Dengue

‘পরিবর্তিত’ মশায় কি ডেঙ্গি কমছে কলম্বিয়ায়

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এক বার ওলবাকিয়া ব্যাক্টিরিয়া এডিস ইজিপ্টাই মশাদের শরীরে ঢুকিয়ে দিলে তাদের বংশধরেরাও স্বাভাবিক নিয়মেই ওই ব্যাক্টিরিয়া বহন করে থাকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এডিস ইজিপ্টাই মশা। তবে তারা ‘পরিবর্তিত’। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘মডিফায়েড’। মানে ওলবাকিয়া নামে একটি ব্যাক্টিরিয়া তাদের শরীরে ঢোকানো হয়েছে। মূলত ডেঙ্গি, জ়িকার মতো ভাইরাস মানবদেহে ছড়ানো প্রতিরোধ করে থাকে ওই ব্যাক্টিরিয়া। আর সেই ওলবাকিয়া ব্যাক্টিরিয়ার কারসাজিতেই কলম্বিয়ার অন্তত তিনটি শহরে গত কয়েক বছরে ডেঙ্গির প্রকোপ কমেছে ৯৪ থেকে ৯৭ শতাংশ। বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের দাবি অন্তত তেমনটাই।

Advertisement

সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যেখান থেকেই জানা গিয়েছে পরিবর্তিত মশাদের এই কারসাজি। ‘ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রাম’ বা ডব্লিউএমপি নামে একটি অলাভজনক সংস্থা কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজ়িল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং কলম্বিয়ার মতো দেশে একটি নতুন ধরনের পরীক্ষা চালাচ্ছে। যার মধ্যে কলম্বিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এলাকায় ওলবাকিয়া ব্যাক্টিরিয়া বহনকারী পরিবর্তিত মশাদের ছাড়া হয়। সেই পরীক্ষার ফলাফল দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত ক’বছরে অন্তত তিনটি শহরে তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, ডেঙ্গির প্রকোপ কমেছে ৯৪-৯৭ শতাংশ।

মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডব্লিউএমপি-র সঙ্গে যুক্ত এপিডেমিয়োলজিস্ট কেটি অ্যান্ডের্স জানিয়েছেন, কলম্বিয়ার যে জনবহুল এলাকায় ওলবাকিয়া ব্যাক্টিরিয়া বহনকারী মশা ছাড়া হয়েছিল, তা ছিল গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রকল্প। গত ২২ অক্টোবর শিকাগোর ‘আমেরিকান সোসাইটি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে তাঁদের সংস্থার করা পরীক্ষার এই আশ্চর্যজনক ফল পেশ করেন কেটি।

Advertisement

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এক বার ওলবাকিয়া ব্যাক্টিরিয়া এডিস ইজিপ্টাই মশাদের শরীরে ঢুকিয়ে দিলে তাদের বংশধরেরাও স্বাভাবিক নিয়মেই ওই ব্যাক্টিরিয়া বহন করে থাকে।

২০১৫ সালে প্রথম বারের জন্য কলম্বিয়ার আবুরা উপত্যকায় এই পরিবর্তিত মশাদের ছেড়েছিল ডব্লিউএমপি। তার পরে পাঁচ বছর ধরে ধীরে ধীরে কলম্বিয়ার আরও নানা জায়গায় এই ধরনের মশাদের ছাড়া হয়। বেলো, মাডেলিন, ইটাগুই। একে একে অন্তত ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যেখানে অন্তত ৩০.৩ লক্ষ মানুষ থাকেন, পরীক্ষা শুরু করা হয় মশাদের নিয়ে। যে এলাকায় অন্তত ৬০ শতাংশ মশা পরিবর্তিত, সেই এলাকাতেই তাদের প্রকল্প পুরোপুরি সম্পূর্ণ বলে দাবি করে থাকেন গবেষকেরা। বেলো, ইটাগুইয়ে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও মাডেলিনে অত পরিমাণ মশা ছাড়া সম্ভব হয়নি বলে দাবি গবেষকদের। কেটি জানাচ্ছেন, পরিবর্তিত মশা ছাড়ার আগে এবং পরে কলম্বিয়ার এই সব শহরের পরিসংখ্যান নিয়ে তাঁরা দেখেছেন, গত ৬ বছরে বেলো এবং মাডেলিনে ৯৭ শতাংশ এবং ইটাগুইয়ে ডেঙ্গির প্রকোপ কমেছে ৯৫ শতাংশ। কেটির কথায়, ‘‘ওলবাকিয়ার আসল প্রভাব এ বার আমরা দেখতে শুরু করেছি।’’

তবে নিজেদের পরীক্ষা নিয়ে কেটিরা উচ্ছ্বসিত হলেও এখনই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা উচিত হবে না বলে মনে করছেন এপিডেমিয়োলজিস্টদের একাংশ। ইন্ডিয়ানার নোত্র দাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিয়োলজিস্ট অ্যালেক্স পার্কিন্সের বক্তব্য, হতেই পারে কাকতালীয় ভাবে ওই সব এলাকার ডেঙ্গির প্রকোপ গত কয়েক বছরে কমের দিকে। এ নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। তবে ডব্লিউএমপি-র এই কাজ যথেষ্ট প্রশংসাযোগ্য বলেও জানিয়েছেন অ্যালেক্স।

ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগাকার্তা এলাকায় একই ধরনের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে সেখানে ডেঙ্গির প্রকোপ কমেছে ৭৭ শতাংশ। এই ধরনের পরীক্ষা চলছে ব্রাজ়িলের কিছু শহরেও। তবে ডব্লিউএমপি-র এই সাফল্য দাবির পরেও ওলবাকিয়া ব্যাক্টিরিয়াকে এখনই স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাতে দমছে না ডব্লিউএমপি। তারা ব্রাজ়িলের কারখানায় পরিবর্তিত মশা তৈরির ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। তবে তাদের সামনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও। কারণ গবেষকদের একাংশই বলছেন, সব দেশের ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং অবস্থান এই পরীক্ষা চালানো জন্য অনুকূল না-ও হতে পারে। আছে আরও অন্যান্য বাধাও। মশাবাহিত রোগ বিশেষজ্ঞ লুসিয়ানো মোরেইরা যেমন জানালেন, ব্রাজ়িল জুড়ে এই ধরনের পরীক্ষা চালানোর মতো লোকবল তাঁদের নেই। অন্য জায়গা থেকে কর্মী এনে এই পরীক্ষা চালাতে হবে তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন