C-Section Delivery

১৬ বছরে ৮ থেকে ২১ শতাংশ! ক্রমশ সিজ়ারিয়ান প্রসব বাড়ছে রাজ্য তথা দেশে, কেন উদ্বেগের?

জানা যাচ্ছে, যে হাসপাতালে ৩০টি সিজ়ারিয়ান প্রসব হয়, সেখানে স্বাভাবিক প্রসব হয় মাত্র ১০টি। একই পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য বড় শহরেও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৮
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

দেশে যথেচ্ছ ভাবে বাড়ছে সি-সেকশন বা সিজ়ারিয়ান প্রসব। ঝুঁকি এড়াতে গিয়ে এ ধাঁচের প্রসব উল্টে মা-সন্তানের বিপদ বাড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ল্যান্সেটের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ২০০৫ সালে যেখানে ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে সি-সেকশনের কারণে শিশু জন্মের হার ছিল ৮.৫ শতাংশ, তা ২০২১ সালে হয় ২১ শতাংশ।

Advertisement

সিজ়ারিয়ান প্রসব বা সংক্ষেপে সি-সেকশন হল শল্যচিকিৎসা এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে মা-শিশুর জীবন রক্ষার্থে বা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়াতে মায়ের পেট ও জরায়ুতে একটি বিশেষ ছিদ্র তৈরি করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুকে জন্ম দেওয়া হয়। সোজা কথায়, স্বাভাবিক ভাবে প্রসব করানো সম্ভব না-হলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনও দেশের মোট প্রসবের মধ্যে সি-সেকশন প্রসব ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। সেখানে গত কয়েক বছরে ভারতে সিজ়ারিয়ান প্রসবের পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

হালে সি-সেকশন প্রসবের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কলকাতাতেও। ‘টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দু’মাসে কলকাতার হাসপাতালগুলির ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শয্যায় ছিলেন সিজ়ারিয়ান প্রসবের জন্য আসা প্রসূতিরা। কলকাতার একটি নামকরা হাসপাতালের তথ্য দিয়েছে ‘টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া।’ সেখানে বলা হয়েছে, গত ১ মাসে ৮০টি সিজ়ারিয়ান প্রসব হয়েছে। কখনও কখনও দিনে পাঁচটির বেশি সি-সেকশন ডেলিভারি হয়েছে। কলকাতার আর একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা মাসে ৬০-৭০টি সি-সেকশন প্রসব করায়। পরিসংখ্যানের তুলনাটা কেমন? জানা যাচ্ছে, যে হাসপাতালে ৩০টি সিজ়ারিয়ান প্রসব হয়, সেখানে স্বাভাবিক প্রসব হয় মাত্র ১০টি। একই পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য বড় শহরেও।

Advertisement

কেন সিজ়ারিয়ান প্রসবের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে? কেন বেশির ভাগ প্রসূতির স্বাস্থ্যগত জটিলতা হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে কারণটা আর্থ-সামাজিক। অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব হলে শিশু বুদ্ধিমান হবে। আবার অধিকাংশ মা-ই প্রসববেদনা সহ্য করতে চান না। তাই তাঁরা সিজ়ারিয়ান প্রসব করানোর জন্য চিকিৎসকদের উপর চাপ দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সময় বাঁচাতে ওই পদ্ধতির সাহায্য নেন। কারণ, এক জন রোগীর প্রসববেদনা ওঠা থেকে প্রসব হওয়া পর্যন্ত ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। স্বভাবতই চিকিৎসকেরা সেই সময় দিতে চান না।

আর একটি বিষয় রয়েছে। এখন বিয়ে এবং মা হওয়ার বয়স অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ৩৪-৩৫ বছরের পরে প্রথম সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন অনেকেই। ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকছে। তা ছাড়া অপারেশন হলে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লাভ বেশি হয়, সেটা তো আছেই।

সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের প্রবণতা কমাতে গত কয়েক বছর ধরে ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’-এর উপরে জোর দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের মতে, রাজ্যের উচিত আচমকা হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করে কত সংখ্যক রোগীকে কেন সিজ়ারিয়ান প্রসবের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা। তবেই একমাত্র ওই প্রবণতা কমতে পারে। তাঁদের মতে, সিজারিয়ান প্রসব কমলে মায়েদের স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে, প্রসবকালীন খরচও কম হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement