রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৩

কেচ্ছা

সুস্নাত চৌধুরীহঠাত্‌ যদি কেউ এমন একটা টুইট করে বসেন ফাদার’স ডে-তে! ‘হ্যাপি ফাদার’স ডে... অর অ্যাজ দে কল ইট ইন মাই ফ্যামিলি, হ্যাপি ব্রাদার-ইন-ল’স ডে’! নিজের বাবাকে ‘জামাইবাবু’ বলে সম্বোধন কোনও চমত্‌কার ‘উইশ’ তো নয়, আসলে যাচ্ছেতাই এক রকম হ্যাটা দেওয়াই!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০০:০০
Share:

হঠাত্‌ যদি কেউ এমন একটা টুইট করে বসেন ফাদার’স ডে-তে! ‘হ্যাপি ফাদার’স ডে... অর অ্যাজ দে কল ইট ইন মাই ফ্যামিলি, হ্যাপি ব্রাদার-ইন-ল’স ডে’! নিজের বাবাকে ‘জামাইবাবু’ বলে সম্বোধন কোনও চমত্‌কার ‘উইশ’ তো নয়, আসলে যাচ্ছেতাই এক রকম হ্যাটা দেওয়াই! দিদির সঙ্গে বাবার বিয়ে হলে আর কী-ই বা করতে পারে কেউ? বছর দুয়েক আগে এই টুইটটি যিনি করেছিলেন, তিনি অবশ্য বিরাট কেউকেটা নন, ছাব্বিশ বছর বয়সি এক জন মার্কিন যুবক, হিলারি ক্লিন্টনের একদা বিশেষ উপদেষ্টা রোন্যান ফারো। কিন্তু তাঁর বাবা, মানে টুইটটির চাঁদমারিতে যিনি রয়েছেন, তিনি হলিউডের বাঘা এক জন সেলেব্রিটি বটে! চার বার অস্কার ঘরে তোলা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র-পরিচালক উডি অ্যালেন।

Advertisement

নিজের দত্তক কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন উডি অ্যালেন। ১৯৯৭ সালে ভেনিসে যখন বাপ-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, কন্যের বয়স ২৭, আর সত্‌পাত্রটি ৬২। কম্পিটিটিভ এগজামের রিজনিং-এর কঠিনতম প্রশ্নটির চেয়েও জটিলতর, এই ঘেঁটে-যাওয়া সম্পর্কের গুলিয়ে-দেওয়া ইকুয়েশন। সে দিন হলিউডি চিত্রনাট্যের চেয়েও নাটকীয় ছিল এই রগরগে কেচ্ছা। ইয়ুং সাহেব একে ‘ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স’ বলবেন কি না জানি না, তবে উডি নিজে একে আজও ‘স্ক্যান্ডাল’ বলতে রাজি নন ‘হোয়াট ওয়জ দ্য স্ক্যান্ডাল? আই ফেল ইন লাভ উইথ দিস গার্ল, ম্যারেড হার।’ কেচ্ছা আবার কোথায়? আমি মেয়েটির প্রেমে পড়েছি, তাকে বিয়ে করেছি। বছর তিনেক আগেও রয়টার্স এমত কোট করেছে উডিকে।

এমনিতে উডি অসম্ভব জনপ্রিয়, তাঁর ছবির অসামান্য রসবোধের জন্য, তাঁর তুলনাহীন ও অসম্ভব বিখ্যাত রসিকতাগুলির জন্য। কিন্তু এই বিয়েটিকে তাঁর অনেক চরম গুণমুগ্ধও মেনে নিতে পারেননি। সিনেমায় তাঁরা উডির অনেক ভাঙচুরের তারিফ করলেও, প্রচলিত মূল্যবোধের এই বাস্তব ভাঙচুর তাঁদের খেপিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

সংগীতশিল্পী ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার প্রাক্তন স্ত্রী অভিনেত্রী মিয়া ফারো। ফারোর সঙ্গে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্ক ছিল উডি অ্যালেনের। তাঁর অনেক ছবিতেই মুখ্য চরিত্রে ছিলেন ফারো। সেই ১৯৮২-তে ‘আ মিডসামার নাইট্’স সেক্স কমেডি’ দিয়ে শুরু, তার পর টানা। অচানক ধাক্কাটা এল ১৯৯২ সালে। ওয়ান ফাইন মর্নিং উডির ম্যানহাটনের ডুপ্লেতে ফারো খুঁজে পেলেন দত্তক কন্যা সুন-ই’র কয়েকটি ফটোগ্রাফ। সব ক’টিতেই সম্পূর্ণ নগ্ন সুন! আর ছবিগুলো তুলেছেন কিনা উডি স্বয়ং! ফারো আর উডির পুত্র ওই রোন্যানের বয়স তখন পাঁচও হয়নি। ফারোর মাথায় বাজ পড়ল। বুঝতে বাকি রইল না, সুন আর উডির মধ্যে তলে তলে গড়ে উঠেছে শারীরিক সম্পর্ক। রাগে-দুঃখে-অপমানে-হতাশায় তড়িঘড়ি উডির সঙ্গে বিচ্ছেদের রাস্তাই বেছে নিলেন ফারো। আর রাখঢাক না রেখেই শুরু হল বাপ-মেয়ের নতুন ইনিংস উডি অ্যালেন আর সুন-ই’র দুনিয়া-কাঁপানো প্রেম।

প্রেম যত গড়াল, কেচ্ছাও ছড়াল দিগ্বিদিক। আদালতে গিয়েও সন্তানদের অধিকার পেলেন না উডি। একটু বড় হওয়ার পর থেকে নিজের ছেলে রোন্যানও কোনও কথাই আর বলতে চাইল না বাবার সঙ্গে। শুধু তা-ই নয়, বেশ কিছু দিন পর ফের গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিল একটি ভিডিয়ো টেপ। প্রকাশ করলেন ফারো। সেখানে তাঁর আর এক মেয়ে, ডিলান ফারো, বর্ণনা করছে, সাত বছর বয়সে সে কী ভাবে উডি অ্যালেনের যৌনতার শিকার হচ্ছে। আবার নতুন কেচ্ছা! অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিলেন উডি। পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রী সুনও বললেন, মা বিচ্ছিরি রকমের রগচটা ছিল, এ সবই হিংসেয় জ্বলে মা’র চক্রান্ত মাত্র। পাবলিকের ছিছিক্কারকে নম্বর না দেওয়াটা তত দিনে সয়ে গিয়েছে উডি আর সুনের!

উলটে যাবতীয় বিতর্ককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও গুছিয়ে সংসার করে চলেছেন তাঁরা। সতেরো বছর হল তাঁদের রেজিস্টার্ড দাম্পত্যের। দুটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। উডি বলছেন, সুন কখনও তাঁর ‘মেয়ে’ ছিল না। সুনকে তিনি কোনও দিন মেয়ের চোখে দেখেননি। সুনও সঙ্গত করছেন, উডি মোটেই তাঁর বাবা-টাবা গোছের কিছু ছিলেন না।

পুনশ্চ: এই কেচ্ছায় একটা সাইড স্টোরিও আছে। ডিএনএ টেস্ট হয়নি বটে, তবে লোকে বলে, রোন্যান ফারো নাকি আদৌ উডি অ্যালেনের ছেলেই নয়। কহানি মে টুইট! গত বছরই মজা করে টুইটারে জানিয়েছেন রোন্যানও, সম্ভবত তাঁর পরমপূজ্য পিতাজি ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা মহাশয়!

susnatoc@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন