Ethiopia Volcano Eruption

ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে আফ্রিকা ও আরবের ভূগর্ভস্থ পাত! ১২০০০ বছর পর তাই কি জাগল আগ্নেয়গিরি? বিপদ কতটা

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হাওয়াই দ্বীপের মৌনা লোয়া। ২০২২ সালে শেষ বার এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইথিওপিয়ার হায়েলি গুব্বির চরিত্রও মৌনা লোয়ার মতোই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৪
Share:

ইথিওপিয়ার হায়েলি গুব্বিতে ১২ হাজার বছরে এই প্রথম অগ্নুৎপাত হল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ার একেবারে উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত। রুক্ষ, শুষ্ক, নগরবিমুখ। জনবসতি প্রায় নেই বললেই চলে। ১২ হাজার বছর পর সেখানেই আচমকা ঘুম ভেঙেছে হায়েলি গুব্বি আগ্নেয়গিরির। অগ্নুৎপাতের পর ছাইয়ের কুণ্ডলী মেঘের সঙ্গে মিশে লোহিত সাগর পেরিয়ে উড়ে এসেছে ভারতে। বিঘ্নিত হয়েছে বিমান চলাচল! আর এই ঘটনাই বিজ্ঞানীদের ধন্দে ফেলে দিয়েছে। ‘কেন আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল’-এর চেয়েও ব়ড় হয়ে উঠেছে একটি প্রশ্ন, ‘কেন এ ভাবে তৈরি হল ছাইমেঘ (অ্যাশ ক্লাউড)’? এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না!

Advertisement

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হাওয়াই দ্বীপের মৌনা লোয়া। ২০২২ সালে শেষ বার এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইথিওপিয়ার হায়েলি গুব্বির চরিত্রও মৌনা লোয়ার মতোই। এগুলি ‘কবচ আগ্নেয়গিরি’ (শিল্ড ভলক্যানো)। এই সমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাতে বিপুল পরিমাণ লাভা নির্গত হয়। কিন্তু ছাইয়ের এমন প্রকাণ্ড স্তম্ভ তৈরি হয় না। অন্য দেশের দিকে ধেয়ে যায় না কোনও ছাইমেঘ। ফলে ১২ হাজার বছর পর অগ্নুৎপাত হলেও হায়েলি গুব্বি ‌থেকে এমন ছাইয়ের কুণ্ডলীর উৎপত্তি স্বাভাবিক নয়। তা বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালের ভূবিজ্ঞানী জুলিয়েট বিগ্‌সের কথায়, ‘‘এই অঞ্চলে এমন প্রকাণ্ড অগ্নুৎপাতের স্তম্ভ, বড় ছাতার মতো ছাইয়ের মেঘ সত্যিই বিরল।’’

পূর্ব আফ্রিকার ‘রিফ্‌ট জ়োনে’ রয়েছে হায়েলি গুব্বি। ভূতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, এই অঞ্চলে মাটির গভীরে আফ্রিকান পাত এবং আরবীয় পাতের গতিবিধি রয়েছে। একে অপরের থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে আফ্রিকান ও আরবীয় পাত। তাদের সরণের হার বছরে ০.৪ ইঞ্চি থেকে ০.৬ ইঞ্চি। উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিশারদ আরিয়ানা সোল্ডাটি জানান, পাতগুলি যদি এ ভাবেই একে অপরের থেকে দূরে সরতে থাকে, তবে ধীরে ধীরে ওই এলাকায় নতুন একটি সমুদ্র তৈরি হয়ে যেতে পারে। এটাও আগ্নেয়গিরির আচমকা অগ্নুৎপাতের অন্যতম কারণ হতে পারে।

Advertisement

কিন্তু ভূতাত্ত্বিক পাতের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির কী সম্পর্ক?

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভূত্বক বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করলে তা প্রসারিত এবং তুলনামূলক পাতলা হয়ে আসে। ভূত্বকের ভিতরের স্তর থেকে উপরের দিকে উঠে আসে উত্তপ্ত শিলা। তার পর তা গলে গিয়ে ম্যাগমায় পরিণত হয়। লাভা হয়ে আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। সোল্ডাটির কথায়, ‘‘যত ক্ষণ ভূপৃষ্ঠের নীচে ম্যাগমা তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে, তত ক্ষণ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনাও থেকে যায়। তা এক হাজার বছর পরে হোক, বা ১০ হাজার।’’

ইথিওপিয়ার হায়েলি গুব্বিতে ১২ হাজার বছর পর এই প্রথম অগ্নুৎপাত হল, মানতে নারাজ বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের মতে, সাম্প্রতিক অতীতে মাঝেমধ্যে ক্ষীণ লাভার উদ়্‌গীরণ হয়েছে হায়েলি গুব্বি থেকে। কিন্তু তা চোখে পড়েনি। অঞ্চলটি এতটাই প্রত্যন্ত এবং উপেক্ষিত যে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষাও হয়নি বহু দিন। ফলে যদি ছোটখাটো অগ্নুৎপাত হয়েও থাকে, তা অন্তরালে থেকে গিয়েছে। ভূবিজ্ঞানী জুলিয়েট জানিয়েছেন, হায়েলি গুব্বির কাছাকাছি ‘এরটা আলে’ নামে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। গত জুলাই মাসেই সেখানে অগ্নুৎপাত হয়েছে এবং প্রচুর ছাই নিঃসৃত হয়েছে। ওই সময়েই স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত তথ্যে ভূমির গতিবিধি ধরা প়়ড়েছে। দেখা গিয়েছে, এরটা আলে থেকে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের ১৮ মাইল গভীর পর্যন্ত বয়ে গিয়েছে। হায়েলি গুব্বির নীচের অংশেও সেই ম্যাগমা পৌঁছেছিল। এই সময় আগ্নেয়গিরির মাথায় কিছু ছাইমেঘ তৈরি হয়েছিল। স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল, আগ্নেয়গিরির জমিও কয়েক সেন্টিমিটার উঠে এসেছে।

২৩ নভেম্বর, রবিবার (ভারতীয় সময়) হায়েলি গুব্বির অগ্নুৎপাতের সময় ঘটনাচক্রে ইথিওপিয়াতে ছিলেন সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী ডেরেক কিয়ের। তিনি পরের দিনই ঘটনাস্থল থেকে ছাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ঠিক কী ধরনের ম্যাগমা থেকে অগ্নুৎপাত হল, কেন এত ছাই নির্গত হল, তা ওই নমুনা বিশ্লেষণ থেকে জানা যেতে পারে। সত্যিই ১২ হাজার বছর ধরে হায়েলি গুব্বি নিশ্চুপ ছিল কি না, মিলতে পারে সেই উত্তরও। তবে একটি অগ্নুৎপাত বিজ্ঞানীদের চোখ খুলে দিয়েছে। আফ্রিকার এই ‘উপেক্ষিত’ অঞ্চলে আগামী দিনে ভূবিজ্ঞানীদের আনাগোনা বাড়বে, আরও বেশি করে এই এলাকার ভূমি-পাত নিয়ে গবেষণা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement