ছিপ নিয়ে যায় ট্রাম্পে

বাঙালি চিরকালই হতভাগ্য। জগদীশ বোসের রেডিয়ো মার্কনিতে ছোঁ মারে, রাধানাথ শিকদারের আবিষ্কার করা পাহাড়চুড়োর নাম হয় এভারেস্ট। এ বারও সেই কেস। এত দিন বাঙালি লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে কোমর বেঁধে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাকী চিল্লিয়ে প্রচুর খিল্লির পাত্র হয়েছে, এখন সেই জিনিসই সুদৃশ্য প্যাকেটে ভরে সিধে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে।

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০৩
Share:

বাঙালি চিরকালই হতভাগ্য। জগদীশ বোসের রেডিয়ো মার্কনিতে ছোঁ মারে, রাধানাথ শিকদারের আবিষ্কার করা পাহাড়চুড়োর নাম হয় এভারেস্ট। এ বারও সেই কেস। এত দিন বাঙালি লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে কোমর বেঁধে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাকী চিল্লিয়ে প্রচুর খিল্লির পাত্র হয়েছে, এখন সেই জিনিসই সুদৃশ্য প্যাকেটে ভরে সিধে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথম প্রতিষ্ঠানবিরোধী (সম্ভাব্য) প্রার্থী হিসেবে বিশ্বরেকর্ড করলেন বামপন্থী বার্নি স্যান্ডার্স। এত দিন তিনি নিয়ম করে ওয়াল স্ট্রিট আর আমেরিকান পুঁজিপতিদের ধুদ্ধুড়ি নেড়ে দিচ্ছিলেন, গ্লোবালাইজেশনের চটকাচ্ছিলেন পিন্ডি। এ বার মধ্যপন্থী হেভিওয়েট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে তিন গোল দিয়ে তিনটি রাজ্যে তুমুল বিজয় হাসিল করার প্রাক্কালে বার্নি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, হিলারি হলেন পার্টি নামক ‘প্রতিষ্ঠান’-এর প্রার্থী এবং তার বিপরীতে তিনি, বার্নি, যা কাণ্ড ঘটাচ্ছেন, তা শুধু শখের প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা নয়, একেবারে দস্তুরমত অভ্যুত্থান।

Advertisement

ডান দিকেও কেস জন্ডিস। অন্য শিবিরের আর এক সম্ভাব্য প্রার্থী, শিল্পপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের তেজ তাঁর নিজের পার্টিই সহ্য করতে পারছে না। যাকে যা খুশি বলেছেন, তাও এক রকম ছিল। কিন্তু নির্বাচনী সফরের এই মধ্যপথে, যেন এক ঘাটে জল খায় কং ও নকশাল, বার্নির পথ অনুসরণ করে ট্রাম্পও ঘোষণা করে দিয়েছেন, তিনিও প্রতিষ্ঠানবিরোধী। আরও জানিয়েছেন, যে, ফ্রি ট্রেড খুব খারাপ জিনিস (পড়ুন শিল্পপতিদের চক্রান্ত), আর তিনি শিল্পমহলের পয়সা না নিয়ে নিজের খরচে প্রচার চালাচ্ছেন বলে ‘প্রতিষ্ঠান’ তাঁর বিরুদ্ধে। ডান ও বাম দিকের এই অভাবনীয় মেলবন্ধনে গ্লোবালইজেশন লাটে ওঠার উপক্রম, ফলত অবধারিত প্যান্ডেমোনিয়াম। অসম্ভব শোনালেও সত্যি, নিজের পার্টির ‘প্রতিষ্ঠান’ই উদ্যোগ নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। এবং সে তরজার যা বিষয়, তাতে দূরবিন দিয়েও ‘রাজনীতি’ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এক দিকে ট্রাম্পের মডেল স্ত্রীর প্রায় নগ্ন ছবি সহ টিভিতে ‘আমেরিকাবাসী ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, আপনারা কি এমনই ফার্স্ট লেডি চান?’ মর্মে বিজ্ঞাপন চলছে। জবাবে ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজের স্ত্রীর ছবি টুইট করে বস্তুত মহিলার সৌন্দর্য নিয়ে কটাক্ষ করছেন। আপামর আমেরিকাবাসী তরজার নামে সার্কাস দেখছে।

বঙ্গবাসীর কাছে এ অবশ্য নতুন জিনিস নয়। নির্বাচন থাক না থাক, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ থেকে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ আমাদের ঐতিহ্য, চড়া গলার খেউড় আয়োজন করে টিআরপি বাড়ানো আমাদের চ্যানেলসমূহের পুরনো আবিষ্কার। কিন্তু যা হয়, বাঙালির আবিষ্কারের কেউ দর দেয় না। খোঁড়াখুঁড়ি করেন রাখালদাস বাঁড়ুজ্যে আর বই লেখেন মার্শাল; আবিষ্কার করেন সত্যেন বসু, তাতে ল্যাজ হয়ে জুড়ে যান আইনস্টাইন। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার স্লোগানে গলা ভাঙার পরেও, মাছ নিয়ে যায় বার্নি, নির্বাচনী তরজা কাকে বলে বার বার দেখিয়ে দিয়েও ছিপ নিয়ে যায় ট্রাম্পে। পোড়া কপাল আর কাকে বলে!

Advertisement

bsaikat@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন