প্রতিবাদের লেটেস্ট

ব্যক্তিগত প্রতিবাদ: জীবনে যা ঘটছে ফেসবুকে চুপচাপ লিখে ফেলাকে বলে ব্যক্তিগত প্রতিবাদ। ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ নামক দার্শনিক উচ্চারণ থেকে এর সূচনা, ইংরিজিতে যাকে ‘পার্সোনাল ইজ পলিটিকাল’ বলা হয়। অর্থাৎ, যা কিছু ব্যক্তিগত, জনসমক্ষে জানিয়ে দিলেই প্রতিবাদ সমাধা। গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে-খেতে লাইভ আপডেট দিলে, সেটা বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share:

ব্যক্তিগত প্রতিবাদ: জীবনে যা ঘটছে ফেসবুকে চুপচাপ লিখে ফেলাকে বলে ব্যক্তিগত প্রতিবাদ। ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ নামক দার্শনিক উচ্চারণ থেকে এর সূচনা, ইংরিজিতে যাকে ‘পার্সোনাল ইজ পলিটিকাল’ বলা হয়। অর্থাৎ, যা কিছু ব্যক্তিগত, জনসমক্ষে জানিয়ে দিলেই প্রতিবাদ সমাধা। গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে-খেতে লাইভ আপডেট দিলে, সেটা বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

Advertisement

প্রাকৃতিক প্রতিবাদ: ব্যক্তিগত প্রাকৃতিক কাজকর্মকে এখানে প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ‘পেটটা খারাপ, এখন কমোডে’, কিংবা ‘কী ঝাল, নাকের জল গড়াচ্ছে’, এমত অমোঘ উচ্চারণ প্রাকৃতিক প্রতিবাদের উদাহরণ। এ-সব ফেসবুকে অনর্গল লিখে চলা আসলে প্রাইভেসির ট্যাবুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, তেত্রিশশো লাইক দেখলেই যার কার্যকারিতা বোঝা যায়। পেটখারাপের খবরের সঙ্গে কমোডের ভিজুয়াল দিতে পারলে এই বিদ্রোহের জোর বাড়ে। বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক-কর্ম-নির্ভর বলে অনেকে একে হার্বাল প্রতিবাদও বলে থাকেন। এই পদ্ধতিতে সিকনিসিক্ত রুমাল আসলে পার্সোনাল-হাইজিনের ট্যাবুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ইনস্টাগ্রামে আপলোডিত রজঃস্বলা রমণীর রক্তাক্ত পাছা শৃঙ্খল ভাঙার প্রতীক। ট্যাবুর উপর শোধ তোলা হয় বলে এই প্রকৃতিপ্রদত্ত পদ্ধতির অন্য নাম প্রকৃতির প্রতিশোধ।

শক-থেরাপি: সমষ্টিগত ভাবে প্রকৃতির প্রতিশোধ নিলে তাকে অতিপ্রাকৃতিক বলা হয়। গ্রামে শৌচালয়ের দাবিতে শহুরে অ্যাক্টিভিস্টরা পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে যদি একযোগে হাগু করতে বসেন, আদর্শগত ভাবে তা অতিপ্রাকৃতিক গণপ্রতিশোধ। তবে বাস্তবে অতিপ্রাকৃতিক কাণ্ড বিরল বলে প্রতীক দিয়েই গণপ্রতিশোধ নিতে হয়। শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে স্যানিটারি ন্যাপকিন গাছে-গাছে ঝোলানো এর অন্যতম উদাহরণ। বোরিং জনসংযোগের পরিবর্তে পাবলিককে শর্টকাটে শক-দানই লক্ষ্য বলে এটির পোশাকি নাম শক-থেরাপি। বলা বাহুল্য প্রতিবাদ মাত্রেই শক-থেরাপি নয়। যেমন, দক্ষিণ ভারতের ‘ন্যাপকিন-ম্যান’ মুরুগান্থামের সস্তায় গ্রামেগঞ্জে ন্যাপকিন-বিতরণ প্রকল্প একঘেয়ে এবং যথেষ্ট মিডিয়া-স্যাভি নয় বলে ডিসকোয়ালিফায়েড। আবার দীপিকা পাডুকোনের ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ৪৪০ ভোল্টও বাদ। ম্যাগাজিনের নামের কারণে একে প্রতিবাদের বদলে ভোগবাদী সংস্কৃতি বলে।

Advertisement

পার্পিচুয়াল প্রতিবাদ: এ হল প্রতিবাদের শেষ স্টেশন। অনেকে শকের ভাল-মন্দ না বুঝে প্রতিবাদের বিরুদ্ধেই গর্জান। এঁদের শা-শক দল বলা হয়। শাসকরা সাধারণ ভাবে খুবই নম্র। কেউ-কেউ বয়সকালে দুষ্টুমি করলেও মূলগত ভাবে শান্ত, যে জন্য কবি বলেছেন ‘আজকে যে বেপরোয়া হার্মাদ/ শান্ত সুবোধ হবে কাল সে’। এঁরা জীবনে কখনও কাটাকাটি করেননি বলে নারীশরীরে রক্তপাত দেখলেই মূর্ছা যান, ন্যাপকিন দেখলেই ছিঁড়ে ফেলেন। তার আবার জবাবি জেহাদ হয়। একেই পার্পিচুয়াল প্রতিবাদ বলা হয়। শক ও প্রো-শাসকের এই খেলাই প্রকৃতিতে সাম্যাবস্থা বজায় রাখে, যে জন্য প্রতিবাদকুলে পার্পিচুয়ালই সর্বশ্রেষ্ঠ। এরই প্রভাবে শুধু শক কেন, শক-হুন, পাঠান-মোগল, সবাই আল্টিমেটলি এক দেহে লীন হয়। এই জন্যই শরীরকে মহা আশয়, ভারতবর্ষকে মহামানবের সাগরতীর এবং পার্পিচুয়াল প্রতিবাদকে কুলশ্রেষ্ঠ বলা হয়।

bsaikat@gmail.com

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement