Antarctica Ice

বিশ্বের বৃহত্তম তুষার মরুভূমি, তবে গুরুত্বপূর্ণ এক অংশেই নেই বরফ! নয়া গবেষণায় বিপদের শঙ্কা বিজ্ঞানীদের

আন্টার্কটিকা নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীদের একাংশ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই অঞ্চলে বরফকণার পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। যে সমস্ত কণা বরফ জমাট বাঁধানোর জন্য প্রয়োজন, সেই সমস্ত কণার অভাব দেখা দিয়েছে বেশ কিছু অংশে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৪
Share:

আন্টার্কটিকার তুষারাবৃত মরুভূমি বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রে। — ফাইল চিত্র।

বিশ্বের বৃহত্তম তুষার মরুভূমি আন্টার্কটিকা। মাইলের পর মাইল শ্বেতশুভ্র বরফ। এই জনশূন্য তুষারাবৃত মহাদেশটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই। নতুন গবেষণায় সেখানেই খানিক বিপদের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আন্টার্কটিকার খুব গুরুত্বপূর্ণ এক অংশে বরফ প্রায় নেই বললেই চলে। আপাতত তাতে সমস্যা না-হলেও আগামী দিনে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব তীব্র হলে এই অঞ্চলের জলবায়ু প্রভাবিত হতে পারে।

Advertisement

আন্টার্কটিকার মেঘ নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীদের একাংশ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই অঞ্চলের মেঘে বরফকণার পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। যে সমস্ত কণা মেঘে বরফ জমাট বাঁধানোর জন্য প্রয়োজন, সেই সমস্ত কণার অভাব দেখা দিয়েছে আন্টার্কটিকার বেশ কিছু অংশে। আগামী দিনে তা ভূখণ্ডটির বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তার উপরে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব তৈরি করতে পারে বিপজ্জনক কোনও পরিস্থিতি।

মেঘের ভিতরে বরফের স্ফটিককণা তৈরির জন্য বেশ কিছু সূক্ষ্ম বহিরাগত কণার প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে খনিজ ধুলো, বাতাসের সঙ্গে উড়ে আসা মাটি, ছাই থাকতে পারে। থাকতে পারে জীবন্ত কোনও প্রাণীর থেকে আসা প্রোটিন সমৃদ্ধ কণা। এগুলিকে আইস নিউক্লিয়েটিং পার্টিক্‌ল বা আইএনপি বলা হয়। মেঘ সাধারণত তেমন ঠান্ডা হয় না। কিন্তু আন্টার্কটিকার আকাশে মেঘের মধ্যে বাতাসে ভাসমান এই ধরনের কণার সাহায্যে তৈরি হয় বরফ। আন্টার্কটিকা সংলগ্ন দক্ষিণ সমুদ্রে এই কণার অভাবই ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের।

Advertisement

আন্টার্কটিকার বিভিন্ন অংশ থেকে বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন জার্মানির একদল গবেষক। নমুনা পরীক্ষা করে তাঁরা বিস্মিত। জার্মানির লেইবনিজ় ইনস্টিটিউটের গবেষক হেইকে ওয়েক্স বলেন, ‘‘বহিরাগত কণা বা আইএনপি-র বাহুল্য হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে ওই অঞ্চলে জৈবিক উপাদানের অভাব।’’ বরফের ঘনত্ব সবচেয়ে কম ছিল আন্টার্কটিকার দক্ষিণতম দু’টি স্থানে। আগামী দিনে তা মহাদেশটির বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জার্মানির বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে জিওফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটার্‌স পত্রিকায়। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, আন্টার্কটিকার এই ‘অস্বাভাবিক’ মেঘের উপকারিতাও রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই মেঘই এখনও পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়নের তাপ থেকে রক্ষা করে চলেছে সমগ্র দক্ষিণ গোলার্ধকে। মেঘে বরফকণা কমে গেলে জলের তরল কণা বেড়ে যায়। এই অতি-শীতল জলকণাবাহিত আন্টার্কটিকার মেঘ সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে মহাকাশে ফিরিয়ে দেয়। দক্ষিণ গোলার্ধ বেঁচে যায় সূর্যের তাপ থেকে! যদিও দক্ষিণ গোলার্ধের এই ‘রক্ষাকবচ’ বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে বলে মত গবেষকদের একাংশের। তাঁরা মনে করছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আন্টার্কটিকার মেঘে বরফের ঘনত্ব বাড়বে। তাপ তখন আর প্রতিফলিত হয়ে মহাকাশে ফিরে যেতে পারবে না। গবেষক সিলভিয়া হেনিংয়ের কথায়, ‘‘বরফের নিউক্লিয়াসের ঘনত্ব বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বেড়ে যেতে পারে। হিমবাহগুলি আরও বেশি করে আন্টার্কটিকার ভূখণ্ডকে নিয়ে আসবে গাছপালা, জীবজগতের কাছাকাছি। তাতে আখেরে বিপদ বাড়বে।’’ আগামীর সেই বিপদ এড়াতে এখন থেকেই আন্টার্কটিকায় গবেষণার জোর বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, যত দ্রুত এই বরফ মরুভূমির পরিবেশ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে, যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করা যাবে, তত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আভাস স্পষ্ট হবে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা যাবে। তাই আন্টার্কটিকায় গবেষণার মাধ্যমে আরও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement