রবিবারে শুধু আলুসেদ্ধ

আমার প্রেম করে বিয়ে। বিয়ের আগে বেশ কয়েক বার পলাশের বাড়ি গেছি। পলাশের মা স্কুল টিচার। প্রথম দিনই বলেছিলেন, ‘শোন, বিয়ের পর চুটিয়ে জিন‌্স-স্কার্ট পরবি। আমি কিন্তু একদম ওই ন্যাকা শাশুড়িদের মতো নই।’ বাড়ি গেলেই নিজে রান্না করে খাওয়াতেন। আমি আবার একদম চিকেন খেতে পারি না।

Advertisement

স্মিতা ধর

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share:

আমার প্রেম করে বিয়ে। বিয়ের আগে বেশ কয়েক বার পলাশের বাড়ি গেছি। পলাশের মা স্কুল টিচার। প্রথম দিনই বলেছিলেন, ‘শোন, বিয়ের পর চুটিয়ে জিন‌্স-স্কার্ট পরবি। আমি কিন্তু একদম ওই ন্যাকা শাশুড়িদের মতো নই।’ বাড়ি গেলেই নিজে রান্না করে খাওয়াতেন। আমি আবার একদম চিকেন খেতে পারি না। বিশ্রী লাগে। উনি খুব বকতেন। বলতেন, ‘বেশি রেড মিট খেলে ফিগারের বারোটা বাজবে। আর হার্টের যদি কিছু হয়? আমি চাই না এমন সোনা মেয়েটার কিছু খারাপ হোক।’ আমি অমনি একটা চুমু খেয়ে বলতাম, ‘প্লিজ মামণি, তুমি মাছ-ডিম যা খুশি দাও। শুধু ওই চিকেনটা দিয়ো না।’

Advertisement

বিয়ে হল। স্বপ্নের মতো কাটছিল দিনগুলো। এত ভাল শাশুড়ি কারও হয়? দিন পনেরো পর পলাশ সবাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গেল। আমি একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। মামণিই সমস্ত অর্ডার দিয়েছে। একটু খারাপ লাগল। মামণি আমাকে এক বার জিগ্যেস করল না তো! খাবার এল। অবাক হয়ে দেখলাম, সমস্ত পদ চিকেনের। অন্য কিচ্ছু নেই। এমনকী নিরামিষ কোনও পদও না। চোখে জল এসে গেল। মামণি তো জানে, আমি চিকেন খাই না। হাত গুটিয়ে বসে রয়েছি। সবাই জিগ্যেস করছে কী হয়েছে। হঠাৎ মামণি খুব বিরক্ত মুখে বলল, ‘ও তুই তো চিকেন খাস না। এ এক ঝামেলা। আবার একটা অন্য ডিশের অর্ডার দিতে হবে।’ তাড়াতাড়ি বললাম, না না, অন্য কিছু বলতে হবে না। আমি খাচ্ছি।

কয়েক চামচের বেশি সে দিন মুখে তুলতে পারিনি। মামণি সেটা খেয়ালই করল না। আর পলাশ? সে আমার শুকনো মুখ দেখে বলল, ‘একটা সামান্য ভুলকে এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন? কোনও কিছুতেই তোমাদের মেয়েদের মন পাওয়া যায় না। ক’জনের শাশুড়ি মামণির মতো হয় বলো তো!’ এর পর থেকে প্রতি রবিবার, যে দিন বাড়িতে চিকেন রান্না হত, আমার খাবার ছিল, একটু আলুসেদ্ধ, মাখন আর পাঁপড় ভাজা।

Advertisement

বিয়ের পর প্রথম পুজো। পলাশের বাড়িতে বিরাট পুজোর বাজার হয়। সবার জন্য বাজার মামণিই করে। এক দিন কেনাকাটাগুলো দেখতে বসলাম। প্রত্যেকটা জামাকাপড়ই খুব দামি আর ট্রেন্ডি। মামণির নজর আছে বলতে হবে। দেখলাম, আমার বাবা-মায়ের জন্য কিচ্ছু কেনা হয়নি। জিগ্যেস করলাম। মামণি একটু মুখ বেঁকিয়ে বলল, আমাদের মধ্যে ও সবের চল নেই। তক্ষুনি ঠিক করলাম, নিজেই বরং কিনে দেব। জামাকাপড়ের পাহাড়ে আমার জন্যও তো কিছু রাখা নেই! ওটা নিশ্চয়ই সারপ্রাইজ। মামণির যা দারুণ পছন্দ। নিশ্চয়ই খুব সুন্দর কিছু দেবে। ভাবতে ভাবতেই ষষ্ঠী এসে গেল। সকালে মামণি একটা প্যাকেট খাটে রেখে বলল, ‘এই নে, তোর পুজোর গিফ‌্ট।’ খুলে দেখি একটা খুব সাধারণ কমলা রঙের তাঁতের শাড়ি। শাড়িটাও বেশ চেনা লাগল। বললাম, এটা ফুলপিসিমার বাপের বাড়ি থেকে আমার বিয়েতে দিয়েছিল না?’

মামণি খাটে গুছিয়ে বসল। বলল, ‘হ্যাঁ রে। তুই তো শাড়িটাড়ি পরিস না। আর জিন‌্স-টপ তোর বরের কাছে চাস। আমি ও সব দেব না। তোর বিয়েতে পাওয়া শাড়িগুলো থেকে এই একটাই রেখে দিয়েছিলাম। বাকিগুলো তো সব এর-ওর বিয়েতে চালান করে দিয়েছি। এই কমলা রংটা পুজোর সঙ্গে বেশ ভাল যাবে, বল?’

আপনার শ্বশুরবাড়ি ভাল? খারাপ? ভাল-খারাপ মিশিয়ে? শ্বশুরবাড়ির টকঝালমিষ্টি ঘটনা লিখে পাঠান ৪০০ শব্দে।

ঠিকানা: শ্বশুরবাড়ি, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement