দাম্পত্যসঙ্গী হোক বা প্রেমিক-প্রেমিকা। চিরকালই লুকিয়ে নিষিদ্ধ প্রেমের হাতছানিতে সাড়া দিয়েছেন বহু পুরুষ এবং মহিলা। কথায় আছে প্রেমের ফাঁদ পাতা সর্বত্র। আর এই ফাঁদে পা দিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অনেকেই। আবার বিবাহিত সম্পর্কে সুখী হতে না পেরে অনেকেই অন্য কোনও মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হন।
যদিও প্রেম বা পরকীয়া কোনও নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকে না। নতুন যুগে প্রেমের সম্পর্কের সংজ্ঞা এমনই বদলেছে যে, তা চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এখন যদি প্রশ্ন ওঠে কোন দেশের মানুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে বেশি পছন্দ করেন, তা হলে হয়তো অধিকাংশেরই মাথায় ঘুরতে পারে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির নাম। অনেকেরই মনে হতে পারে এই তালিকার প্রথম নামটি হয়তো আমেরিকা। অনেকেই আবার ইউরোপের কোনও দেশের নাম বাছতে বসে যেতে পারেন।
কিন্তু তা নয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, সহকর্মীর প্রেমে সবচেয়ে বেশি পড়েন যে দেশের বাসিন্দারা সেই দেশের নাম মেক্সিকো। আর তালিকার দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ভারতের নাম। অবিশ্বাস্য মনে হলেও তেমনটাই উঠে এসেছে ওই সমীক্ষায়।
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করছেন, এমন মানুষ সব দেশেই কমবেশি রয়েছেন। কিন্তু ওই সমীক্ষা অনুযায়ী মেক্সিকো এবং ভারত এ ক্ষেত্রে সবার থেকে এগিয়ে। তথ্য বিশ্লেষণ এবং বাজার গবেষণা সংক্রান্ত পরিষেবা প্রদানকারী একটি সংস্থার সহায়তায় আন্তর্জাতিক ওই সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছেন গোপন সম্পর্কের জন্য জনপ্রিয় একটি সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম।
অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজ়িল, কানাডা, জার্মানি, ভারত, ইটালি, মেক্সিকো, স্পেন, সুইৎজ়ারল্যান্ড, ব্রিটেন এবং আমেরিকা— এই ১১টি দেশে সমীক্ষাটি করা হয়েছিল। সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মোট ১৩,৫৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করেই সমীক্ষাটি করা হয়েছে।
ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বা বর্তমানে সম্পর্কে রয়েছেন, এমন কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোয়। তার পরেই স্থান পেয়েছে ভারত।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ভারতে কর্মক্ষেত্রে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। যদিও কর্মক্ষেত্রগুলি পেশাদার সীমানা এবং আচরণের নীতি সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠেছে বলেও উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
সমীক্ষায় এ-ও উঠে এসেছে যে, ভারতীয় চাকুরিজীবীদের দশ জনের মধ্যে চার জন হয় কোনও সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বা বর্তমানে প্রেম করছেন।
মেক্সিকোর ক্ষেত্রে, ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, তাঁরা তাঁদের সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করেছেন বা করছেন। ৪০ শতাংশ ভারতীয় উত্তরদাতা জানিয়েছেন একই কথা।
আমেরিকা, ব্রিটেন এবং কানাডার মতো দেশগুলির তুলনায় মেক্সিকো এবং ভারতে সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। সমীক্ষা অনুযায়ী, ওই তিন দেশে এই সংখ্যা ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।
মজার বিষয় হল, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা এবং আগ্রহ বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৩৬ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ৫১ শতাংশ।
অর্থাৎ, ওই সমীক্ষার হিসাব বলছে পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবন মিশিয়ে ফেলার় সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে মহিলারা অনেক বেশি সতর্ক। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ২৯ শতাংশ মহিলার দাবি, পেশাগত জীবনে সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের পরিণতি কী হবে, তা অনুমান করে কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কে জড়ানোর কোনও ইচ্ছা তাঁদের নেই। একই কথা জানিয়েছেন ২৭ শতাংশ পুরুষও।
অন্য দিকে সমীক্ষায় এ-ও উঠে এসেছে, কর্মক্ষেত্রে প্রেম করার কারণে ব্যক্তিগত জীবনে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি চিন্তিত থাকেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৩০ শতাংশ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।
এই সমীক্ষা প্রজন্মগত ভাবে কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কে জড়ানোর মনোভাবের পরিবর্তনের দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে সদ্য পা দেওয়া ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি ‘জেন জ়ি’ তরুণ-তরুণীরা সহকর্মীদের সঙ্গে প্রেমের ব্যাপারে সামগ্রিক ভাবে সবচেয়ে সতর্ক। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩৪ শতাংশ মানুষ আবার এই ধরনের সম্পর্ক তাঁদের কর্মজীবনের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।