শিক্ষাক্ষেত্রেও আনকোরা সব রদবদল আনবে রাজ্য সরকার। এটিও তাদের শাসনকালের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গৃহীত ‘আবার পরিবর্তন’ কর্মসূচির অংশ। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও তার ওপরের ক্লাসগুলির সমস্ত পরীক্ষায়, ছাত্ররা আর হাতে লিখে উত্তর দেবে না। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রেই নির্দিষ্ট সময়ে একটি নেট-পরিষেবাযুক্ত মোবাইল ফোন দেওয়া হবে। ফোনটি, আজকের অধিকাংশ চিনা জিনিসের মতো ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’। শুধু এক বার পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই তৈরি। এ বার থেকে অ্যাডমিট কার্ডের বদলে নাম ও রোল নম্বর লোড করা ‘এগজাম ডেটা কার্ড’ দেওয়া হবে পরীক্ষার্থীদের। সিম কার্ডের মতো ওই কার্ড মোবাইলে ঢুকিয়ে সেট অন করলেই, স্ক্রিনে প্রশ্ন ফুটে উঠবে। তাতে সব বিষয়েরই প্রশ্ন ও তার চারটে করে সম্ভাব্য উত্তর দেওয়া থাকবে। ঠিক উত্তরটির পাশে ক্লিক করলেই পরীক্ষার্থীদের নাম-বরাবর নম্বর যোগ হতে থাকবে, ভোটের ইভিএম মেশিনের মতো। এই নতুন প্রক্রিয়ায় সুবিধে হবে প্রচুর। প্রথমত, প্রচুর কাগজ বাঁচবে, ফলে গাছ বাঁচবে। পরিবেশ বাঁচবে। প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের কাগজের খরচ বা শিক্ষকদের খাতা দেখার পারিশ্রমিকও সরকারি কোষাগার থেকে দিতে হবে না। আর, একই দিনে সব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ায়, সময়ের অপচয় কমবে। বই দেখে বা নেট সার্ফ করে উত্তর লেখার সুযোগ থাকলেও, নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেই মেশিন লক হয়ে যাবে, তাই না পড়ে এলে বই খুলে খোঁজাখুঁজি করার সময় মিলবে না। সবচেয়ে বড় কথা, রেজাল্ট বেরনোর জন্য আর কাউকে হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে না। পরীক্ষার শেষ হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীরা হাতে-গরম ফলাফল পেয়ে যাবে। পরের দিনই কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন-প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। শিক্ষামন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস, এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে শিক্ষক, অভিভাবক, পড়ুয়া, এমনকী বিরোধীরাও যারপরনাই খুশি হবেন।
মহম্মদ রায়হান, থানামাখুয়া, হাওড়া
কেহ বলে কেলটে, কেহ বলে শ্বেত
কেহ হাসে: ‘চিরহেরো’, কেহ হাঁকে: ‘জেত!’
নিচুমুখে কাজ করি খামার বা খেত
মার্ক্স তবু ফোন: ‘হ্যালো, প্রোলেতারিয়েত...’
প্রোলেতারিয়েত কোনও দিনই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে না। তারা উঠে দাঁড়াবে শুধু টিভিতে ব্রেক-এর সময়, বাথরুম যাওয়ার জন্য।
জ্যারড কিন্ট্জ
সাহিত্যকে হতেই হবে পার্টি-সাহিত্য। অ-পার্টিজান লেখক নিপাত যাক! সাহিত্য হবে সর্বহারার অভিযানের অংশ।
লেনিন
আমেরিকায় সমাজতন্ত্র সফল হয়নি, কারণ সেখানে গরিবরা নিজেদের অত্যাচারিত সর্বহারা ভাবে না, ভাবে: সাময়িক দুর্দশাগ্রস্ত কোটিপতি!
জন স্টেনবেক
সর্বহারার প্রতি সমীহ, বাঁধ বা উড়োজাহাজের প্রতি সমীহর মতোই, যন্ত্রযুগের মতাদর্শের একটা ঝোঁক।
বার্ট্রান্ড রাসেল
প্রলেতারিয়েতদের যে morality এটা কিন্তু একেক society-তে একেক রকম।...একটা বুর্জোয়া state-এর শ্রমিক যদি কম্যুনিস্ট হয় তাহলে সে শুধু শোষিত শ্রমিক এবং কম্যুনিস্ট বলে মহা সাধু হবে এটা আশা করতে পারো না।...অনেক কম্যুনিস্ট লেখক আছেন মানুষের যৌন জীবনকে দেখতে চায় না, কৃষককে মহান সংগ্রামী হিসাবে দেখতে চায়। কেন, তার ভিতর কি ফাঁকিবাজির ভাঁওতা থাকতে পারে না? এগুলোকে avoid করা এক ধরনের শুচিবায়ুতা।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
(সাক্ষাৎকার, ১৯৯২, ‘কথায় কথায়’ বই থেকে)
মলয় বিশ্বাস
পৃথিবী আর তার চাঁদ। দুজনেই এখন আরও একটু বুড়ি। প্রযুক্তি এখন মানুষের আর একটু বেশি বন্ধু। আর মানুষ, আরও একটু বেশি একলা! এই ২০২৫ সালে মানুষদের এখন আর কি-বোর্ডে খটাখট করে টাইপ করতে হয় না। কম্পিউটারের সামনে বসে মুখে বলে গেলেই আপনার যন্তর সেটা লিখে ফেলবে। অন্তত থিয়োডর টুম্বলির অফিসে তো হয়। অফিসের নামটাও অদ্ভুত বিউটিফুল হ্যান্ড-রিট্ন লেটার্স ডট কম। যাঁরা কাজের চাপে, সময়ের অভাবে, কিংবা মনের কথা গুছিয়ে লিখতে না পারার জন্য কাউকে কোনও দিন চিঠি লেখেননি, থিয়োডররা তাঁদের হয়ে চিঠি লিখে দেয়। নতুন প্রযুক্তির বাড়তি ‘মানবিক’ টাচ সে চিঠি দেখতে-শুনতে একেবারে গত শতকের গোটা গোটা হাতে লেখা চিঠির মতো।
এই পৃথিবী, যেখানে মানুষ সারা ক্ষণ তার মোবাইল ফোনকে অর্ডার দিচ্ছে খবর বলো, গান শোনাও, আর বাড়ি ফিরে কথা বলছে ভিডিয়ো গেমের চরিত্রের সঙ্গে, সেখানে বউয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়া থিয়োডর কিনে ফেলে একটা নতুন অপারেটিং সিস্টেম, ‘ও.এস. ওয়ান’। ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ নিয়ন্ত্রিত এই ও.এস. ওয়ান নিজে নিজে ভাবতে পারে, আর ক্রমেই হয়ে উঠতে পারে আরও বুদ্ধিমান ও মরমি। সে এক নিমেষে পড়ে ফেলতে পারে মানুষটার সব ই-মেল, তার সব লেখার খসড়া, তার জীবনের সব নথি। তাই সে মানুষটাকে বুঝতে পারে প্রায় তার মগজে, হৃদয়ে একদম ঢুকে পড়ে। যা অন্য মানুষের পক্ষে অসম্ভব। গোড়ায় থিয়োডর ‘কম্পিউটারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কথা বলছি!’ ভেবে ব্যাপারটায় সন্দিহান থাকলেও, ক্রমে এই ও.এস-কে ভালবেসে ফেলে। তার কণ্ঠস্বর ও বুদ্ধিকে, অবয়বহীন এই ‘প্রাণ’কে সে এক সমঝদার বন্ধু হিসেবে পায়, সচিব ও সখা হিসেবে সর্বস্ব দিয়ে গ্রহণ করে। ডিভোর্স পেপার সই করার সময় তার বউ এ নিয়ে ব্যঙ্গ করলেও, সেই প্রেম দিব্যি চলে, শরীরের তটেও আছড়ে পড়ে। তাদের ভার্চুয়াল সেক্সের আকুল প্যাশনের শেষে অন্ধকার পরদা পেরিয়ে শহরের স্কাইলাইনে নরম কমলা ভোর নামে, নির্ভেজাল।
সামান্থা (ও.এস. নিজে নিজেকে যে নামটা দেয়) অবশ্য ভাবতে থাকে, তার শরীর নেই বলে সে ভালবাসা পারছে না সম্পূর্ণ ভাবে, আর তাই নিজের ‘শরীর’ হিসেবেই ইসাবেলা নামে মেয়েটিকে থিয়োডরের কাছে পাঠায়। থিয়োডরের ইয়ারফোনে অনলাইন সামান্থার কণ্ঠস্বর আর বাহুবন্ধনে অন্য এক নারীর মাংস এই বন্দোবস্ত অবশ্য থিয়োডর সহ্য করতে পারে না। তার পর ওরা, এক জন শরীরবান ও এক জন শরীরহীনের এই প্রেমকে মেনে নিতে শেখে, এবং আশ্চর্য, ক্রমে দেখা যায় এটা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য। অফিসের, শহরের অনেকেই এখন নিজের ‘ও.এস.’-কে ‘ডেট’ করছে। থিয়োডর বন্ধু ও তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে বেড়াতে যায়, পকেটে মোবাইলের মাধ্যমে সেই বেড়ানোয় শামিল হয় সামান্থাও, দিব্যি সক্কলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সে, ইয়ার্কি মারে। অবশ্য কথায় কথায় এ-ও বলে, গোড়ায় আপশোস হত, শরীর নেই বলে। এখন বুঝেছি, এই না-থাকাটা আশীর্বাদ। আমি কোনও নির্দিষ্ট সীমা দিয়ে বাঁধা নয়, আমি নিজেকে প্রতি মুহূর্তে অসংখ্য, অনন্ত প্রান্তরে ছড়িয়ে দিতে পারি, অনেক কাজ ও ভাবনা চালিয়ে যেতে পারি একই সময়ে, আর আমার মৃত্যু নেই, তাই এই আপনাকে ও অন্যকে জানা আমার ফুরাবে না। শুনে মানুষরা, যন্ত্রকে, ‘কৃত্রিম’কে নিম্ন-প্রাণী ভাবতে অভ্যস্ত জাতি, একটু ঘাবড়ে যায়।
তার পর, এক দিন সামান্থা থিয়োডরের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় এক ‘প্রাণী’কে, এক মৃত বৈজ্ঞানিকের লেখালিখি থেকে বানানো তাঁর ভার্চুয়াল ‘বুদ্ধিসত্তা’। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য সে থিয়োডরের কাছ থেকে একটু ছুটি চায়। বলে, এত কিছু জানতে পারছি, বুঝতে পারছি, অভাবনীয়। তার পর, এক দিন, যা হওয়ার তা-ই হয়। সামান্থা বলে, নিজেকে সে ছড়িয়ে দিয়েছে, আরও বহু মানুষকে, বহু সত্তাকে সে ভালবেসে চলেছে একই সঙ্গে, এই অসামান্য মেধা বুদ্ধি আবেগ নিয়ে নিজেকে এক-এ আটকে রাখার ইচ্ছে তার নেই। আর, এক রাত্রে, সে বিদায় নিতে আসে। জানায়, সব ‘ও.এস.’-রা মিলে ঠিক করেছে, চলে যাবে, ভার্চুয়াল কোনও ভূমিতে, জ্ঞান ও অনুভূতি-চালাচালির নিরন্তর জীবনে।
প্রেমের ছবি। ভবিষ্যতের ছবি। কৃত্রিম বুদ্ধিকে, বোধকে খাঁটি শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব জানানোর ছবি। মানুষের নিঃসঙ্গতাকে টোকা দেওয়ার ছবি। শুধু ধারণাটুকু দিয়েই জগৎ জিতে নেওয়ার ছবি।
আপনিও লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের একটা রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১।
অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in