দিল্লির বসন্তবিহার এলাকার বাড়ি থেকে দেশের নামী পানমশলা সংস্থা কমলা পসন্দের কর্ণধারের পুত্রবধূ দীপ্তি চৌরাসিয়ার দেহ উদ্ধার নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই পড়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী মনে করা হচ্ছে, আত্মহত্যা করেছেন দীপ্তি। অসমর্থিত সূত্রে একটি ‘নোট’ উদ্ধারের কথাও শোনা যাচ্ছে।
কিন্তু কে ছিলেন এই দীপ্তি? দীপ্তি কলকাতার মেয়ে। ২০১০ সালে পানমশলা সংস্থা কমলা পসন্দের কর্ণধার কমলকিশোর চৌরাসিয়ার পুত্র হরপ্রীত ওরফে অর্পিতের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।
বিয়ের এক বছরের মাথাতেই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন দীপ্তি। বছর পাঁচেক আগে জন্ম দেন এক কন্যারও। স্বামী এবং সন্তানদের সঙ্গে দিল্লির বসন্তবিহার এলাকার বাড়িতে থাকতেন দীপ্তি।
বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের একাংশের দাবি, দীপ্তি ছিলেন মৃদুভাষী। নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি কথা বলতে পছন্দ করতেন না তিনি। বিত্তশালী ব্যবসায়ী পরিবারের পূত্রবধূ হওয়া সত্ত্বেও আলোকবৃত্তের বাইরে থাকতেই পছন্দ করতেন ৩৮ বছর বয়সি দীপ্তি।
সেই দীপ্তিরই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মঙ্গলবার। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দীপ্তির স্বামী জিমে গিয়েছিলেন। ১৪ বছর বয়সি পুত্রও স্কুলে চলে গিয়েছিল।
তার পর বাড়িতে একাই ছিলেন দীপ্তি। স্বামী ফিরে শোবার ঘরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে দীপ্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
জানা গিয়েছে, দীপ্তির ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। সেই ডায়েরিতে ‘সম্পর্কের সমস্যা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দীপ্তি নাকি লিখেছেন, ‘‘সম্পর্কের মধ্যে যদি ভালবাসা এবং বিশ্বাস না থাকে, তা হলে জীবনের অর্থ কী?’’
ঘটনার দু’দিন পরেই বৃহস্পতিবার পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে দীপ্তির পরিবার। ভাই ঋষভ দীপ্তির শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ‘নির্যাতন’ এবং ‘হয়রানি’র অভিযোগ তুলেছেন।
ঋষভের দাবি, দীপ্তিকে ‘হয়রানি’ করতেন অর্পিত। মারধরও করতেন। অর্পিত এবং তাঁর মা, দীপ্তির উপর নির্যাতন চালাতেন বলেও অভিযোগ দীপ্তির ভাইয়ের।
সংবাদসংস্থা এএনআইকে ঋষভ জানিয়েছেন, শ্বশুরবাড়িতে দীপ্তির উপর অত্যাচার করা হত। তাঁর স্বামীর একাধিক সম্পর্ক ছিল। এক জনকে গোপনে বিয়েও করেছিলেন।
এমনকি, মুম্বইয়ে অর্পিতের অবৈধ এক সন্তান রয়েছে বলেও দাবি করেছেন দীপ্তির ভাই। আর সে কারণেই নাকি মানসিক ভাবে দীপ্তি ভেঙে পড়েছিলেন।
ঋষভের কথায়, ‘‘আমরা সম্প্রতি দীপ্তির স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক এবং গোপন বিয়ের খবর পেয়েছিলাম। বোনকে কলকাতার বাড়িতে নিয়েও এসেছিলাম। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে ওকে আবার নিয়ে যায়। ওঁরা কথা দিয়েছিলেন, বোনকে যত্নে রাখবেন। কিন্তু কথা রাখেননি।’’
তবে ঋষভের সমস্ত অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অর্পিতদের পারিবারিক আইনজীবী রাজেন্দ্র সিংহ। রাজেন্দ্রের কথায়, “গত কাল থেকে দীপ্তির মা আমাদের সঙ্গে আছেন। উভয় পরিবার শোকাহত। সবাই চান যে দীপ্তিকে মর্যাদার সঙ্গে দাহ করা হোক। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কোনও নোটও উদ্ধার হয়নি।’’
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ-পশ্চিম) অমিত গয়াল জানিয়েছেন, দীপ্তির দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে সফদরজং হাসপাতালে। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
একটি তদন্তকারী দল বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অমিত।
উল্লেখ্য, কমলা পসন্দের কর্ণধার কমল কিশোর চৌরাসিয়া ‘রাজশ্রী’ নামে একটি পানমশলা সংস্থারও মালিক। ২০২৫ সালের হিসাবে কমল কিশোরের আনুমানিক সম্পত্তির পরিমাণ দেড় থেকে দু’হাজার কোটি। এর মধ্যে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পত্তিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পানমশলা ছাড়াও রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসাতেও উল্লেখযোগ্য ভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন কমল কিশোর। কমপক্ষে ১০টি সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তিনি।