Science News

আজ রাতে আপনি কোথায় আছেন? জেনে নিন কেমন দেখবেন চন্দ্রগ্রহণ

দেশের পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রধান সংগঠন ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’ (এএসআই)-এর তরফে জানানো হয়েছে, শুধু কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ নয়, শতাব্দীর এই বিরল দু’টি মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে পারবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাদে গোটা ভারত। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। বাংলা থেকে মুম্বই, গুজরাত, রাজস্থান, সর্বত্রই দেখা যাবে এই দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। দেখতে পারবেন এশিয়া, আফ্রিকার একাংশের এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের মানুষও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ১৬:১৩
Share:

আবহাওয়া কেমন থাকবে কে জানে! বাদল মেঘে ঢাকা গোটা আকাশ। তবে কলকাতা-সহ এ বার গোটা ভারতের ওপরেই ‘কৃপাদৃষ্টি’ ছিল চাঁদের! আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখতে পারবেন আজ, শুক্রবার রাত থেকে কাল, শনিবার ভোর পর্যন্ত এই শতাব্দীর (২০০১ থেকে ২১০০ সাল) দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ধরে। দেখতে পারবেন গত প্রায় ৬০ হাজার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসা ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলকে রাতের আকাশে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠতে।

Advertisement

দেশের পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রধান সংগঠন ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’ (এএসআই)-এর তরফে জানানো হয়েছে, শুধু কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ নয়, শতাব্দীর এই বিরল দু’টি মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে পারবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাদে গোটা ভারত। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। বাংলা থেকে মুম্বই, গুজরাত, রাজস্থান, সর্বত্রই দেখা যাবে এই দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। দেখতে পারবেন এশিয়া, আফ্রিকার একাংশের এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের মানুষও।

সল্টলেকের পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানাচ্ছেন, টানা প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে হবে চন্দ্রগ্রহণ। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা (অঙ্কের সঠিক হিসেবে, ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট) ধরে চাঁদ পুরোপুরি ঢেকে যাবে পৃথিবীর ছায়ায়। আর তার আগে ও পরে দু’-দু’বার হবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। দু’টি আংশিক চন্দ্রগ্রহণই হবে ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট ধরে।

Advertisement

আরও পড়ুন- আজ চন্দ্রগ্রহণ: এমন বিরল মহাজাগতিক ঘটনা ফের ১০৫ বছর পর!​

আরও পড়ুন- চাঁদ কেন হয়ে যাবে ব্লাড মুন? কেন এত উজ্জ্বল হবে মঙ্গল?​

যার মানে, পূর্ণ আর আগে-পরের দু’-দু’টি আংশিক চন্দ্রগ্রহণ মিলে মোট ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট (১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট + ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট + ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট) আলো-আঁধারিতে ঢাকা থাকবে চাঁদ।

কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা, জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারি জানিয়েছেন, আগামী ২৭ জুলাই, শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত ১১.৫৪ মিনিটে শুরু হবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। চলবে রাত ১টা পর্যন্ত। তার পর রাত ১টায় শুরু হবে শতাব্দীর দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তা শেষ হবে রাত ২.৪৩ মিনিটে। রাত ২.৪৩ মিনিটে ফের শুরু হবে আংশিক গ্রাস। যা শেষ হবে রাত ৩.৪৯ মিনিটে।

সূর্য, পৃথিবী (মাঝে) আর চাঁদ যে ভাবে থাকলে হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ

প্রতিবেশী ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলও পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়বে শুক্রবার। কারণ, কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে ওই দিনই পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে সূর্যের ঠিক উল্টো দিকে চলে যাবে মঙ্গল, আর ১০০ বছরের মধ্যে যেখানে ‘উপনিবেশ’ বানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে মানবসভ্যতার। ফলে, ২৭ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ২৮ জুলাই (শনিবার) ভোর পর্যন্ত মঙ্গলকে জ্বলজ্বল করতে দেখা যাবে আকাশে। গ্রহণের রাতে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়লে মঙ্গলকে আরও ভাল ভাবে নজরে পড়বে।

আরও পড়ুন- শুক্রবার চার ঘণ্টার চন্দ্রগ্রহণ, কোথা থেকে কেমন দেখতে পাবেন, জেনে নিন​

আরও পড়ুন- পৃথিবীতে এক দিন আর কোনও গ্রহণই হবে না!​

যদিও ‘লাল গ্রহ’ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে ৩১ জুলাই, আগামী মঙ্গলবার। সে-দিন পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব হবে প্রায় পাঁচ কোটি ৭৬ লক্ষ কিলোমিটার।

এর আগে, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ধরে চলেছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তার ১১ বছর পর, ২০১১ সালের ১৫ জুন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে। এ বার সব ‘রেকর্ড’ ভেঙে চন্দ্রগ্রহণ হবে ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটের।

ভারতে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই একটি চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে, তবে তা আংশিক। ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি হবে আরও একটি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তবে তা ভারত থেকে দেখা যাবে না।

‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল

সঞ্জীব জানাচ্ছেন, মঙ্গল উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে সূর্যকে। তার ফলে, মঙ্গল তার কক্ষপথে এক বার সূর্যের নিকটতম বিন্দুতে (পেরিহিলিয়ন) থাকে। আর এক বার থাকে দূরতম (অ্যাপিহিলিয়ন) বিন্দুতে। মঙ্গল তার কক্ষপথে পেরিহিলিয়ন বিন্দুতে থাকার কাছাকাছি সময় যদি প্রতিযোগ হয়, তা হলে মঙ্গল আরও কাছে চলে আসে পৃথিবীর। এটাকেই বলে, ‘ফেভারেব্‌ল অপোজিশন বা সুবর্ণ প্রতিযোগ’। ২৭ জুলাই এই সুবর্ণ প্রতিযোগই হবে মঙ্গলের। তার ফলে, ‘লাল গ্রহ’কে আরও উজ্জ্বল দেখাবে রাতের আকাশে।

দেবীপ্রসাদ বলছেন, ‘‘মঙ্গল তার কক্ষপথে পেরিহিলিয়ন বিন্দুতে থাকবে ১৬ সেপ্টেম্বর। মঙ্গলের এই সুবর্ণ প্রতিযোগ হয় প্রতি ১৫ বা ১৭ বছর অন্তর। পরবর্তী সুবর্ণ প্রতিযোগ হবে ১৭ বছর পর। ২০৩৫-এর ১১ সেপ্টেম্বর। তখন মঙ্গল ও পৃথিবীর দূরত্ব কমে হবে প্রায় ৫ কোটি ৬৯ লক্ষ কিলোমিটার।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক-তথ্য সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন