Kanak Saha

ব্রহ্মাণ্ড রহস্যে আলোর দিশা বাঙালির

অতিবেগুনি রশ্মির বেশির ভাগটাই পৃথিবীকে মুড়ে রাখা ওজ়োন স্তর ভেদ করে নামতে পারে না। ফলে এই রশ্মির সুলুকসন্ধান জানতে হলে সেটা করতে হয় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরে মহাকাশ থেকে। কনকবাবুদের কাজটি সম্ভব করেছে মহাকাশে থাকা অ্যাস্ট্রোস্যাটের যান্ত্রিক চোখ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০৪:২৭
Share:

কনক সাহা

নাসার অতি শক্তিশালী হাবল স্পেস টেলিস্কোপ যা পারেনি, সেটাই করে দেখাল ভারতের উপগ্রহ অ্যাস্ট্রোস্যাট। ৯৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এক নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা উচ্চ ক্ষমতার অতিবেগুনি রশ্মি (এক্সট্রিম আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন) ধরা পড়েছে অ্যাস্ট্রোস্যাটের টেলিস্কোপে! মহাবিশ্বে আলোর জন্ম-বৃত্তান্ত জানার পথে যা বিশেষ কাজে আসতে পারে। এবং সেই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন এক বঙ্গসন্তান, পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স (আইইউকা)-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কনক সাহা। নেচার অ্যাস্ট্রোনমি পত্রিকায় সেই গবেষণা প্রকাশিতও হয়েছে।

Advertisement

আইইউকা-র অধিকর্তা অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘বিগ ব্যাং-এর পরে পদার্থ তো তৈরি হল। কিন্তু আলো কোথায়? ওই সময়কে বলা হয় মহাবিশ্বের অন্ধকার যুগ বা ডার্ক এজ। সেই অন্ধকার যুগ থেকে আলো তৈরি হওয়া এটাই ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাসের এক অজানা সময়। কনকদের গবেষণা তা-ই দেখিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটাই এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম আলোর উৎস। তবে ভবিষ্যতে হয়তো এর থেকেও পুরনো কোনও উৎস মিলতে পারে।’’

২০১৫-য় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) পাঠানো অ্যাস্ট্রোস্যাট কৃত্রিম উপগ্রহে ওই অতিবেগুনি রশ্মির অস্তিত্ব ধরতে সক্ষম টেলিস্কোপটি তৈরিও করেছিলেন আইইউকা এবং বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সের বিজ্ঞানীরা। সেই দলের অন্যতম আইইউকার এমিরেটাস অধ্যাপক শ্যাম টন্ডনও এই গবেষণায় যুক্ত। যুক্ত রয়েছেন ফ্রান্স, জাপান, আমেরিকা ও নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: সূর্যের করোনার প্রথম মানচিত্র আঁকলেন দুই বাঙালি

আরও পড়ুন: ‘চাঁদের বাড়ি’র জন্য এই প্রথম মহাকাশের ইট বানাল ইসরো, আইআইএসসি

অতিবেগুনি রশ্মির বেশির ভাগটাই পৃথিবীকে মুড়ে রাখা ওজ়োন স্তর ভেদ করে নামতে পারে না। ফলে এই রশ্মির সুলুকসন্ধান জানতে হলে সেটা করতে হয় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরে মহাকাশ থেকে। কনকবাবুদের কাজটি সম্ভব করেছে মহাকাশে থাকা অ্যাস্ট্রোস্যাটের যান্ত্রিক চোখ। ২০১৬-র অক্টোবরে ২৮ ঘণ্টা ধরে তাঁরা ওই রশ্মিকে পর্যবেক্ষণ করেন। নাসার হাবল টেলিস্কোপ চিহ্নিত মহাকাশের অতি গভীর অংশকে বলা হয় ‘হাবল এক্সট্রিম ডিপ স্পেস’। যার মধ্যে অন্তত ১০ হাজার নক্ষত্রপুঞ্জ থাকতে পারে। তেমনই একটি নক্ষত্রপুঞ্জ ‘AUDFs01’ থেকে আসা রশ্মি ধরা পড়েছে অ্যাস্ট্রোস্যাটের চোখে। কিন্তু সেই রশ্মি যে ৯৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ‘AUDFs01’ নামের কোনও নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসছে, বিশ্লেষণ করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পাক্কা দু’বছর লেগেছে।

কনকবাবুরা যে রশ্মিকে দেখেছেন, নক্ষত্রপুঞ্জ ‘AUDFs01’ থেকে অ্যাস্ট্রোস্যাটে আসতে তার সময় লেগেছে ৯৩০ কোটি বছর। ফলে ৯৩০ কোটি বছর আগে ওই নক্ষত্রপুঞ্জে কী ঘটেছিল, তারই তথ্য লুকিয়ে রয়েছে ওই রশ্মিতে। কখন ও কী ভাবে আলোর সৃষ্টি হল, সেটা জানার রাস্তা হল সেই সময়ের আলো বা তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গকে খুঁজে পাওয়া। রশ্মি বা তরঙ্গ যত দূর থেকে আসবে, ততই পুরনো সেটি। ফলে কাজটি অনেক বেশি কঠিন ছিল। কনকবাবুরা জানতেন, নাসার অনেক বড় ও বেশি ক্ষমতার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ যা পারেনি, তাঁরা তাদের কম ক্ষমতার ‘আল্টাভায়োলেট (রে) ইমেজিং টেলিস্কোপ তথা ইউভিআইটি’ দিয়ে করতে পেরেছেন— দুনিয়াকে এটা বিশ্বাস করানো শক্ত কাজ। ফলে অনেক বেশি সতর্ক ভাবে এগোতে হয়েছে তাঁদের। কনকবাবু বলছেন, ‘‘গ্যালাক্সি হল প্রচুর তারার সমষ্টি এবং তারার শক্তির মূল হচ্ছে হাইড্রোজ়েন। এই নক্ষত্র সৃষ্টির সময় প্রচুর পরিমাণে অতিবেগুনি রশ্মি সৃষ্টি হয়। সেটাই ধরা গিয়েছে যা আগামী দিনে এই মহাবিশ্বের রহস্য সমাধানে বিজ্ঞানীদের প্রচুর সাহায্য করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন