সহকারী চাই, বই শেষ করব, যন্ত্রে ভেসে উঠল ‘কথা’

হকিংয়ের মাথাও তখন এক দিকে কিছুটা পড়ে গিয়েছে। মুখ নড়ে না। কথা বলার চেষ্টা করলে, শুধু গালের একটিমাত্র পেশি কাজ করে। ওই পেশির কম্পনই পড়ে ফেলত সফ্‌টঅয়্যার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০৪:০০
Share:

তেইশে প্রথম বিয়ে হকিংয়ের। পাশে স্ত্রী জেন ওয়াইল্ড।

স্নায়ুর অসুখে হুইলচেয়ারে বন্দি ছিলেন ২১ বছর বয়স থেকেই। কথাগুলোও অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। সেটাও হল, ১৯৮৫-তে।

Advertisement

সে বার সার্নের অনুষ্ঠানে জেনেভায় গিয়েছেন স্টিফেন হকিং। হঠাৎই নিউমোনিয়া হল। পরিস্থিতি এমন আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়ায় যে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে ট্রাকিওকটমি করতে হয়েছিল, মানে গলায় গর্ত করে তার ভিতর দিয়ে ‘উইন্ডপাইপ’ ঢুকিয়ে দেওয়া। তাতেই চলে গেল বাকশক্তি।

বানান লেখা কার্ড ব্যবহার করে কথা বলা শুরু করলেন হকিং। ধৈর্য ধরে এক-এক করে বর্ণ দেখাতেন। চোখের চাহনিতে বোঝানোর চেষ্টা করতেন, কী বলতে চান। হকিংকে না জানিয়েই বন্ধু পদার্থবিদ মার্টিন কিং যোগাযোগ করলেন ক্যালিফোর্নিয়ার সংস্থা ‘ওয়ার্ডপ্লাস’-এর সঙ্গে।
তারা ‘ইকুয়ালাইজার’ নামে একটি প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছিল, সেখানে হাতে রাখা যন্ত্রে ক্লিক করে কম্পিউটারের মাধ্যমে শব্দ বা কথা বোঝানো যায়।

Advertisement

হকিংয়ের জন্য ‘ইকুয়ালাইজার’-এর সঙ্গে যুক্ত করা হল ‘স্পিচপ্লাস’ নামে একটি সংস্থার তৈরি যন্ত্র ‘স্পিচ সিন্থেসাইজার’। হুইলচেয়ারের একটি হাতলে লাগিয়ে দেওয়া হল সেটি। হাতের যন্ত্রে মগজের শব্দ কম্পিউটার-বন্দি হল। সিন্থেসাইজার মারফত ভেসে উঠল সেই কথা। এক মিনিটে ১৫টি পর্যন্ত যান্ত্রিক শব্দ প্রকাশ করতে পারতেন হকিং। এতে তাঁর প্রথম বলা কথাই ছিল— ‘‘এক জন সহকারী দরকার, ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ শেষ করতে হবে।’’

১৯৯৭ সালে হকিংয়ের সঙ্গে দেখা হল ‘ইনটেল’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুরের। তিনি প্রস্তাব দেন, ‘‘মাইক্রোপ্রসেসর সমেত আমাদের আসল কম্পিউটার ব্যবহার করুন।’’ এর পর থেকে হকিংকে যাবতীয় প্রযুক্তিগত সাহায্য করে গিয়েছে ইনটেল। প্রতি দু’বছর অন্তর তাঁর কম্পিউটার বদলে দিত তারা। ২০০৮ সালে ফের ধাক্কা। হাতের সাড়ও গেল।

আরও পড়ুন : স্টিফেন হকিং এক বিস্ময় প্রতিভার নাম

সদ্য গ্র্যাজুয়েট হওয়া হকিংয়ের সহকারীটি তখন ‘চিক স্পিচ’ নামে যন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন। ইনফ্রারেড রশ্মির সাহায্যে কাজ করে সেটা। হকিংয়ের চশমার সঙ্গে লাগানো হল যন্ত্রটা। অন্য অংশ সফ্‌টঅয়্যার-সমেত লাগানো হল গালে। হকিংয়ের মাথাও তখন এক দিকে কিছুটা পড়ে গিয়েছে। মুখ নড়ে না। কথা বলার চেষ্টা করলে, শুধু গালের একটিমাত্র পেশি কাজ করে। ওই পেশির কম্পনই পড়ে ফেলত সফ্‌টঅয়্যার।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর শেষ স্টেশন পেরিয়ে গেলেন হকিং

কিন্তু ২০১১ থেকে ক্ষীণ হতে থাকে সেই শক্তিও। মিনিটে মাত্র দু’টি শব্দ বলতে পারতেন। মুরকে লিখলেন, ‘‘কথা বলার গতি খুব কমে গিয়েছে। আপনার সংস্থা কি সাহায্য করতে পারে?’’ মুরের নির্দেশে হকিংয়ের ৭০তম জন্মদিনে ইনটেলের গোটা ল্যাব চলে গিয়েছিল কেমব্রিজে। কিন্তু লাভ হয়নি। হকিং নিজেই বলতেন, ‘‘মানুষের মস্তিষ্ক হল আসল কম্পিউটার। যখন ওর অংশগুলো খারাপ হয়ে যাবে, কম্পিউটার কাজ করা থামিয়ে দেবে। ভাঙা কম্পিউটার কি পুনর্জীবন পায়? না স্বর্গে যায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন