জানেন, এই মেয়েটি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় হতে চায়,’ মৃণাল চক্রবর্তী এক দিন এ ভাবেই শুরু করলেন। সঙ্গে এক জন উঠতি শিল্পী। সুধীন দাশগুপ্তকে উদ্দেশ্য করে শিল্পীর নামে বেশ প্রশংসাই করলেন তিনি। মেয়েটি নাকি দুর্দান্ত গাইছে। মূলত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানই গায়, কিন্তু ঠিকঠাক চললে এক দিন নামজাদা হয়ে উঠবে নিশ্চয়ই। নামজাদা হয়েছিলেন সে দিনের সেই শিল্পী, গুরু বলে মেনেছিলেন সুধীন দাশগুপ্তকে।
এক বার দুর্গাপুরে অনুষ্ঠানে। মাঝরাতে গাড়ি করে কর্তা-গিন্নি অনুষ্ঠান সেরে ফিরছেন, হরিশ মুখার্জি রোডের ভাড়াবাড়ির সামনে এসে গিন্নি আবিষ্কার করলেন, বাড়ির দুটি চাবির একটি খুঁজে পাচ্ছেন না। অন্য চাবিটা পরিচারিকার কাছে দেওয়া, তার বাড়ি ফিরতে ফিরতে সকাল দশটা বাজবে, অগত্যা উপায় না দেখে সারা রাত বাড়ির সামনে গাড়িতে বসেই কাটালেন শিল্পী। পর দিন সকালে গানের ক্লাসে সুধীন দাশগুপ্তকে এ গল্প শোনাতেই সুধীনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হারিয়েছ? চাবি? তা কীসের চাবি?’ উত্তর শুনে প্রায় মুখে মুখেই এই গল্প থেকে সুধীন দাশগুপ্ত বানিয়ে দিলেন অনবদ্য এক সুর, তৈরি হল ‘ছি ছি এ কী কাণ্ড করেছি/ আমি সুখের ঘরের চাবিটাকে হারিয়ে ফেলেছি’-র মতো কালজয়ী গান।
ভাগ্যিস সে দিন মৃণাল চক্রবর্তী সুধীন দাশগুপ্তকে যাওয়ার আগে একটা কথা বলে গিয়েছিলেন! ‘মেয়েটা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো নাম করতে চায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় হতে চায়, আপনি ওকে ওর নিজের নামেই চেনান, ওকে বনশ্রী সেনগুপ্ত-ই বানিয়ে দিন।’