উরোকো ওনোজা। নাম শুনে চেনার কথা নয়। জীবিতকালে ইনি মোটে কোনও দুনিয়াখ্যাত সেলেব্রিটিও ছিলেন না। এঁর মৃত্যুই এঁকে শিরোনামে এনেছিল। বছর দুয়েক আগের কথা। অভিশপ্ত সেই মৃত্যু জন্ম দিয়েছিল আবিশ্ব-চর্চিত বিচিত্র এক কেচ্ছার।
উরোকো ছিলেন নাইজেরিয়ার মানুষ। নেয়াপাতি মার্কা বাঙালি কিছুটা দেখে, কিছুটা না-দেখেই আন্দাজ করতে পারে, নাইজেরিয়ার লোকের তাকত, গড় বাঙালির তুলনায় অনেকটাই পোক্ত ও মুরোদওয়ালা। ওনোজার ছিল শক্ত-সমর্থ আসুরিক চেহারা। আর সঙ্গে ছিল প্রোপোরশনেট যৌন খিদে। কিন্তু এমন তাগড়া মানুষটি যে এ ভাবে নুয়ে পড়বেন মৃত্যুর কোলে, কে ভাবতে পেরেছিল!
ওনোজা ছিলেন নাইজেরিয়ার উপরতলার এক শিল্পপতি। মাঝবয়সেই পয়সাকড়ি গুছিয়ে নিয়েছিলেন বেশ। রাজধানী লাগোসে ছিল তাঁর অনেকগুলো বাড়ি। তবে তাঁর আসল সম্পদ ছিল অন্য অনেক জন স্ত্রী! হাতে প্রচুর কাঁচা টাকা আর আর শরীর-মনে অপরিসীম কামাতুরতা তাঁকে বার বার টেনে নিয়ে গিয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। এই একুশ শতকেও তিনি ছ-ছ’টি স্ত্রীকে বিয়ে করে ঘরে তোলার মুরোদ দেখিয়েছিলেন। তবে কিনা, শেষমেশ সেটাই তাঁর কাল হল। হয়তো অতিলোভের যুক্তিতে, সেটা হওয়ারই ছিল।
তরুণী ভার্যার প্রতি আকর্ষণ শুধু বৃদ্ধের নয়, সব বয়সের পতিরই একটু বেশি। মাঝবয়সি ওনোজার যৌবনও এর অন্যথা করেনি। কিছু দিন ধরেই ছ’নম্বর স্ত্রী ওদাচির দিকেই তাঁর নজর পড়ছিল মাত্রাধিক। বিছানায় তাঁকে সময় দিচ্ছিলেন বেশি। কিন্তু সেই পক্ষপাত বাকি পাঁচ সতিনই বা সইবেন কেন? অতএব, যৌন-অধিকারের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে চলল বিস্তর ঝামেলা। শেষমেশ ব্যাপারটা শুধু পারিবারিক ঝঞ্ঝাট ও গৃহস্থ-টাইপ কোঁদলে একেবারেই থেমে থাকল না। খুব বড় মাপের ঝামেলা হয়ে গেল।
১৬ জুলাই, ২০১২। রাত তখন প্রায় তিনটে। বেনিউ স্টেটের উগবুগবু এলাকার একটি বার থেকে খানাপিনা সেরে সে দিন ফিরেছেন ওনোজা। ফিরেই, সাম্প্রতিক অভ্যেস মতো ঢুকেছেন ছোটবউয়ের ঘরে; বেজে উঠল কলিং বেল। ঘোর ব্যস্ত ওনোজা ব্যাজার মুখে দরজা খুলতেই হইহই করে রণচণ্ডী মূর্তিতে ঘরে ঢুকে এলেন বাকি পাঁচ বউ। তাঁদের কারও হাতে গল্ফ স্টিক, কারও হাতে চকচকে ছুরি। ওনোজা হতভম্ব, কিছুই ঠাওরে উঠতে পারছেন না। পাঁচ বউয়ের মুখনিঃসৃত বাণীতে গালাগালির কোরাস!
মোদ্দা কথা একটাই, বাঁচতে চাইলে এখুনি সকলকেই তৃপ্ত করতে হবে! দিতে হবে চূড়ান্ত সঙ্গমসুখ। তাতে অপারগ হলেই, প্রহার! ওপেন থ্রেট! ফোরফ্রন্টে তখন বড়বউ আর মেজোবউ। তাঁরাই তো সবচেয়ে বেশি দিন সহ্য করছেন এই মানুষটির ঔদাসীন্য। এ অপারেশনও নাকি তাঁদেরই ব্রেনচাইল্ড। ওনোজার ওজর-আপত্তি স্রেফ পাত্তাই পেল না। তৈরি হয়েই এসেছিলেন রমণীরা। ফোটানো হল হাই ডোজের স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন। সঙ্গে স্পষ্ট আদেশ, তাঁকে ছোট থেকে বড়, বয়সের ক্রমানুসারে একটানা স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতে হবে।
হুমকির চোটে আর গাঁইগুঁই না করে রাজি হলেন অসহায় ওনোজা। প্রথম দুজনকে তুষ্ট করলেন সহজাত ক্ষমতায়। আশ মিটল তিন নম্বরেরও। ওনোজার শরীর তখন ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। ক্লান্তি আর যন্ত্রণা সহ্য করেও চতুর্থ জনের বেলা লড়ে গেলেন। এ বার পঞ্চম স্ত্রী। চেষ্টা শুরু হল, কিন্তু শরীর আর দিল না। নিস্তেজ হয়ে, খাটেই নেতিয়ে পড়লেন ওনোজা। তখনও বাকি রয়েছেন বড়বউ। তাঁর সাধ আর মিটল না। তত ক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন উরোকো। সংকট বোঝামাত্রই পগার পার ওই পাঁচ বউও।
কিন্তু শেষ রক্ষে হয় না। দিন কয়েকের মধ্যেই তাঁদের খুঁজে বের করে পুলিশ। পাঁচ বউয়ের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও খুনের মামলা দায়ের করে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা যায়, স্টেরয়েড ওভারডোজ ও ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। নারীর হাতে এক জন পুরুষেরও যে ধর্ষণ হতে পারে, হয়েছেও, তা স্বীকার করে নেন গাঁয়ের মোড়ল ওকপে ওদো কিংবা ওউকপা থানার ডিভিশনাল ক্রাইম অফিসার জেম্স আদানু। ইন্টারনেট সাক্ষী, বিচিত্র এই ঘটনাটিও কেচ্ছার ব্যাপ্তি লাভ করে আজও একই সঙ্গে বিচরণ করতে থাকে সংবাদপত্রের সিরিয়াস রিপোর্ট টু হলুদ চটি বইয়ের কথামালায়!
susnatoc@gmail.com