লোকালয়ে ঢুকে টানা দু’দিন ধরে তান্ডব চালান চিতাবাঘটিকে কাবু করতে না পারায় বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন কোচবিহারের কালজানি গ্রামের বাসিন্দারা। শুক্রবার দিনভর চিতাবাঘটি এলাকায় তান্ডব চালায়। সেটির হামলায় জখম হন ৩ জন গ্রামবাসী। তাঁদের নাম ফজলুর রহমান, জলিল ইসলাম ও সাহের আলি। সকলেই কোচবিহার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ নিয়ে গত দু’দিনে ৯ জন বাসিন্দা চিতাবাঘের হামলার মুখে পড়লেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে। বন দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন অবশ্য বলেন, “লোকালয়ে ঢুকে পড়া চিতাবাঘটিকে ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা ও খাঁচা বসিয়ে ধরার দুই রকম চেষ্টাই হচ্ছে। বনকর্মীদের তরফে গাফিলতি নেই। ইতিমধ্যে দু’জন বনকর্মীও জখম হয়েছেন। আমি নিজে নিয়মিত ঘটনার খোঁজখবর রাখছি।”
এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য বন দফতরের ভূমিকায় আদৌ খুশি নন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর চিতাবাঘটি এলাকার ঝোপঝাড় থেকে জলাশয়ের লাগোয়া এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। বেলা কিছুটা বাড়তে সেটিকে দরগা পাড়া থেকে খানিকটা দূরে দেবনাথ পাড়া এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেও দেখেছেন বাসিন্দাদের অনেকে। বনকর্মীরা সংখ্যায় কম থাকায় সে ভাবে সেটিকে ধরার কিংবা ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করার কাজই করতে পারেননি। কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বনকর্মীদের পরামর্শ মেনে জাল দিয়ে চিতাবাঘটিকে ধরার চেষ্টায় সাহায্য করতে গিয়ে দুই জন সেটির হামলার মুখে পড়েন। ওই ঘটনায় প্রশিক্ষণহীন বাসিন্দাদের কেন চিতাবাঘ ধরার মতো বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন জখমের আত্মীয়রা। কালজানির বাসিন্দা জখম ফজলুর রহমানের দাদা ইছাদুল হক বলেন, “বন দফতরের জনা পনেরো জন কর্মী ছিলেন। তাঁদের পক্ষে চিতাবাঘটিকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না বুঝেই আবেদনে সাড়া দিয়ে অন্য কয়েকজনের সঙ্গে ফজলুর সাহায্য করতে নেট নিয়ে অভিযানে সামিল হয়েছিল। ভাইয়ের এতটা ঝুঁকি নেওয়া উচিত হয়নি। আরও বড় বিপদও হতে পারত।”
এই পরিস্থিতিতে গোটা কালজানি গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক বেড়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই বেশিরভাগ বাড়ির দরজায় খিল সেটে দেন গ্রামবাসীদের অনেকেই। এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু সাহা রায় বলেন, “আতঙ্কে স্বাভাবিক জনজীবনও ব্যাহত হয়ে পড়েছে।”