কলেজ থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্ট-আপ সংস্থার কাজ জুটে গিয়েছিল। তবে গোড়ায় নতুন চাকরিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি এক তরুণী।
কাজে যোগ দেওয়ার মাস দেড়েক পর চাকরি খোয়ানোর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সংস্থার মালকিনের কাছে অনুরোধ করে অন্য বিভাগে দায়িত্ব পান তিনি। সেখানে অবিশ্বাস্য গতিতে তাঁর উন্নতি দেখে পদোন্নতির পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা নিতে রাজি নন তিনি।
সম্প্রতি নিজের সংস্থার এক তরুণী কর্মীর এ হেন কীর্তি প্রকাশ্যে এনেছেন ওই অ্যাপ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শিবাংশী বর্মা। জানিয়েছেন, এমন কর্মীর উপরেই ভরসা করতে চান তিনি।
আইআইটি রোপর থেকে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সময় থেকেই ব্যবসায় ঝোঁক শিবাংশীর। প্রথম বর্ষে পড়ার সময় একটি সংস্থাও খুলেছিলেন। তবে সে কারবার জমেনি।
স্নাতকের ডিগ্রি হাসিল করার পর একটি স্টার্ট-আপ সংস্থা খোলেন তিনি। ওজন ঝরানোর জন্য কায়দা শেখানোই কাজ ছিল তাঁর সংস্থার অ্যাপের। শিবাংশীর দাবি, স্বাস্থ্যসচেতন মানুষজনেরা যাতে ডায়েট না করে বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন, সে পথ দেখায় তাঁর অ্যাপ।
ব্যবসার সঙ্গী হিসাবে গোড়া থেকে সন্দীপ কুমার নামে এক উৎসাহীর সঙ্গ পেয়েছেন শিবাংশী। তাঁর স্টার্ট-আপে সন্দীপ সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
শিবাংশীর দাবি, ওজন ঝরানোর জন্য দিনে মাত্র ৫-১০ মিনিট খরচ করতে হবে অ্যাপ ব্যবহারকারীকে। খাওয়াদাওয়া, ঘুমোনো বা ঘোরাফেরার বিষয়ে সাহায্য করতে পারে এটি। ব্যবহারকারীর মানসিক দিকটিও খেয়াল রাখতে কাজে আসবে এই অ্যাপ।
বাজারে আসার মাস চারেকের মধ্যেই ২০ হাজারের বেশি অ্যাপটি ব্যবহার করছেন বলেও দাবি শিবাংশীর। এই অ্যাপ থেকে নাকি পাঁচ হাজারের বেশি জন সুবিধা পেয়েছেন।
এই সংস্থায় নতুন কর্মী হিসাবে দীক্ষাকে নিয়োগ করেছিলেন শিবাংশী। কলেজ থেকে বার হওয়ার পরই কাজে রাখা হয়েছিল। তবে নিয়োগের ছ’সপ্তাহ পর শিবাংশীদের মনে হয়েছিল, বিশেষ উন্নতি করতে পারছেন না দীক্ষা। ফলে তাঁকে ছাঁটাই করার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছিল।
চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে পারেন জানতে পেরে সরাসরি শিবাংশীর সঙ্গে কথা বলেন দীক্ষা। ছাঁটাইয়ের আগে আরও একটা সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। সংস্থায় অন্য দায়িত্বে দেওয়ার জন্য শিবাংশীকে রাজিও করিয়ে ফেলেন।
দীক্ষার অনুরোধে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন শিবাংশী এবং সন্দীপ। টুইটারে এ কাহিনি জানিয়ে শিবাংশী লিখেছেন, ‘‘অন্য দায়িত্বে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি (দীক্ষা)। সবাইকে অবাক করে নতুন দায়িত্বে নিজেকে যোগ্য হিসাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন।’’
শিবাংশী আরও লিখেছেন, ‘‘নতুন কাজে এতটাই সফল হয়েছিলেন (দীক্ষা) যে আমরা ওঁকে নিয়ে দ্বিতীয় বার ভাবতে বাধ্য হই।’’
দু’মাসের মধ্যে দীক্ষার কাজে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন শিবাংশী এবং সন্দীপ। একেবারে আনকোরা কর্মী হলেও তাঁকে সংস্থায় সিনিয়র পদে নিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব দেন শিবাংশীরা।
পদোন্নতির ফলে তাঁর বেতনও বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তবে শিবাংশীদের আরও এক বার হতবাক করে দেন দীক্ষা।
শিবাংশী লিখেছেন, ‘‘(বেতন বৃদ্ধির পর) আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন দীক্ষা। বেতন বৃদ্ধি না করার অনুরোধও করেন। আমি ওঁকে যোগ্য মনে করা না-পর্যন্ত এমনই করতে বলেছিলেন।’’
সংস্থা কর্তৃপক্ষের কাছে কেন এই অনুরোধ করেছিলেন দীক্ষা? শিবাংশীর কাছে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ সংস্থায় আরও অবদান রাখতে চাই আমি।’’
শিবাংশীর মতে, দীক্ষার এই অনুরোধ শুনে অনেকেই তাঁকে অপ্রতিভ মনে করতে পারেন। তবে এতে তাঁর সততা প্রমাণিত হয়।
সংবাদমাধ্যমের কাছে শিবাংশী বলেন, ‘‘বেশির ভাগ লোকজনই হয়তো ভাববেন, দীক্ষা আদতে ভালমানুষ অথবা খুব একটা চালাকচতুর নন। তবে আমি একে অন্য চোখে দেখি।’’
শিবাংশীর কথায়, ‘‘পঞ্চাশ জনের বেশি কর্মীর সঙ্গে কাজ করেছি আমি। আটশোর বেশি প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিয়েছি। সকলেরই অর্থ চাই। দীক্ষাকে অত্যন্ত সৎ কর্মী বলে মনে করি। এমন এক মানুষ যিনি নিজেকে প্রমাণ করতে আগ্রহী, যিনি সংস্থার সুচিন্তা করেন। এমন এক জন যাঁকে আমি ভরসা করতে পারি।’’