গল্পের খোঁজে

রাইয়ের খুব ইচ্ছে গল্প লেখার। ওদের স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের লেখা নানান গল্প, কবিতা থাকে, সেই দেখেই রাইয়ের শখ হয়েছে। ওর গল্পও লোকে পড়বে, সবাই ওকে চিনবে। কিন্তু সমস্যা একটাই, গল্পের প্লটই যে মাথায় আসে না! মাকে বলায় মা বললেন, ‘গল্প না লিখে বরঞ্চ কবিতা লেখ কিংবা ছবি আঁক না।’

Advertisement

নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share:

রাইয়ের খুব ইচ্ছে গল্প লেখার। ওদের স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের লেখা নানান গল্প, কবিতা থাকে, সেই দেখেই রাইয়ের শখ হয়েছে। ওর গল্পও লোকে পড়বে, সবাই ওকে চিনবে।

Advertisement

কিন্তু সমস্যা একটাই, গল্পের প্লটই যে মাথায় আসে না!

মাকে বলায় মা বললেন, ‘গল্প না লিখে বরঞ্চ কবিতা লেখ কিংবা ছবি আঁক না।’

Advertisement

কিন্তু রাইয়ের ঠিক মনে ধরে না কথাটা। ও গল্পই লিখবে। কবিতার ছন্দ মেলানো কী কঠিন, উফ্! আর ছবি তো বাচ্চারাও আঁকতে পারে। এই তো সে দিন, ওর তিন বছরের মামাতো ভাই, ঋজু, একটা কী সুন্দর ছবি আঁকল, ওরা পুজোয় সিমলা বেড়াতে গিয়েছিল, তার।

কী করবে ভেবে না পেয়ে রাই গেল ওর কাকার কাছে। তিনি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গল্প লিখে ফেলেছেন। রাই সেগুলো পড়েছে আর বেশ ভালও লেগেছে।

ছবি এঁকেছেন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

কাকা বললেন, ‘প্লটের কী দরকার? তোর আশেপাশে কী কী হচ্ছে দেখ, সেগুলো নিয়েই লেখ।’

রাই বলে উঠল, ‘কিন্তু সেগুলো কেউ পড়বে কেন? ওতে কিছুই তো ইন্টারেস্টিং ঘটনা নেই।’

‘সেটাই তো মজা। রোজকার জিনিসকে নতুন ভাবে তুলে ধরাটাই তো লেখকের কৃতিত্ব।’

ধুস, কী যে বলেন কাকা! নিজে এত ভাল ভাল গল্প লেখেন, অথচ রাইকে কোনও প্লটই দিলেন না!

রাইয়ের একটু খারাপই লাগে। প্রতি দিন সূর্য ওঠে, রাস্তায় গাড়ি চলে, রাই আর রাইয়ের মা স্কুলে যায় (আসলে রাইয়ের মা এক জন শিক্ষিকা), বাবা-কাকা অফিসে যান, পাখি ডাকে... এতে নতুনত্ব কিছু খুঁজে পেল না রাই।

আচ্ছা, ওটা কীসের ডাক? রাইকে ওর বাবা জন্মদিনে একটি নতুন ক্যামেরা দিয়েছেন, ওটাই এখন ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী। যখন-তখন, যেখানে সেখানে, যা ভাল লাগে, তারই ছবি তুলে রাখে। ওদের গড়িয়ার বাড়ির পাশে যে বিশাল বাগানটা আছে, তাতে সারা দিন কত যে পাখি আসে, যার অর্ধেক কলকাতাতে আছে বলেই কেউ জানত না! ও সব ক’টা পাখির ছবি তুলে রেখেছে।

তবে এই ডাকটা নতুন। আগে কখনও শোনেনি রাই। ক্যামেরাটা নিয়ে দৌড়ে গেল জানলার কাছে। দেখল, সামনের নিম গাছটায় একটা শালিকের মতো পাখি বসে, গায়ের রং হলুদ, ডানায় ও লেজে কালো ছিটে, ঠোঁট গোলাপি। আর ডাকটা কী মিষ্টি, বাঁশির মতো।

রাই চটপট ক্যামেরার জুম অ্যাডজাস্ট করে একটা ছবি তুলে ফেলল। নেটে সার্চ করে দেখল, ওটা হল গোল্ডেন ওরিয়ল (golden oriole)।

ওর মেজদাদু বললেন, বাংলায় বলে ‘বেনেবউ’।

সে দিন বিকেলে বসে নিজের তোলা সব পাখির ছবি দেখতে দেখতেই আইডিয়াটা মাথায় এসে গেল রাইয়ের।

এ বছরে স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিনে রাইয়ের তোলা সব ক’টা পাখির ছবি একটা গোটা পাতা জুড়ে বেরিয়েছে। সবাই ওকে বলেছে ওর ছবি তোলার হাত খুব ভাল, ছবি তোলাকে একটা কেরিয়ার অপশন হিসেবে ভাবতেই পারে। কিংবা অর্নিথোলজি।

ও কী হবে, সেটা পরের কথা। আপাতত ম্যাগাজিনে নিজের নাম বেরোনোতেই রাই খুশি। ভাগ্যিস বাবা ক্যামেরাটা দিয়েছিলেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন