এক দিকে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ‘থালাইভা’, অন্য দিকে বলিউডের ‘মিস্ হাওয়া হাওয়াই’। কিশোরী বয়সে রজনীকান্তের সৎমায়ের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন শ্রীদেবী। ১৩ বছরের ছোট সেই কিশোরীকে দেখেই নাকি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন রজনীকান্ত। তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেবেন বলেও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন ‘থালাইভা’।
১৯৭৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রোম্যান্টিক থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘মুন্দ্রু মুদিচু’। দক্ষিণী ছবিনির্মাতা কে বালাচন্দ্র পরিচালিত তামিল ভাষার এই ছবিতে রজনীকান্তের সৎমায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীদেবী। তখন নায়িকার বয়স মাত্র ১৩ বছর। রজনীকান্তের সঙ্গে শ্রীদেবীর বয়সের পার্থক্যও ছিল ১৩ বছরের।
১৩ বছরের ছোট সহ-অভিনেত্রীকে দেখে ভাল লেগেছিল রজনীকান্তের। তামিল ভাষার পাশাপাশি তেলুগু, কন্নড় এবং হিন্দি ভাষার ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল রজনীকান্ত এবং শ্রীদেবীকে। মোট ১৯টি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তাঁরা।
পেশাগত জীবনের পরিধির বাইরেও শ্রীদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রজনীকান্তের। শ্রীদেবীর পরিবারের কাছেও আপন হয়ে উঠেছিলেন নায়ক। রজনীকান্ত তাঁর ব্যক্তিগত ফোন নম্বর খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিল শ্রীদেবীর নাম।
শ্রীদেবীর যখন মাত্র ১৬ বছর বয়স, তখন নায়িকাকে বিয়ে করার বাসনা জেগেছিল রজনীকান্তের মনে। এমনকি, নায়িকার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন নায়ক। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছিলেন দক্ষিণী পরিচালক কে বালাচন্দ্র।
পরিচালকের কথায়, গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে শ্রীদেবীর বাড়িতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রজনীকান্ত। বালাচন্দ্রের দাবি, সে দিনই নাকি শ্রীদেবীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবেন বলে মনস্থির করেছিলেন নায়ক। কিন্তু শুভ মুহূর্তের আগেই অশুভ ইঙ্গিত পেয়েছিলেন রজনীকান্ত। তাই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, রজনীকান্ত যে মুহূর্তে শ্রীদেবীকে মনের কথা জানাতে যাচ্ছিলেন সেই মুহূর্তেই নাকি বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুভ কাজ শুরু হওয়ার আগে ঘর অন্ধকার হয়ে যাওয়ার ঘটনাটিকে অশুভ ইঙ্গিত হিসাবে মনে করেছিলেন রজনীকান্ত।
শ্রীদেবীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে হয়তো কোনও অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারে— সেই চিন্তাই চেপে বসে রজনীকান্তের মনে। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাটি যে কাকতালীয়ও হতে পারে, তা মাথাতেই আসেনি নায়কের। রজনীকান্ত এই ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন বলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর শ্রীদেবীকে মনের কথা জানাননি নায়ক।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লতাকে বিয়ে করেন রজনীকান্ত। বিয়ের পরেও শ্রীদেবীর সঙ্গে সখ্য ছিল নায়কের। রজনীকান্তের বিয়ের পর কেটে যায় ১৫ বছর। ১৯৯৬ সালে বলি প্রযোজক বনি কপূরকে বিয়ে করেছিলেন শ্রীদেবী।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় যে, রজনীকান্তের জন্য নাকি সাত দিন উপবাস করেছিলেন শ্রীদেবী। ‘রানা’ ছবিতে তিনটি চরিত্রে একসঙ্গে অভিনয়ের কথা ছিল রজনীকান্তের। কিন্তু সেই ছবির প্রযোজনা সংক্রান্ত কাজকর্ম চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নায়ক।
রজনীকান্তের অসুস্থতার কারণে ‘রানা’ ছবির কাজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রজনীকান্তের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে টানা সাত দিন উপবাস করেছিলেন শ্রীদেবী।
রজনীকান্ত পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও ‘রানা’ ছবির কাজ আজীবনের জন্য থমকে যায়। পরে ‘রানা’ ছবির পরিচালক কেএস রবিকুমার সেই টাকা দিয়ে অন্য একটি অ্যানিমেশন ছবি তৈরি করেন। সেই ছবির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন রজনীকান্ত।
প্রতি বছর শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেন রজনীকান্ত। কিন্তু শ্রীদেবীর জন্য নাকি ৩৭তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেননি অভিনেতা।
২০১৮ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি মারা গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। সেই খবর জানতে পেরেই শোকাহত হয়ে পড়েছিলেন রজনীকান্ত। বিবাহবার্ষিকীর সমস্ত পরিকল্পনা বাতিল করে তিনি সোজা মুম্বই চলে গিয়েছিলেন।
শ্রীদেবীর মৃত্যু প্রসঙ্গে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রজনীকান্ত লিখেছিলেন, ‘‘আমি কী বলব বুঝতে পারছি না। আমার খুব প্রিয় এক বন্ধুকে হারিয়ে ফেললাম। ওর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবকে সমবেদনা জানাই। শ্রীদেবীর কথা খুব মনে পড়বে। মিস্ করব ওকে আমি।’’