Science News

শিশুর মতো সহজ-সরল ছিলেন হকিং

জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে নানা প্রশ্ন করতাম আমরা। আর সব সময়েই তা সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন তিনি। খানিকটা যেন বাচ্চা ছেলের মতো ব্যবহার ছিল তাঁর। শিশুর মতো সহজ-সরল, হাসিখুশি। কখনও মনে হয়নি তাঁর মধ্যে কোনও ইগো রয়েছে।

Advertisement

সন্দীপ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ১৪:০৫
Share:

গুরুগম্ভীর তত্ত্ব বোঝাতে গিয়েও পড়ুয়াদের সঙ্গে বেশ রসিকতা করতেন স্টিফেন হকিং। —ফাইল চিত্র।

স্টিফেন হকিংয়ের লেখা বইটা আগেই পড়া হয়ে গিয়েছিল। জর্জ এফ আর এলিসের সঙ্গে মিলে লেখা ‘দ্য লার্জ স্কেল স্ট্রাকচার অব স্পেস-টাইম’। হকিং তখন আমাদের চোখে ঈশ্বরের চেয়ে কম নন। সেই ঈশ্বরের দেখাই মিলল কয়েক বছর পর।

Advertisement

তখন আমার ২২। জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছি। রবার্ট গেরোসের তত্ত্ববধানে চলছে আমাদের কাজকর্ম। সে সময় জেনারেল রিলেটিভিটি গ্রুপে লেকচার দিতে এলেন স্টিফেন হকিং। সেই প্রথম তাঁকে সামনাসামনি দেখা। তাঁর লেকচার শোনা। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যাঁর লেখা পড়ে বড় হয়েছি, তাঁকেই এত কাছ থেকে দেখা! মনে মনে প্রবল উত্তেজিত ছিলাম সে দিন।

রবার্ট গেরোস ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও এক অধ্যাপক জিম হার্টলের সঙ্গে হকিংয়ের তখন গভীর বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের টানেই বোধহয় বার বার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে চলে আসতেন হকিং। বেশ মনে আছে, ১৯৮১-র অক্টোবরে শিকাগোতে গিয়েছিলাম। আর পরের মাসেই হকিং এলেন আমাদের স্টাডি গ্রুপে পড়াতে। পদার্থবিদ হিসেবে তিনি কত বড় তা তো গোটা বিশ্বই জানে। তবে শিক্ষক হিসেবেও তিনি যে কত উঁচু দরের তা সে বছর টের পেয়েছিলাম। কঠিন বিষয়ও যে এত সহজ-সরল ভাবে বোঝানো সম্ভব, তা হকিংয়ের লেকচার না শুনলে বুঝতে পারতাম না। মনে পড়ে, অত্যন্ত ধীরে ধীরে পড়াতেন তিনি। আমরা যেন কিছুই জানি না, এমন ভাবে শুরুটা করতেন। তার পর আস্তে আস্তে কখন যে বিষয়ের গভীরে পৌঁছে যেতেন, বুঝতেও পারতাম না! আবার গুরুগম্ভীর তত্ত্ব বোঝাতে গিয়ে বেশ রসিকতা করতেন আমাদের সঙ্গে। ফলে পরিবেশটা বেশ সহজ হয়ে উঠত।

Advertisement

আরও পড়ুন
আইনস্টাইনের জন্মদিনেই চলে গেলেন হকিং

পড়াশোনার বাইরে অবশ্য ব্যক্তি স্টিফেন হকিংয়ের কাছাকাছি যেতাম না আমরা। ওই মাপের পদার্থবিদ, তাঁকে তো আর তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে প্রশ্ন করে বিরক্ত করা যায় না। তবে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে নানা প্রশ্ন করতাম আমরা। আর সব সময়েই তা সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন তিনি। খানিকটা যেন বাচ্চা ছেলের মতো ব্যবহার ছিল তাঁর। শিশুর মতো সহজ-সরল, হাসিখুশি। কখনও মনে হয়নি তাঁর মধ্যে কোনও ইগো রয়েছে।

আরও পড়ুন
স্টিফেন হকিং এক বিস্ময় প্রতিভার নাম

’৮৫-তে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সে দেশেই থেকে যাই আমি। সালটা এখন আর খেয়াল নেই। বোধহয় ’৮৬ বা ’৮৭ হবে। এ বার ফ্যাকাল্টি হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-তে প্রবেশ। তখন টলম্যান ফেলোশিপ পেয়েছিলাম। আর তাতেই ওই ইনস্টিটিউটে যাওয়ার সুযোগ আসে। স্টিফেন হকিং সেখানেও ভিজিটিং লেকচারার। শিকাগোর পর ফের এক বার তাঁর সঙ্গে দেখা হল। আগের মতোই রয়েছেন তিনি। একটুও বদলাননি। সেই ধীরে-সুস্থে পড়ানো, সেই পড়ুয়াদের সঙ্গে রসিকতা করা। সকলকে আপন করে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল তাঁর।

সারা জীবনে নানা সম্মানই তো পেয়েছেন স্টিফেন হকিং। তবে নোবেল পাননি কেন? এ কথাটা আজ বার বার শুনতে হচ্ছে অনেকের কাছ থেকে। এই প্রশ্নের উত্তরটা অনেক আগেই জানে গোটা বিশ্ব। তা-ও ফের এক বার বলছি। সারা জীবন ধরে যে থিওরিগুলোর কথা বার বার বলে এসেছেন তিনি, তা পরীক্ষিত সত্য বলে প্রমাণ করার মতো সূক্ষ্ম প্রযুক্তিই যে উদ্ভাবিত হয়নি এখনও!

(লেখক বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর সিনিয়র প্রফেসর। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স-এর অধিকর্তা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন