ছ য়শো বছর আগে মারা গিয়েছেন, তবু তাঁকে নিয়ে আজও হইচই। এক খঞ্জ, নিষ্ঠুর লোকের নামে সেফ-করিনার ছেলের নাম!
উজবেকিস্তানের চাগতাই পাহাড়ের সন্তান, প্রবল বীর। সেখান থেকেই কখনও দিল্লি, কখনও তুরস্ক বা রাশিয়া। চিনে অভিযান করতে গিয়ে মাঝপথে মৃত্যু। কিন্তু তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তন আলেকজান্দার, নেপোলিয়নকেও ছাপিয়ে যায়।
তাঁর সমাধি আজও উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরে। কিন্তু মাঝে ঘটে গিয়েছিল অন্য ঘটনা।
১৯৪১। উজবেকিস্তান তখন সোভিয়েত শাসনে। ১৯ জুন রাতে কবর খুঁড়ে শরীরটিকে বের করে আনলেন তিন রুশ বিজ্ঞানী। কঙ্কাল পরীক্ষা করে দেখা গেল, লোকটা ছিল প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা। বুকের ছাতি দশাসই। এ দিকে ডান পায়ের উরুতে স্পষ্ট বাঁধনের দাগ, লোকটা খুঁড়িয়ে হাঁটত।
অভিশাপ অবশ্য খুঁড়িয়ে হাঁটেনি। তৈমুরের সমাধিতে নাকি লেখা ছিল, ‘মৃতদের মধ্য থেকে যখন জেগে উঠব, দুনিয়া ভয়ে কাঁপবে।’ রুশ বিজ্ঞানীরা সমাধি ঘাঁটতে গিয়ে দেখলেন, দেহটা যে কফিনে রাখা, তার ওপর জ্বলজ্বল করছে আর একটি সতর্কবার্তা: ‘এই বাক্স যারা খুলবে, আমার চেয়েও নিষ্ঠুর আক্রমণকারীর পাল্লায় পড়বে।’ ঘটনাচক্রে, সমরখন্দে এই কবর খোঁড়ার তিন দিনের মধ্যে সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করলেন হিটলার। এক বছরের মধ্যে, ১৯৪২ সালে দেহটি ফের যথাস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হল। কয়েক দিন পর স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে হিটলার পরাস্ত। মানুষ ঠেকে শিখেছে, কবরে থাকা তৈমুরকে ঘাঁটালেও সর্বনাশ!
ব্ল্যাক ম্যাজিকের এই চেনা কাহিনিতেই কি নেই পৃথিবীর এক প্রধান শিক্ষা? তৈমুর লঙ অত্যাচারী লুঠেরা ঠিকই, কিন্তু বেছে বেছে অন্য ধর্মের লোকদের ওপর অত্যাচার করেননি। যে তৈমুর লঙকে আজকের ভারত হিন্দুবিদ্বেষী হিসেবে দেখে, তুরস্ক আক্রমণের পর ইউরোপের খ্রিস্টান রাজারাই সেই তৈমুরকে অভিবাদন জানাচ্ছেন। তৈমুর নিজে মুসলমান, কিন্তু লুঠ করছেন খলিফার তুরস্ক। ইউরোপ ভাবল, এতে সুবিধাই হল। ‘ক্রুসেড’-এ তৈমুর তাদের এগিয়ে দিলেন।
এ-হেন নিষ্ঠুর তৈমুর ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ চার্লসকে লিখছেন, ‘বণিকদের পাঠান।’ স্পেনের দূতকে: ‘তোমাদের রাজাকে আমি ছেলের মতো ভালবাসি।’
চাগতাই পাহাড়ের সন্তান এ রকমই। এক দিকে তরবারির আঘাতে শহর উজাড় করে দেওয়া, অন্য দিকে নিজের চেষ্টায় তিনটি ভাষা শেখা। মোঙ্গল পূর্বপুরুষ চেঙ্গিজ খানের মতো তৈমুরও আড়ালে থেকে তাঁর সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চান।
তাই নেপোলিয়ন বা উত্তরপুরুষ বাবরের মতো, তৈমুর কখনও সম্রাট উপাধি নেননি। শুধুই আমির তৈমুর। কিন্তু ঘাঁটালেই সর্বনাশ। মৃত্যুর পরও!