উলুবেড়িয়ায় সাতরঙা সৌরবলয়। ছবি: সুব্রত জানা।
পঞ্চম দফা ভোটের সকাল। এ দিনের প্রার্থী তালিকায় খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ‘নারদ ভাই’দের একটা বড় অংশ। তাই ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে টিভিতে চোখ রাখা বা পাড়ার মোড়ে আড্ডার মেজাজে জমায়েত— এটাই তো স্বাভাবিক ছিল। ফুরফুরে সকালটা শুরুও হয়েছিল অনেকটা চেনা ভঙ্গিতেই।
কিন্তু না! বেলা গড়তেই দৃশ্যটা বদলে গেল। ১৯ মে-র আগেই হিসেবটা বদলে দিলেন সূর্য!
ভুল ভাবছেন। এই সূর্য মিশ্র নন। গায়ে বিরোধী দলনেতার ট্যাগও নেই। বরং এর অবস্থান আকাশে। নিজের চারপাশে রামধনু রঙের বলয় তৈরি করে শনিবাসরীয় ভোটে লাইমলাইট একাই কেড়ে নিয়েছে সূর্য। এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখতে পথচলতি কেউ সানগ্লাস পরেই ঊর্ধ্বমুখী। আবার কেউ বা বাড়িতে এসে এক্স-রে প্লেট খুঁজতে ব্যস্ত।
এই মহাজাগতিক ‘বিস্ময়-বলয়’ কলকাতার আকাশে দেখা যেতেই সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি। কেন এমন হল, তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানা আলোচনা।
বিষয়টা ঠিক কী, বুঝিয়ে বললেন সৌর পদার্থবিদ দিব্যেন্দু নন্দী। ওই বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘এটাকে বলে ’২২ ডিগ্রি হেলো’ (আদতে ২১.৭ ডিগ্রি)। যখন বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সূর্যের আলো এসে পড়ে তখন সেখানে থাকা বরফে পড়ে সেই রশ্মি প্রতিসৃত (রিফ্র্যাক্টেড) হয়। এ ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের বরফ কণাগুলো অনেকটা প্রিজমের মতো কাজ করে। এই ‘হেলো’টা ২২ ডিগ্রি থেকে ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। তবে ২২ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানেই ওই রামধনু বা ‘হেলো’টা সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়। পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত যদি একটি সরলরেখা টানা যায়, তা হলে তার সঙ্গে ২২ ডিগ্রি কোণ করে এই প্রতিসরণটি হয়। তবে ২২ ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলে এই বলয় ততটা উজ্জ্বল ভাবে দেখা যাবে না। যেহেতে বায়ুমণ্ডলে জমা বরফ কণার জন্যই ওই প্রতিসরণ হয়, তাই এর ফলে পরে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তবে সেই বৃষ্টি কতটা হবে বা তা আদৌ হবে কি না, তা নির্ভর করে জমা বরফ কণার পরিমাণের ওপর।’’ একই কথা জানিয়েছেন, কলকাতার ‘পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’-এর ডিরেক্টর সঞ্জীব সেনও। তিনি বলেন, ‘‘ষড়ভুজ বরফের টুকরোগুলোর উপর সূর্যের আলো এসে পড়লে যে সাত রঙের বিন্যাস তৈরি হয় তাকেই সৌরবলয় বলা হয়। এই বিন্যাসের বাইরের দিকে থাকে দৃশ্যমান আলোর বেগুনি অংশটি আর ভেতরের দিকে থাকে লাল।’’
আরও পড়ুন, মহাকাশে শীতলতম অঞ্চলের খোঁজ শুরু নাসার, দেখুন ডকুমেন্টারি