শুঁড়ে তুলে হাতি ছুড়ে ফেলল প্রৌঢ়াকে

হাতির শুঁড়ে চেপে দোল খেতে হবে সেটা কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেননি ষাটোর্ধ্ব ফুলমণি দাস। বুধবার গভীর রাতে সেই আতঙ্কের অভিজ্ঞতার পর থেকে কেবলই তাঁর মাথা ঘুরছে বন বন করে। রাতের কথা ভাবলেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে চোখমুখ। হাতিবাবাজি তো কেবল দোল খাইয়েই ছাড়ে নি। ফুলমণিদেবীকে শুঁড়ে তুলে বার কয়েক পেন্ডুলামের মতো ঘুরিয়ে তারপর ধাঁ করে ছুড়ে দিয়েছিল বেশ কিছুটা দূরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৩৯
Share:

ফুলমণি দাস। — নিজস্ব চিত্র।

হাতির শুঁড়ে চেপে দোল খেতে হবে সেটা কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেননি ষাটোর্ধ্ব ফুলমণি দাস। বুধবার গভীর রাতে সেই আতঙ্কের অভিজ্ঞতার পর থেকে কেবলই তাঁর মাথা ঘুরছে বন বন করে। রাতের কথা ভাবলেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে চোখমুখ। হাতিবাবাজি তো কেবল দোল খাইয়েই ছাড়ে নি। ফুলমণিদেবীকে শুঁড়ে তুলে বার কয়েক পেন্ডুলামের মতো ঘুরিয়ে তারপর ধাঁ করে ছুড়ে দিয়েছিল বেশ কিছুটা দূরে। বরাত জোরে ঘন ঝোপের মধ্যে পড়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তবে শুঁড়ের চাপে ও ছিঁটকে পড়ে গিয়ে বাম পা এবং কোমরে বেশ চোট লেগেছে। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বিছানায় বসেও হাতির আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না ফুলমণিদেবীর।
বুধবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ায় রেসিডেন্ট হাতির এমন দস্যিপনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবারের রাতে দু’টি রেসিডেন্ট দাঁতাল আচমকা ঢুকে পড়ে মানিকপাড়া রামকৃষ্ণ বাজারের লাগোয়া এলাকায়। ওই এলাকায় বেশ কিছু খেটে খাওয়া পরিবারের বাস। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া একটি ছিটেবেড়ার মাটির ঘরে একাই থাকেন বিধবা ফুলমণিদেবী। মানিকপাড়ার সব্জি বাজারে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে প্রতিদিন পেঁয়াজ বাছার কাজ করেন তিনি। কিছুটা দূরে আলাদা বাড়িতে থাকেন ফুলমণিদেবীর মেয়ে পেশায় সব্জি বিক্রেতা ঊষা দাসগিরি।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, সারা দিনের হাড় ভাঙা খাটুনির পরে রাতে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। এমন সময় কয়েকটি মাটির বাড়িতে খাবারের খোঁজে হানা দেয় দু’টি হাতি। উচ্চ রক্তচাপের জন্য ফুলমণিদেবীর শরীর ভাল ছিল না। রাতে আলু-মটরের তরকারি দিয়ে মাত্র একটা রুটি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত ১টা নাগাদ কোলাহলে ঘুম ভেঙে যায় বৃদ্ধার। আর প্রায় তখনই হুড়মুড় করে তাঁর মাটির ঘরের দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়ে। ফুলমণিদেবী বলেন, “প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে দেখি, একটা দাঁতাল ঘরের দেওয়াল ভেঙে শুঁড় ঢুকিয়ে খাবার খুঁজছে। হাতি দেখে পড়শিরাও ঘরদোর ফেলে ছুটে পালাতে থাকেন। আমিও পড়শিদের পিছু নেওয়ার জন্য ছুটতে থাকি। কিন্তু ততক্ষণে আর একটা হাতি যে সামনে চলে এসেছে খেয়াল করি নি। হাতি দেখে ভয়েই চোখ বন্ধ করে উল্টে পড়ে যাই।” তারপর? ফুলমণিদেবীর কথায়, “হঠাত্‌ মাথাটা ঘুরতে থাকায় চোখ খুলে দেখি, সব কিছু যেন উল্টে গিয়েছে। হাতিটা আমার বাঁ পা’টা শুঁড়ে পেঁচিয়ে ধরে শূন্যে দোলাতে থাকায় অমন মনে হচ্ছিল। প্রাণের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তখনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”

ফুলমণিদেবীর পড়শি ঝুনু লোধা বলেন, ফুলমণি মাসির একটি পা শুঁড়ে পেঁচিয়ে হাতিটি তাঁকে শূন্যে তুলে নেয়। তারপর কয়েক বার দুলিয়ে তাঁকে ছুড়ে দেয় ঝোপের দিকে। দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে হাড় হিম হয়ে যায়।” ফুলমণিদেবীর মেয়ে ঊষা দাসগিরি বলেন, “আমার মা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। বরাত জোরেই তিনি বেঁচে গিয়েছেন।” খবর পেয়ে রাতেই বনকর্মীরা মানিকপাড়ায় ছুটে যান। হাতি দু’টিকে গোবিন্দপুরের জঙ্গলের দিকে খেদিয়ে দেওয়া হয়। ফুলমণিদেবীকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

বন দফতর সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে খড়্গপুরের শঙ্করবনির জঙ্গল থেকে আসা ওই দু’টি রেসিডেন্ট দাঁতাল ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে। বনকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, সাধারণত, হাতি চট করে কাউকে আঘাত করে না। হাতির শুঁড়ে উঠে ফুলমণিদেবী সংজ্ঞা হারানোয় প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা নেই বুঝেই সম্ভবত হাতিটি তাঁকে ছুড়ে দিয়েছিল।

ঝাড়গ্রামের ডিএফও ধর্মদেও রাই বলেন, “ওই বৃদ্ধার চিকিত্‌সার খরচ বহন করবে বন দফতর। আঘাতের গুরুত্ব অনুযায়ী তাঁকে আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে।” বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের শয্যায় বসে ফুলমণিদেবী বলেন, “এমন অভিজ্ঞতা যেন আর কারও না হয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন