রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share:

পিনাকী ভট্টাচার্য

Advertisement

সস শব্দটার ফরাসি ভাষায় অর্থ হল, এক ধরনের আনন্দ। তরল সস রান্নার সঙ্গে মিশিয়ে খাবারকে করে তোলা হত আরও আকর্ষণীয়, সহজপাচ্য, আর খাবার থেকে কোনও কটু গন্ধ বের হলে সেটাকেও আটকে দেওয়া যেত। রোমানরা আবার সস ব্যবহার করত সবজির স্বাদ লুকনোর জন্য। সে যুগে টাটকা সবজির অভাব ছিল না, সসের আস্তরণে আটকে তার সাধারণ স্বাদ বদল করে মজা লুটত অনেকে। আবার, কে কত দামি আর দুষ্প্রাপ্য মশলা দিয়ে সস বানাত, তাই নিয়ে রীতিমত জাঁকের প্রতিযোগিতা চলত।

সসের দেশে পাঁঁচ রাজা। তাদের রাজত্ব রং আর স্বাদের নিরিখে আলাদা করা হয়েছে। এক এক রাজার অধীনে আছে আরও অনেক সস।

Advertisement

প্রথমেই আসে বেশামেল সস। এই সাদা রঙের সসটা এতই জনপ্রিয় যে এর আবিষ্কর্তা কে, তা নিয়ে বিস্তর তর্ক। ইতালিয়ানদের দাবি, এই সস জন্মসূত্রে ইতালির। চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রথম তৈরি হয়েছিল। ইতালির রাজকুমারী আর অরলিয়ান্সের ডিউক (পরবর্তী কালের ফ্রান্সের সম্রাট দ্বিতীয় হেনরি) বিয়ে করলেন, রাজকুমারীর সঙ্গে আসা রাঁধুনিদের সঙ্গে বেশামেল সস ফ্রান্সে পৌঁছল। তবে এ দাবিকে পাত্তা না দিয়ে এই সসের আবিষ্কর্তার শিরোপা দেওয়া হয় ফ্রান্সের সম্রাট চতুর্দশ লুই-এর প্রধান শেফ-কে, কারণ তাঁর লেখা রান্নার বইতে বেশামেলের উল্লেখ আছে— এই সসটার নামকরণ তিনি করেছিলেন সম্রাটের প্রধান স্টুয়ার্ড মারকুইস লুই দে বেশামেল’এর সম্মানে।

হল্যান্ডেজ সসের রং মাখনের মতো, মাখনই এর মুখ্য উপকরণ। এর আদি নাম ইন্সাইনি সস, ফ্রান্সের নর্মান্ডি প্রদেশের একটা ছোট শহরের নামে, যা বিখ্যাত সেখানকার মাখনের জন্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে মাখন উৎপাদন এক্কেবারে বন্ধ হয়ে গেলে তখন প্রতিবেশী দেশ হল্যান্ড থেকে মাখন নিয়ে এসে এই সস বানানো হত— তাই নাম হয়ে গেল হল্যান্ডেজ সস।

এস্পানিয়োল সসের মালিকানা নিয়ে এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব আছে, কারণ ফরাসি ব্রাউন সস আর এস্পানিয়োল সস সমগোত্রের, আর ফরাসি ভাষায় স্পেনীয়দের এস্পানিয়োল বলে। ফরাসিদের তাচ্ছিল্যভরা মতামত হচ্ছে, ফ্রান্সের রাজা ত্রয়োদশ লুই-এর সঙ্গে স্পেনের রানির বিয়ের সময় কনের সঙ্গে আসা পাচকের দল বিয়ের ভোজ রান্নায় অংশ নিতে চায়, রাজা ভদ্রতা করে তাতে সম্মতি দেন। সেই স্পেনীয় রাঁধুনিরা খানদানি ফরাসি গাঢ় ব্রাউন সসের সঙ্গে প্রচুর টম্যাটো মিশিয়ে তার চরিত্র-হরণ করে। সেই ধর্ষিত সসই এস্পানিয়োল সস। কিন্তু এই সসের স্বাদ আর ঘ্রাণ অন্য কথা বলে। পঞ্চদশ লুই-এর আমলে ফরাসি শেফরা স্পেনের বিখ্যাত আর অতি সুস্বাদু স্ট্যু ‘ওলা পদ্রিদা’র স্বাদে মুগ্ধ হন। তাঁরা গো-মাংসের স্টকে তৈরি ব্রাউন সস-এ বৈচিত্র আনেন, ওলা পদ্রিদা-য় ব্যবহৃত বেকন, সসেজ আর হ্যামের স্টক ব্যবহার করে। তখন ব্রাউন সস-এর নতুন নাম হয় এস্পানিয়োল সস।

মেয়নিজ সস নিয়ে নতুন কিছু বলব না, মেয়নিজের গপ্প এই কলামে আগেই হয়েছে।

আর পঞ্চম রাজা টম্যাটো সসের সেরা রেসিপি হল— পৃথিবীর তাবড় শেফের মহাগুরু এস্কফফ্যে-র বর্ণনায়— পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, তেজপাতা, মাখন, ময়দা, টমেটো আর শুয়োরের পেটের দিকের মাংস। অতএব সাধু সাবধান! বিদেশে খানদানি রেস্তরাঁতে টমেটো কেচাপ চাইতে গিয়ে আমাদের দেশি কায়দায় ‘টোম্যাটো সস’ চেয়ে বসবেন না; ওটা কিন্তু অনেক সময় মাংসের স্টক দিয়ে তৈরি হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন