রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

...

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০১:০২
Share:

ভাস্কর রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোড, কলকাতা

Advertisement

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,

Advertisement

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

শান্তনু চক্রবর্তী

এক হোটেল হুল্লোড়

জুব্রোউকা’ বলে কোনও দেশের নাম আপনি দুনিয়ার কোনও মানচিত্রে খুঁজে পাবেন না। ধরে নিন ওটা পূর্ব ইউরোপের কোনও দেশ পশ্চিমি বিশ্বে ঘটে যাওয়া যে কোনও ভাল-মন্দ, ঘটনা-দুর্ঘটনার দায় যাদের বইতে হয়! দুটো বিশ্বযুদ্ধ, একটা হিটলার, এমনকী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী ভ্রাতৃত্বের রঙিন দুঃস্বপ্ন সব! এই ছবিটায় দেশের নামটা যেমন বানানো, তেমনই সন-তারিখ সুদ্ধ চেনা কোনও যুদ্ধ, চেনা কোনও নেতা বা পার্টিরও নাম করা হয়নি। তবু ছবিটা যে গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেলের আজব দস্তান শোনায়, তার গায়ে শুরু থেকেই অনেক অচেনা অদৃশ্য যুদ্ধের দাগ লেগে আছে। কারণ সে গপ্পের যিনি নায়ক-কাম-ন্যারেটর বা কথকঠাকুরটি, সেই জিরো মুস্তাফা মশাই-ই তো কিশোরবেলায় জুব্রোউকাতে আসছেন উদ্বাস্তু হয়ে! কারণ ভয়ানক কোনও যুদ্ধের আঁচে, তাঁদের গাঁ-ঘর সব পুড়ে খাক বাবা-মা-ভাই-বোন সব্বাই খতম!

এ ছবির গপ্পের ঢাকনাটা যখন উঠছে, সেই ১৯৩২ নাগাদ জিরো ছিলেন গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেলের ‘লবি বয়’, মানে বেয়ারা। এই হোটেলের মালিক এক রহস্যময় মানুষ, যাঁকে কেউ কখনও দেখেনি। তাই হোটেলের রিসেপশনিস্ট থেকে রাঁধুনে, ম্যানেজার থেকে হাউসকিপিং, একটা লোককেই জানত এবং মানত তিনি মঁসিয়ে গুস্তাভ! আর এই গুস্তাভ সাহেবের কাছেই জিরোর ট্রেনিং শুরু। গুস্তাভ বলতেন, সাচ্চা লবি বয় সে-ই, যে পুরোপুরি অদৃশ্য থাকবে, কিন্তু সব সময় যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাবে। ক্লায়েন্ট মুখের কথা খসানোর আগেই সে দরকারটা বুঝে নেবে। এবং... হোটেলে অনেক কিছুই ঘটবে, লবি বয় সেটা দেখবেও কিন্তু মরে গেলেও একটা কথাও বাইরে ফাঁস করবে না! এমনি করেই জিরো জেনে ফেলেন, বড় ঘরের বেশ কয়েক জন বিরাট ধনী বয়স্ক মহিলা স্রেফ গুস্তাভের জন্যেই এই হোটেলে আসেন। গুস্তাভ তাঁদের অনেক গোপন ব্যথার আশ্চর্য মলম। শরীর-মনের অনেক না-পাওয়ার মুশকিল আসান।

মঁসিয়ে গুস্তাভ যাঁদের ‘বিশেষ সার্ভিস’ দিতেন, ‘ম্যাডাম ডি’ ছিলেন তাঁদেরই এক জন। শেষ বার যখন তিনি হোটেলে এসেছিলেন, তখনও গুস্তাভ তাঁকে যত্ন করে রাতের ‘সেবা’টুকু দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের জমিদারিতে ফেরত যাওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই ম্যাডামকে কে বা কারা যেন বিষ খাইয়ে মারে। আর সেই খুনের দায়ে ফেঁসে, জেলে যায় বেচারা গুস্তাভ। কারণ ম্যাডাম ডি তাঁর উইলে চিরদিনের প্রিয় ‘সেবক’ গুস্তাভকে রেনেসাঁ আমলের ভীষণ বিখ্যাত আর দামি একটা ছবি উপহার দিয়ে যান।

আর স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটা ডি মেমসাহেবের হাড়-বজ্জাত ছেলে দিমিত্রি আর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের একটুও পছন্দ হয়নি। জিরো কী কায়দায় গুস্তাভকে জেল থেকে বার করেন, কী ভাবে দিমিত্রিদের সঙ্গে অনেক ঝামেলা-হুজ্জুত করে ছবিটাকেও বাঁচানো যায়, আবার গুস্তাভকেও নির্দোষ প্রমাণ করা যায়, তাই নিয়েই কয়েক পর্বে ঘটে যায় লম্বা কমেডি সিরিজ। এখানে যেমন স্ল্যাপস্টিক কমেডি আছে, পুরনো হলিউডের অ্যাকশন সিনেমার ফর্মুলা নিয়ে স্পুফ আছে, তেমনই আনাচেকানাচে টুকটাক উঁচিয়ে আছে স্যাটায়ারের খোঁচাও।

জিরো আর তার গার্লফ্রেন্ড আগাথা হোটেলের কার্নিশ ধরে ঝুলছে, তার পর সেটা ভেঙে পড়বি তো পড় একেবারে বেকারির কেক-পেস্ট্রির গাড়িতে। এ তো একেবারে চেনা স্ল্যাপস্টিক! অথচ রম-কম’এর এই হালকা-ফুলকা মেজাজেই পরিচালক কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব ইউরোপের দুর্ভাগ্যের ইতিহাসটাও ঠিক ছুঁয়ে গেছেন! রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চেহারাটা, নাত্‌সি হত্যাতন্ত্র পেরিয়ে কমিউনিস্ট যন্ত্র-তন্ত্র অবধি কী ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে, একটা-দুটো দৃশ্যে, ছোট্ট ছোট্ট সংলাপে তার ছবি আঁকা হয়ে যায়।

জিরো মুস্তাফা কী করে লবি বয় থেকে গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেলের মালিক হলেন, ছবিটা তো সেই গপ্প বলেই। কিন্তু ‘সফল অভিবাসী ব্যবসায়ী’ থেকে কমিউনিস্ট জমানার ‘কমরেড মুস্তাফা’ হয়ে ওঠার ভোলবদলটা তিনটে মাত্র খবরের কাগজের হেডলাইনে ধরে দেন পরিচালক। জিরো আর তার গুরু গুস্তাভ যেমন জীবনের নানা উদ্ভুট্টি মোড়ে দাঁড়িয়েও খুচরো মজাগুলো ঠিকঠাক খুঁজে নিতেন, পরিচালকও সেই মেজাজেই একটা হোটেল আর তাকে ঘিরে ক’টা লোকের হইহুল্লোড় বেঁচে থাকার গপ্পকে লম্বা একটা সময়ের জলে আলতো ভাসিয়ে দিয়েছেন। ছবির এন্ড টাইট্‌ল-এ জিপসি অর্কেস্ট্রার সুরেও জীবনের সিরিয়াস ভাবভঙ্গিকে টুক করে চোখ মটকানোর দুষ্টুমিটাই বাজতে থাকে!

sanajkol@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন