশি মনেই দুই পরিবারের সম্মতিতে চার হাত এক হতে চলেছে পাত্র-পাত্রীর।
মাত্র ১৮ বছরে সবচেয়ে কমবয়সি সুরকার তথা সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন পলাশ। সম্প্রতি তিনি বলিউডের সবচেয়ে কমবয়সি সুরকার হিসাবে গোল্ডেন বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম লিখিয়েছেন। মুম্বইয়ের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিকেটতারকার হবু স্বামী পলাশের সম্পদ ৩০ থেকে ৪০ কোটির মধ্যে।
স্মৃতি এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম ধনী ক্রিকেটতারকা। বিসিসিআইয়ের স্মৃতির সঙ্গে চুক্তিপত্র রয়েছে, তাতে তিনি বাৎসরিক ৫০ লাখ টাকা পান। এ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য ম্যাচপ্রতি পান ১৫ লক্ষ টাকা। ‘ওয়ান ডে’ অর্থাৎ একদিনের খেলায় ম্যাচপ্রতি ৬ লক্ষ টাকা পান। স্মৃতির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৫ কোটির কাছাকাছি।