সাত দশকের বহুরূপী

যত দিন ডিসিপ্লিন, তত দিন বহুরূপী। বলেছিলেন দলের প্রথম সভাপতি মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আজও উজ্জ্বল দিকচিহ্ন এই দলের ‘চার অধ্যায়’, ‘রক্তকরবী’ থেকে ‘রাজা অয়দিপাউস’ কিংবা ‘পুতুলখেলা’। আরও একটা জিনিস আবিষ্কার করেছিলাম। শম্ভু মিত্রকে দেখতাম প্রায় উন্মাদের মতো পরিশ্রম করতে।যত দিন ডিসিপ্লিন, তত দিন বহুরূপী। বলেছিলেন দলের প্রথম সভাপতি মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আজও উজ্জ্বল দিকচিহ্ন এই দলের ‘চার অধ্যায়’, ‘রক্তকরবী’ থেকে ‘রাজা অয়দিপাউস’ কিংবা ‘পুতুলখেলা’। আরও একটা জিনিস আবিষ্কার করেছিলাম। শম্ভু মিত্রকে দেখতাম প্রায় উন্মাদের মতো পরিশ্রম করতে।

Advertisement

দেবতোষ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share:

মাঝে একটা দিন। কাল বাদে আগামী পরশুর মে দিবসেই ভারতের প্রথম সঙ্ঘনাট্য বা গ্রুপ থিয়েটার ‘বহুরূপী’ পূর্ণ করতে চলেছে তার সত্তর বছরের ঘটনাবহুল অস্তিত্ব। এ কোনও অতিকথন নয়, কেননা ‘গ্রুপ থিয়েটার’ নামের শব্দবন্ধ যেখানে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল, সেই আমেরিকাতে হ্যারল্ড ক্লারম্যান ও স্টেলা অ্যাডলারের সমনামী সংগঠনের আয়ু মাত্র এক দশকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সত্তর বছর আগে পেশাদারি-ব্যবসায়িক থিয়েটারের বিপ্রতীপে সম্পূর্ণ অন্যধারার এই অপেশাদারি আন্দোলন— যেটা অচিরেই মূলধারার থিয়েটার বলে স্বীকৃত হয়— তা সত্যিই ছিল ঐতিহাসিক। আজ মনে পড়ছে আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ বিজন ভট্টাচার্যকে, চরম দারিদ্রে দীর্ণ হয়ে যিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, অনেক কষ্ট নিয়ে।

Advertisement

কোনও সংগঠনের সত্তরটা বছর তার পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে, তার নিজস্ব ধরনধারণ, কর্মকাণ্ড সব কিছু নিয়ে সুবিশাল, বিপুল। কলম ধরামাত্র ক্যালেইডোস্কোপিক দ্রুততায় সরে যাচ্ছে কত মুখের সারি! মহর্ষি (মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য), শম্ভু মিত্র, গঙ্গাপদ বসু, তৃপ্তি মিত্র, খালেদ চৌধুরী, তাপস সেন, অমর গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক মজুমদার, মহঃ জাকেরিয়া, শোভেন মজুমদার, সবিতাব্রত দত্ত, নির্মল চট্টোপাধ্যায়, অনিল বন্দ্যোপাধ্যায়, গুরুদাস মুখোপাধ্যায়, শিবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ মিত্র, শান্তি দাস, বলাই গুপ্ত, সুনীল সরকার, তারাপদ মুখোপাধ্যায়, অমরনাথ পাঠক, আরতি মৈত্র, লতিকা বসু, রমলা রায়, আরতি কুণ্ডু, নমিতা মজুমদার, চিত্তরঞ্জন ঘোষ, পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম বসু। যাঁরা পাশে আছেন এখনও, সেই শাঁওলী মিত্র, কালীপ্রসাদ ঘোষ, সমীর চক্রবর্তী, মুকুন্দ দাস— তাঁদের কথা স্বতোৎসারিত ভাবেই মনে ভেসে আসছে।

লেবেদেফ, গোলোকনাথ ডোমটোলার কূটকচালি এড়িয়ে প্রকৃতপক্ষে বাংলা থিয়েটারের সূত্রপাত গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির হাতে। সেটা উনিশ শতকের সত্তরের দশক। তার পর পিতৃমুখী প্রতিভা দানীবাবুকে (সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ) পেরিয়ে আরও বছর পঞ্চাশেক পরে আমাদের থিয়েটার যথার্থ নতুন ও আধুনিক রূপ নিল আর এক যুগন্ধর নাট্যপুরুষ শিশিরকুমার ভাদুড়ীর হাতে। অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে থিয়েটারে এসে, কিছু দিনের মধ্যে যোগেশ চৌধুরীর ‘সীতা’ প্রযোজনা করে তিনি আমাদের নাট্য-ইতিহাসে প্রথম সক্ষম ও সার্থক প্রযোজনার স্বীকৃতি ও আপামর জনসাধারণের আদর পেয়েছেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও ছিলেন শিশিরকুমারের গুণমুগ্ধ; নিজের দু-একটি নাটক তাঁকে প্রযোজনার্থে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১৩ ভাদ্র ‘নাচঘর’ পত্রিকা লিখছে: ‘‘রসিক সমাজকে আজ আমরা আর একটি আনন্দ সংবাদ দিতে চাই। রবীন্দ্রনাথের বিশেষ অনুগ্রহে তাঁর নূতন ও অপূর্ব নাটক ‘রক্তকরবী’ অভিনয় করবার অধিকার (শিশিরকুমার) পেয়েছেন।... এ শ্রেণীর নাটক বাংলা রঙ্গালয়ে আর কখনো অভিনীত হয়নি এবং শীঘ্র হ’তও কিনা সন্দেহ, কারণ প্রকাশ্য রঙ্গালয়ে এখন এরকম নাটক অভিনয় করে সফল হবার শক্তি, সাহস ও প্রতিভা আছে, একমাত্র শিশিরকুমারেরই। পরন্তু ‘রক্তকরবী’র অভিনয়েও শিশিরকুমার যদি তাঁর অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন, তবে বাংলার নাট্যজগতে যথার্থই নবযুগের প্রবর্তন হবে। আমরা সাগ্রহে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় রইলুম।’’

Advertisement

সেই মাহেন্দ্রক্ষণ তখন আসেনি, এসেছিল তিরিশ বছর পরে আর এক জন মানুষের হাতে। তিনি শম্ভু মিত্র, ‘বহুরূপী’র স্রষ্টা। ‘বহুরূপী’র প্রথম তিরিশ বছর শম্ভু মিত্রের প্রযোজনাধন্য, এবং শুরুর প্রথম বারো বছর সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ১১এ নাসিরুদ্দিন রোডে তাঁর নিজস্ব ফ্ল্যাট। তার পর সাত-আট বছর তৃপ্তি মিত্র সংগঠন চালু রাখার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ২০-২২ বছর কুমার রায়ের হাতে ছিল দল। এই সময়ের অসামান্য কাজ ‘মৃচ্ছকটিক’, ‘রাজদর্শন’ ইত্যাদি। তাঁর হাত থেকে সরে আসার পর, আজ পর্যন্ত কিছু আনকোরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে বহুরূপী চলছে, চলছে খ্যাতিমান অভিনেতা দেবেশ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে, শম্ভু মিত্রের দেখানো পথে।

দুজনে: ‘চার অধ্যায়’ নাটকের দৃশ্যে

শুরুর সেই তিরিশটা বছর একটা পর্বতমালার মতো, যার বেশ কতকগুলি শৃঙ্গ নিয়ে আমাদের অহঙ্কার। ‘ছেঁড়াতার’, ‘চার অধ্যায়’, ‘দশচক্র’, ‘রক্তকরবী’, ‘পুতুলখেলা’, ‘রাজা’ আর ‘রাজা অয়দিপাউস’, ‘বাকি ইতিহাস’ ইত্যাদি প্রযোজনা একটা দলের প্রযোজনা-তালিকায়— এটা বেশ শ্লাঘার বিষয়।

‘বহুরূপী’র একটা বিশেষ প্রযোজনার কথা এখানে বলতেই হয়। তৃপ্তি মিত্রের একক অভিনয়ধন্য ‘অপরাজিতা’। ’৭১ সালে আমরা যখন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের প্রথম নাটক, বাদল সরকারের ‘পাগলা ঘোড়া’র অভাবিত সাফল্যের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছি, তখন নতুন নাট্যকার নীতীশ সেনের প্রায় নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি এই ‘অপরাজিতা’ অনাদরে অবহেলায় কলামন্দিরের বেসমেন্টে ৭ সেপ্টেম্বর ’৭১ প্রথম অভিনীত হয়েছিল। অচিরেই বোঝা গিয়েছিল, এ নাটক এক বিস্ময়। দু’ঘণ্টা ১০-১২ মিনিটের এই প্রযোজনা অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল।

এ বার শম্ভু মিত্র। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকার পর সেন্ট জেভিয়ার্সে সামান্য ক’দিন কাটিয়ে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন। তাঁর নিজের কথায়: ‘ঐ কলেজে পড়াটা ছেড়ে আমার নিজের খুব ভালো লাগল। কারণ আমি তখন সুযোগ পেলাম অন্য কতোরকম জিনিস পড়বার।...অনেক বিলিতি নাটকও পড়তে শুরু করলাম।... এতো মানে আছে এই সব নাটকের, এতো গভীর কথা বলা যায়, সেই সমস্তর জন্যে আরও ভীষণ আকর্ষণ বাড়তে লাগলো। তারপর আমি কলকাতা থেকে চ’লে গিয়েছিলুম।’ চলে গিয়েছিলেন অবসৃত পিতার কাছে। বছর দেড়েক পরে ফেরেন কলকাতায়। ওঁর নিজের কথায়: ‘...হয়েছিলো একটা ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করবার। কেমন ক’রে জানি না অভিনয় খুব ভালো লাগতো। এবং আরো মজা হচ্ছে যে সাধারণভাবে বাইরে এইসব মঞ্চে অভিনয় দেখা বারণ ছিলো।... আমি ঐ শ্যামবাজারের পাড়ায় মঞ্চে গিয়ে অভিনয় দেখেছি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করবার পর যখন কলেজে ঢুকেছি, তখন এবং সেও বাবাকে লুকিয়ে। তখনই প্রথম অভিনয়ে দেখলাম ইনি শিশিরবাবু, ইনি অমুক...।’ কলকাতায় এসে উঠলেন বয়োজ্যেষ্ঠ জ্যোতিনাথ ঘোষের বাড়িতে। তাঁরই স্নেহে প্রশ্রয়ে বাড়ির সবচেয়ে ভাল ঘরে থেকে, তোফা খেয়ে, পড়াশোনা, শরীরচর্চা, গলা সাধা (এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশীদের মন্তব্য, ওদের বাড়ির ছেলেটাকে কুকুরে কামড়েছে) নিয়ে বেশ দিন কাটছিল। এক ভদ্রলোকের কথায় গেলেন শ্যামবাজারের থিয়েটার পাড়ায়। প্রথমে রঙমহলে, সেখান থেকে মিনার্ভায়, তার পর নাট্যনিকেতনে এবং পরিবর্তিত নাট্যনিকেতন অর্থাৎ শ্রীরঙ্গমে। পরে শ্রীরঙ্গম ছেড়ে অল্প কিছু দিনের জন্যে যোগ দেন কালীপ্রসাদ ঘোষের ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার দলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই সময়ে শিশিরকুমার, অহীন্দ্র চৌধুরী, নরেশ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, প্রভা দেবী, ভূমেন রায় প্রমুখ বিরাট সব শিল্পী থাকা সত্ত্বেও বাংলার থিয়েটারে তখন নাভিশ্বাস উঠেছে। ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার ছাড়ার সামান্য কিছু দিনের মধ্যেই ‘ফ্যাসিবিরোধী শিল্পী সংগঠন’-এর গুটি কেটে বেরোনো ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের পক্ষ থেকে বিনয় ঘোষ ও বিজন ভট্টাচার্য শম্ভু মিত্রকে গণনাট্যে শামিল করেন। গণনাট্য সঙ্ঘেই বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’-এর পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত ‘জবানবন্দী’-র বিশাল সফলতায় ‌উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করতে ‘জবানবন্দী’কে নিয়ে যাওয়া হল বোম্বে, হিন্দি ‘অন্তিম অভিলাষা’ রূপে। ‘অন্তিম অভিলাষা’-র জয়জয়কার হল সেখানে। এর সুবাদেই তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান সম্পাদক পি সি যোশী শম্ভু মিত্রকে গণনাট্যের সেন্ট্রাল স্কোয়াডের দায়িত্ব নিতে বলেন, কিন্তু শম্ভু মিত্র অক্ষমতা জানান— কলকাতায় তাঁর বিশেষ কাজ আছে। আজ সকলেই জানেন, সেই বিশেষ কাজটি হল ‘নবান্ন’। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার প্রথম অধ্যক্ষ সতু সেনের জীবনাবসানের পরে শম্ভু মিত্রকে সেই দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করা হলে তিনি তাও প্রত্যাখ্যান করেন এই কথা বলে যে তাঁর কাজ বাংলা থিয়েটারে। ১৯৪৪ সালের এই ‘নবান্ন’ নাটক বাংলা থিয়েটারের একটা মাইলফলক। নাটক বিজন ভট্টাচার্যের, নির্দেশনা ছিল নাট্যকার ও শম্ভু মিত্রের যৌথ দায়িত্বে। খালেদ চৌধুরীর মুখে শুনেছি, ‘নবান্ন’র প্রথম পাঠে সময় লেগেছিল চার ঘণ্টা, পরে শম্ভু মিত্রের নিপুণ সম্পাদনায় তা অভিনয়যোগ্য সময়ের পরিধিতে আসে।

শম্ভু মিত্র মৌলবাদী রাজনীতির চাপে বিরক্ত হয়ে গণনাট্য ছেড়ে আসেন ১৯৪৮-এর জানুয়ারির শুরুতে। ওই বছরের মাঝামাঝিই গোড়াপত্তন হয় ‘বহুরূপী’-র (তখনও নামকরণ হয়নি)। আজ সত্তর বছর পূর্তির লগ্নে মনে আসছে সেই মানুষগুলির নাম: কলিম শরাফি (বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ক, কিছু দিনের মধ্যেই যিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান), অমর গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক মজুমদার ও মহঃ জাকেরিয়া (এঁরা ছিলেন একই অফিসের সহকর্মী), শোভেন মজুমদার (সম্পর্কে তৃপ্তি মিত্রের ভাই), অরীন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় (পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চপদাধিকারী), স্মৃতি ও মুক্তি ভাদুড়ী (তৃপ্তি মিত্রের সহোদরা দু’জন)। আর পুরনোদের মধ্যে শম্ভু মিত্রের গণনাট্যের সঙ্গী মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিজন ভট্টাচার্য, গঙ্গাপদ বসু, রবীন্দ্র মজুমদার, সত্যজীবন ভট্টাচার্য, জলদ চট্টোপাধ্যায়, মহঃ ইস্রায়েল, ললিতা বিশ্বাস ও তৃপ্তি মিত্র। মহর্ষির সূত্রেই এসেছিলেন কালী সরকার, বিজন ভট্টাচার্য এনেছিলেন ঋত্বিক ঘটককে এবং ঋত্বিকের সূত্রে এসেছিলেন কুমার রায়।

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের ‘মহর্ষি’ নামকরণ করেছিলেন শিশিরকুমার, ‘সীতা’ প্রযোজনার সূত্রে। ঢাকা বিক্রমপুরের এই মানুষটি নিতান্ত মামুলি মানুষ ছিলেন না। তাঁর মেধা, নাট্যানুরাগ, সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবের জীবন, তার পর আবার সংসদীয় রাজনীতির দিকে মুখ ফেরানো, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সাহচর্য ইত্যাদি তাঁকে ভিন্ন এক মানুষ তৈরি করেছিল। শম্ভু মিত্র তাঁকে পেশাদারি থিয়েটারে পেয়েছিলেন। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও দু’জনেই যুক্ত হয়েছিলেন গণনাট্যে। ‘বহুরূপী’ প্রতিষ্ঠার পরে তিনি শুধু প্রথম পাঁচ বছরের সভাপতিই ছিলেন না, পুরনো বটগাছের মতো দলকে আগলে রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন শম্ভু মিত্রের ফ্রেন্ড, ফিলসফার ও গাইড। ১৯৫০-এ তাঁরই কথামতো দলের নাম হয় ‘বহুরূপী’। তাঁরই উচ্চারিত নিদান ‘যত দিন ডিসিপ্লিন তত দিন বহুরূপী’। আবার স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘যদি থিয়েটার করতে গিয়ে ভদ্রলোক থাকা না যায় তো থিয়েটার করা ছেড়ে দেব কেননা সমাজে ভদ্রলোকের প্রয়োজন বেশি।’’ তাঁরই পরামর্শে স্থির হয়েছিল, দলের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হতে হবে, সংখ্যার গুরুত্বে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। ১৯৫৪-র জানুয়ারিতে তাঁর প্রয়াণে দ্বিতীয় বার পিতৃবিয়োগের কষ্ট পেয়েছিলেন শম্ভু মিত্র।

শুরু করার মতো মানুষজন তো পাওয়া গেল, কিন্তু মনের মতো নতুন নাটক কই! অগত্যা অশোক মজুমদার ও সম্প্রদায়-এর নামে তিন রাত্তির— ১৩, ১৪ ও ১৬ অক্টোবর ১৯৪৮— রঙমহলে পুরনো ‘নবান্ন’র অভিনয় হল। আগের সেই ঐতিহাসিক প্রযোজনার চারুপ্রকাশ ঘোষের জায়গায় মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুধী প্রধানের বদলি কালী সরকার, তৃপ্তি মিত্র নিজের পুরনো চরিত্রের বদলে শোভা সেনের জায়গায় আর তাঁর পুরনো চরিত্রে দেখা গেল সহোদরা মুক্তি গোস্বামীকে। বিজন ভট্টাচার্য এই প্রযোজনায় প্রথম ও শেষবার যুক্ত ছিলেন নিজের পুরনো চরিত্রে। অনেক চেষ্টাচরিত্র করেও বেশ কিছু আর্থিক ঘাটতি থেকে গেল যেটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ক্ষতি বলে মেনে নেওয়া হয়।

এই সময়ে শোনা গেল তুলসী লাহিড়ী একটা নাটক লিখেছেন, দলের বেশি বয়সিদের অনেকেরই ভাল লেগেছে। সেইমতো একটা রবিবার নাটকটা পড়া হল। নাম ‘পথিক’। কিন্তু অল্পবয়সিদের ও তাদের নেতার তেমন ভাল লাগেনি। আরও ঘষামাজা দরকার।

নাটকীয়: ইবসেনের ‘অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল’ অবলম্বনে তৈরি ‘দশচক্র’ নাটকের দৃশ্য

ক’জন মানুষ তখন নিত্য যাতায়াত করছেন নাসিরুদ্দিন রোডের ফ্ল্যাটে। শুরু হল আবৃত্তির চর্চা। আবৃত্তি একক, দ্বৈত ও সমবেত কণ্ঠে। বহুরূপীর মানুষজন ছাড়াও তিনটি মেয়ের— প্রবোধ মিত্রের মেয়ে সুলেখা (পরবর্তী কালে অশোক সেনের স্ত্রী) আর জ্যোতিনাথ ঘোষের দুই মেয়ে প্রভাতী আর ভারতীর— বেশ বড় ভূমিকা ছিল। নানা জায়গায় আবৃত্তির অনুষ্ঠানগুলি সুখ্যাতি কুড়িয়েছিল সেই দিনগুলোয়। তুলসীবাবুর সংশোধিত ‘পথিক’ সামান্য পরিমার্জনা করে নিয়ে মহলা শুরু হল। ‘নবান্ন’র প্রায় এক বছর পরে, রেলওয়ে ম্যানসন ইনস্টিটিউটে ১৬ অক্টোবর ১৯৪৯ নতুন দলের নতুন নাটক ‘পথিক’ মঞ্চস্থ হল। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে বেঁচেছিল তিনশো টাকা— প্রথম মূলধন। পরে এই প্রযোজনাকে চলচ্চিত্রায়িত করেন দেবকীকুমার বসু। ১৯৫০-এই বহুরূপীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। অনুগ্রাহক সভ্য প্রথা চালু করা হল। উৎসাহী মানুষজন ইচ্ছে করলে বার্ষিক ছ’টাকা দিয়ে অনুগ্রাহক হয়ে নাটকের প্রথম প্রযোজনা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখতে পারেন এবং সরাসরি নিজের মতামত জানাতে পারেন। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, পরবর্তী প্রযোজনা থেকেই প্রতিষ্ঠিতদের সঙ্গে নতুন মুখদের প্রকাশ্যে আনতে হবে।

১৯৫০-এর ১২ অগস্ট রেলওয়ে ম্যানসন ইন্সটিটিউটে ‘শ্রীসঞ্জীব’ ছদ্মনামে শম্ভু মিত্রের লেখা নাটক ‘উলুখাগড়া’ মঞ্চস্থ হল। বেশ আদৃত হল নাটকটি। আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছিল, ‘‘সম্পূর্ণ নূতন ধরনের নাট্যখানি... এক কু-চরিত্র ব্যক্তির ভূমিকায় গঙ্গাপদ বসু, এক অর্দ্ধবিকৃতমস্তিষ্ক মহিলার ভূমিকায় শ্রীমতী তৃপ্তি মিত্র এবং উদ্ভট চরিত্র যুবকের ভূমিকায় শম্ভু মিত্র প্রথম শ্রেণীর অভিনয় করেন।’’

তৎকালীন বাংলা রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে এর পরে বড় ঘটনা, ’৫০-এর শেষ ও ’৫১-র গোড়াতে ‘পথিক’, ‘উলুখাগড়া’ ও ‘ছেঁড়াতার’ নাটক নিয়ে প্রথম নাট্যোৎসবের আয়োজন— নিউ এম্পায়ারে পরপর ছ’টি রবিবার সকালে। উত্তরবঙ্গের পটভূমিকায় এক কৃষক পরিবারের ঘটনা নিয়ে লেখা তুলসী লাহিড়ির লেখা নাটক ‘ছেঁড়াতার’ প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৭ ডিসেম্বর ১৯৫০-এ। এই নাটকের খ্যাতি ‘বহুরূপী’র কাছেও নতুন। প্রবীণ নাট্যরসিক হেমেন্দ্রকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘এই নাট্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শিল্পীগণ যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় দিয়েছেন তার মধ্যে পেয়েছি ভবিষ্যতের আশার ইঙ্গিত।’ অন্নদাশঙ্কর রায় লেখেন, ‘যদি এক হাজার লোক একশো টাকা করে দেয় কিংবা একশো লোক এক হাজার করে টাকা দেয় তা হলেই বহুরূপীর অভিনয়ের জন্য একটা মঞ্চ তৈরী করা যেতে পারে।’ ‘ছেঁড়াতার’ নতুন ভাবে মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৯৬৫-র ফেব্রুয়ারিতে।

এর পরে ১৯৫১-র প্রয়োজনা ‘চার অধ্যায়’— ‘বহুরূপী’র প্রথম রবীন্দ্রনাথ। দুরন্ত এই নাট্যাভিনয়ের জুড়ি বাংলা থিয়েটারে নেই। তবে শম্ভু মিত্রকে আমি ইন্দ্রনাথ করতে দেখিনি। আমি তাঁকে আর তৃপ্তি মিত্রকে অতীন ও এলা হিসেবেই বরাবর দেখে আসছি সেই ১৯৫৩ থেকে। আমার প্রথম দেখা ‘ইন্দ্রনাথ’ ছিলেন মহর্ষি, আর বটু চরিত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক ও অদ্বিতীয় শোভেন মজুমদার। চার অধ্যায়ের প্রথম অভিনয় ২১ অগস্ট ১৯৫১ শ্রীরঙ্গমে, শেষ অভিনয় রবীন্দ্রসদনে ’৭৮-এর ১২ ফেব্রুয়ারি।

এ বারে ‘বহুরূপী’র প্রথম ইবসেন। ‘অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল’-এর শান্তি বসু কৃত বাংলা রূপান্তর ‘দশচক্র’ প্রয়োজিত হয় দু’বার, ১৯৫২ ও ’৬২তে। নির্দেশনা ও প্রধান চরিত্রে ছিলেন শম্ভু মিত্র। শম্ভু মিত্রের সঙ্গে বড় ভাইয়ের ভূমিকায় অমর গঙ্গোপাধ্যায়ের অসাধারণ সঙ্গত। আর সভার দৃশ্যটি চমৎকার আজও চোখ থেকে মুছে যায়নি।

এর পরে শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা, রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’— ১০ মে, রেলওয়ে ম্যানসন ইন্সটিটিউটে। প্রথম অভিনয়ের পরই শোনা গিয়েছিল, ‘বহুরূপী’ রবীন্দ্রনাথ থেকে অনেকখানি সরে এসেছে, এমনকী নাটককে বিকৃত করা হয়েছে বলেও শোনা গিয়েছিল। দ্বিতীয় অভিনয়ের শেষে রটে যায়, বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ড হয়তো এ প্রযোজনা আর করতে দেবে না। পরে প্রচুর গুণী, বুঝদার মানুষের প্রয়াসে ‘রক্তকরবী’র গোলমাল বন্ধ হয়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, খালেদ চৌধুরী না থাকলে ‘রক্তকরবী’ মঞ্চস্থ করা যেত না। অসম্ভব গুণী এই মানুষটির করা বহুমাত্রিক মঞ্চসজ্জা আজ পর্যন্ত অনতিক্রম্য। তাঁর অভিনব আবহ সঙ্গীত, সামান্য দু-একটি যন্ত্রের সাহায্যে সঙ্গীত পরিচালনা এক নতুন পরিবেশ তৈরি করেছিল। তাপস সেন খুব সংবেদী ও মায়াবী আলোয় ‘রক্তকরবী’কে দৃশ্যমান করেছিলেন। শম্ভু মিত্রের নিপুণ নির্দেশনা এবং নন্দিনী (তৃপ্তি মিত্র), সর্দার (অমর গঙ্গোপাধ্যায়) গোঁসাই (কুমার রায়) অধ্যাপক (গঙ্গাপদ বসু), এঁদের সকলের সম্মিলিত অভিনয় দেখে ‘দেশ’ লিখেছিল ‘স্মরণকালের মধ্যে এমন প্রযোজনা বাংলা মঞ্চে দেখা যায়নি।’ কে না প্রশংসায় কলম ধরেননি! গোপাল হালদার, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, উৎপল দত্ত, আরও কত সব বিখ্যাত মানুষ! দিল্লির সপ্রু হাউসে আয়োজিত প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবে শ্রেষ্ঠত্বের জয়মাল্য জোটে ‘রক্তকরবী’র কপালে। তার পর ১৯৫৬-তে বোম্বের ওয়ার্ল্ড থিয়েটার কনফারেন্সে আবার জয়জয়কার। ‘বহুরূপী’র জয়যাত্রা শেষ হয়েছিল ২৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে।

১৯৫৫-য় শুরু হয় ‘বহুরূপী’ পত্রিকা। খালেদ চৌধুরীর অনবদ্য প্রচ্ছদে তারাভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত সেই পত্রিকা আজও প্রকাশিত হয়ে চলেছে। পরবর্তী সম্পাদক ছিলেন গঙ্গাপদ বসু, শম্ভু মিত্র, কুমার রায়, চিত্ররঞ্জন ঘোষ, তার পর প্রভাত কুমার দাসের হাতে প্রকাশিত হয়ে চলেছে এই পত্রিকা। প্রচ্ছদশিল্পীদের মধ্যে দুটি নাম উল্লেখযোগ্য, খালেদ চৌধুরী ও পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়। বাদল সরকারের ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ ও শম্ভু মিত্রের ‘চাঁদ বণিকের পালা’— আমরা পেয়েছি এই নাট্যপত্রে। ১৯৫৭-র মার্চে বহুরূপী প্রথম ঢাকা যায় ‘রক্তকরবী’ আর ‘ছেঁড়াতার’ নিয়ে। পরে আর এক বার, শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে সত্তরের দশকে ‘বহুরূপী’ ঢাকা গিয়েছিল ‘পাগলা ঘোড়া’ আর ‘অপরাজিতা’ নিয়ে। সেই সময়কার সফলতা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন, এর পরে এক মাস ধরে বাংলাদেশের চারটি জায়গায় ‘বহুরূপী’ নাট্যোৎসব করা হবে। সে আর হয়ে ওঠেনি কেননা মুজিব নিজেই পাড়ি দিয়েছিলেন দূর অজানায়। তবে ‘বহুরূপী’ পরে আবার বাংলাদেশে গিয়েছে।

রবীন্দ্র শতবার্ষিকীর প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘বহুরূপী’কে রাশিয়ায় পাঠাবেন, এমনটা শুনেছিলাম। কিন্তু শম্ভু মিত্রের মস্কো, চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া ও পোল্যান্ড সফরের পরে ‘চারটি দেশের থিয়েটার’ নিয়ে তাঁর লেখায় মস্কো বাদ দিয়ে অন্য তিনটি দেশের প্রশংসার তারতম্যের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার এ সদিচ্ছা থেকে বিরত হন। পরে সোনালি রোসেলিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করেছিলেন ‘বহুরূপী’কে নিয়ে যাওয়ার, সেটাও ফলপ্রসূ হয়নি।

১৯৫৮-র ১০ ফেব্রুয়ারি ‘বহুরূপী’র ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এক দিন যে নাটক ইউরোপকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছিল, ইবসেনের সেই ‘আ ডলস হাউস’ শম্ভু মিত্রের হাতে হয়ে উঠল ‘পুতুলখেলা’। তারই প্রথম অভিনয় হয়েছিল সে দিন। খালেদ চৌধুরীর মধ্যবিত্তের গৃহসজ্জা, তাপস সেনের আলো, শম্ভু মিত্রের নির্দেশনা আর তৃপ্তি মিত্র-শম্ভু মিত্র-কুমার রায়-আরতি মৈত্রের অভিনয়ে ‘পুতুলখেলা’ এক অনুপম প্রযোজনা। লন্ডনের মঞ্চস্থপতি হার্বাট মার্শাল ১৯৬২-তে ‘প্লেজ অ্যান্ড প্লেয়ার্স’ পত্রিকায় এই নাটককে মস্কো আর্ট থিয়েটারের প্রযোজনার চেয়েও জীবন্ত মনে করেছিলেন।

১৯৫৯-এর ডিসেম্বরে নিউ এম্পায়ারে আবার হল ‘মুক্তধারা’, এবং এ বারও অসফল। এ বারের ব্যর্থতার পরে শম্ভু মিত্রের মন্তব্য ছিল, বাংলা থিয়েটারের জীবিত ও মৃত সব অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করলে ‘মুক্তধারা’ হয়তো সফল হতে পারে। ১৯৬১-তে হল ‘কাঞ্চনরঙ্গ’ আর রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’। ‘বিসর্জন’ করে সফলতা পাননি শিশিরকুমার, শম্ভু মিত্রের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রইল। ‘বিসর্জন’ প্রথম অভিনীত হয়েছিল দিল্লিতে, ১৯৬১-র ১১ নভেম্বর।

নিউ এম্পায়ারে ১৯৬১-র ১২-১৮ জুন পাঁচটি জনাদৃত নাটক ও দুটি নতুন নাটক নিয়ে হল ‘বহুরূপী’র দ্বিতীয় নাট্যোৎসব। নতুন নাটকদুটি— শম্ভু মিত্রের অনুবাদে সোফোক্লেসের ‘রাজা অয়দিপাউস’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’। এই নাট্যোৎসবে শম্ভু মিত্রকে উন্মাদের মতো পরিশ্রম করতে দেখেছি। এত পরিশ্রমের সুফলও হাতে হাতেই পাওয়া গিয়েছিল। দেড় ঘণ্টার নাটক ‘রাজা অয়দিপাউস’-এর তো জবাব নেই, আর ‘রাজা’ একেবারে অন্যধারার নাটক। ১৯৬৬-র ইস্ট-ওয়েস্ট থিয়েটার সেমিনারে যাওয়ার সময়ে শম্ভু মিত্র আরও এক বার ‘রাজা’র কাটাকুটি করলেন। আরও নতুন গান যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু যত দিন না শাঁওলী মিত্র সুরঙ্গমার চরিত্রে আসেন, ‘রাজা’ তার সম্পূর্ণ সার্থকতা পায়নি।

শম্ভু মিত্রের শেষ বড় কাজ— বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’— ১৯৬৭-তে। সাফল্যের স্বাদ পেয়েছিল। তিনটি ভিন্নধর্মী চরিত্রে তৃপ্তি মিত্র ও কুমার রায়ের অপূর্ব অভিনয়ে মঞ্চসফল হয়েছিল এই নাটক। ‘বহুরূপী’ সত্তর বছরের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলির তালিকায় জ্বলজ্বল করবে ‘বাকি ইতিহাস’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন