ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি বাঙালির

দেহে নাভির নীচের অংশে যে নানা ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে, সেই আক্রান্ত কোষগুলিকে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার একটি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন সার্জিক্যাল অঙ্কোলজির ওই বাঙালি চিকিৎসক। যে পদ্ধতিকে কুর্নিশ করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বও।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

মুকুরদীপি রায়

কার্গিলের হাসপাতালে দাঁড়িয়ে দিন-রাতের একটাই ব্রত ছিল আহত সৈনিকদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা। লড়াইটা আজও বজায় রেখেছেন তিনি। তবে যুদ্ধক্ষেত্র আজ আর কার্গিল নয়, লড়াইয়ের ময়দান এখন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)। লক্ষ্য একটাই, কী ভাবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের অল্প সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়।

Advertisement

সে কাজে আজ অনেকটাই সফল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির ছেলে মুকুরদীপি রায়। দেহে নাভির নীচের অংশে যে নানা ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে, সেই আক্রান্ত কোষগুলিকে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার একটি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন সার্জিক্যাল অঙ্কোলজির ওই বাঙালি চিকিৎসক। যে পদ্ধতিকে কুর্নিশ করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বও।

দু’বছর আগে তাঁর ‘রিভার ফ্লো’ পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয় ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব মেথোডলজি’। তার পর গত দু’বছর ধরে সেই পদ্ধতি মেনে শুরু হয় প্রয়োগ। গত দু’বছরে প্রায় ১০৫টি ছোট-বড় অস্ত্রোপচার করেছেন একাধিক জাতীয়-আন্তর্জাতিক পদকপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক। গত মে মাস পর্যন্ত ১০৫টি অস্ত্রোপচারে সাফল্য আসায় ‘রিভার ফ্লো’র প্রয়োগকেও স্বীকৃতি দিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব সার্জারি’।

Advertisement

প্রথাগত পদ্ধতিতে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে কোমরের নীচে অস্ত্রোপচার করলে ক্ষতস্থান শুকোতে দীর্ঘ সময় লাগে। মুকুরদীপি রায় বলেন, ‘‘অর্ধেকের বেশি রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অস্ত্রোপচারের পরে আবার সেই ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হওয়ায় রোগীরা ফের হাসপাতালে ফিরে আসেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেলাইয়ের স্থানের চামড়া গলে যায়। ফলে শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়ার সঙ্গে পেশি তুলে নিয়ে এসে সেই ক্ষতস্থান ভরতে হয়। এতে এক দিকে সেই রোগী ও তাঁর পরিবারের হয়রানি হয়। অন্য দিকে পুরনো রোগীরা হাসপাতালে থাকার ফলে জায়গা পান না নতুনরা। মুকুরদীপির দাবি, ‘‘আমার নতুন পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের স্থান এমন ভাবে নির্বাচন করা হয় যাতে ধমনী কেটে না যায়।’’ এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের পরে ক্ষতস্থানে চামড়া পচে যাওয়ার একটি ঘটনাও ঘটেনি বলে তাঁর দাবি। এইমসের নীতি কমিটি ওই পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেই একশোর উপরে রোগীর উপর প্রয়োগ করে প্রতিটিতে সাফল্য পান তিনি। অ্যানোরেক্টাল, গাইনোকলোজিক্যাল ক্যানসারের ক্ষেত্রেও ওই নতুন পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ও এতে রোগীদের বেঁচে থাকার মেয়াদও অনেক বেড়ে যায় বলে দাবি ভারতীয় সেনার ওই প্রাক্তন মেজরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন