অণুর অন্দরমহল দেখিয়ে নোবেল জয় ত্রয়ীর

রসায়নে এ বার নোবেল পেলেন এমন তিন বিজ্ঞানী যাঁদের আবিষ্কৃত প্রযুক্তির ফলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় একটি কোষের জৈবিক প্রক্রিয়াও বোঝা যাবে। আগে সাধারণ মাইক্রোস্কোপের তলায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস দেখা যেত না। এর পর আবিষ্কার হল ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ। তা দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার শারীরিক গঠন দেখা গেলেও শরীরের ভিতরের জৈবিক কাজকর্ম ধরা পড়ত না। কিন্তু এ বার এরিক বেৎজিগ (৫৪), স্টেফান ডব্লিউ হেল (৫১) এবং উইলিয়াম ই মোয়েরনার (৬১) এই তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে কোষের ভিতরের ঘটে যাওয়া নানা রহস্যের পর্দা উন্মোচন করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৫
Share:

এরিক বেৎজিগ, স্টেফান ডব্লিউ হেল এবং উইলিয়াম মোয়েরনার

রসায়নে এ বার নোবেল পেলেন এমন তিন বিজ্ঞানী যাঁদের আবিষ্কৃত প্রযুক্তির ফলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় একটি কোষের জৈবিক প্রক্রিয়াও বোঝা যাবে।

Advertisement

আগে সাধারণ মাইক্রোস্কোপের তলায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস দেখা যেত না। এর পর আবিষ্কার হল ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ। তা দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার শারীরিক গঠন দেখা গেলেও শরীরের ভিতরের জৈবিক কাজকর্ম ধরা পড়ত না। কিন্তু এ বার এরিক বেৎজিগ (৫৪), স্টেফান ডব্লিউ হেল (৫১) এবং উইলিয়াম ই মোয়েরনার (৬১) এই তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে কোষের ভিতরের ঘটে যাওয়া নানা রহস্যের পর্দা উন্মোচন করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আবিষ্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে ক্লেজ গুস্তাফসন বলেছেন, “এ যেন একটা স্বপ্ন সত্যি হল।”

ভার্জিনিয়ার অ্যাশবার্নে হওয়ার্ড হিউ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত বেৎজিগ। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির অধিকর্তা হেল। আর মোয়েরনার অধ্যাপনা করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisement

এত দিন পর্যন্ত গবেষণাগারে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় ব্যাকটেরিয়ার আকারের কোনও কিছুকে দেখলে মনে হত যেন কোনও ভারী তরলের ফোঁটা পড়ে আছে। তাকে বিস্তারিত ভাবে পরীক্ষা করা ছিল যন্ত্রটির আওতার বাইরে। যদিও ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের (ইলেকট্রনের সাহায্যে কাজ করে যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র) আরও গভীরে পরীক্ষা করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু সে যন্ত্রটির সাহায্যে জীবিত কোনও কিছুকে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তার কারণ এই যন্ত্রে পরীক্ষা করার জন্য বস্তুটির কাটা অংশ বিশেষ নিতে হয়। তাই বস্তুটির ভিতরে ঘটে চলা ঘটনাগুলি (যেমন কোষ বিভাজন ইত্যাদি) তখন নজরে আসবে না। বিশ্বাস করা হত অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ০.২ মাইক্রোমিটারের পরে কিছু দেখা যাবে না। কিন্তু এই সীমা অতিক্রম করতে সফল হলেন ত্রয়ী- বেৎজিগ, হেল, মোয়েরনার। সুপার রেজলিউশন ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপিতে ত্রয়ীর অবদানের জন্যই বিজ্ঞানীরা আজ ডিএনএ ট্রান্সফারেন্স বা স্নায়ুকোষের কার্যকলাপ সবই দেখতে পান।

টুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতেন হেল। যে সব রাসায়নিক পদার্থ ফ্লুরোসেন্স দেয় (আলো বিচ্ছুরণ করতে পারে), কোষের সঙ্গে তা জুড়ে দিয়ে পরীক্ষা করতেন তিনি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ডিএনএর প্রতিটি তন্তুকে (স্ট্র্যান্ড) পৃথক ভাবে লক্ষ করা সম্ভব ছিল না। এর উপায় অবশ্য নিজেই আবিষ্কার করলেন হেল। ফ্লুরোসেন্স দেয় যে সব অণু, তাদের আলোর রশ্মির সাহায্যে প্রথমে উচ্চ শক্তি স্তরে নিয়ে যাওয়া হল। আবার আর একটি আলোর রশ্মির সাহায্যে কোষের একটি ছোট্ট জায়গা (ন্যানো মিটার মাপের) ছাড়া অন্য জায়গার ফ্লুরোসেন্ট অণুগুলির দ্যুতি কমিয়ে দেওয়া হল। এর ফলে ওই ছোট্ট জায়গাটির ছবিটি পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠল। এ রকম ভাবে বারবার কোষের নানা জায়গার ছবি নিয়েই পুরো কোষটির প্রকৃত ছবিটি অবশেষে স্পষ্ট হয়ে উঠল। এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হল, স্টিমিউলেটেড এমিশন ডিপ্লিশন (এসটিইডি)। ২০০০ সালে হেল ‘ই কোলাই’ ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে এই পদ্ধতির ব্যাখ্যা করেন।

অন্য দিকে এরিক এবং উইলিয়াম গবেষণা করছিলেন অণুদের ফ্লুরোসেন্স নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে। এই পদ্ধতির সাহায্যে এক একটি অণুর ফ্লুরোসেন্স নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর তা দিয়েই বিজ্ঞানীরা কোষের ছোট ছোট জায়গার ছবি বারবার তুলে তা সুপারইম্পোজ করে কোষের আসল ছবি ধরতে সফল হলেন। ২০০৬ সালে এরিক এই ন্যানোস্কোপি প্রথম বার ব্যবহার করেছিলেন।

আমেরিকার কেমিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট, টম বার্টন বলেছেন, “ত্রয়ীর এই সাফল্য অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনতে সাহায্য করবে। এত বড় এবং স্পষ্ট ভাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় পরীক্ষা আগে সম্ভব ছিল না।” এই পদ্ধতির সাহায্যে সম্ভব হয়েছে মানুষের ব্রেনের এক একটি কোষের কাজ করার কৌশল বুঝতে। এমনকী পারকিনসন, অ্যালঝাইমার্স বা হানটিঙ্গটনের মতো রোগে যে সব প্রোটিন জড়িত তাদেরও পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে এই পদ্ধতির সাহায্যে।

খবর যখন এল মোয়েরনার তখন ব্রাজিলের একটি সম্মেলনে। স্ত্রীর কাছেই খবরটি পান তিনি। আর, হেল বলেছেন রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের ফোন পেয়েও বিশ্বাস করেননি। তাঁর কথায়, “ভাগ্যিস সেক্রেটারি, নর্ডমার্কের গলাটা চিনতাম। না হলে ভুয়ো ফোন ভেবেই উড়িয়ে দিতাম!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন