কলাইকুণ্ডার গ্রামে হাতির তাণ্ডব চলছেই

চারদিন আগেই দাঁতালের হানায় গ্রামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও এক জন। তার পরেও রেসিডেন্সিয়া দু’টি হাতি এলাকা না ছাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন খড়্গপুর গ্রামীণের কলাইকুণ্ডার অর্জুনি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০০:৫১
Share:

চারদিন আগেই দাঁতালের হানায় গ্রামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও এক জন। তার পরেও রেসিডেন্সিয়া দু’টি হাতি এলাকা না ছাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন খড়্গপুর গ্রামীণের কলাইকুণ্ডার অর্জুনি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। লোকালয় থেকে হাতি দু’টিকে সরিয়ে জঙ্গলঘেরা এলাকায় নিয়ে গিয়েছেন বনকর্মীরা। কিন্তু বর্ষায় বনকর্মীরা যথেষ্ট নজরদারি চালাতে না পারায় ফের আশপাশের গ্রামে ঢুকে পড়ছে হাতি দু’টি দাপাচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত ওই এলাকায় হাতির তাণ্ডব চলেছে। দুই দাঁতালের হামলায় প্রায় চল্লিশটি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলাইকুণ্ডা ও সীমানা ঘেঁষা ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলের জঙ্গলে গোটা দশেক রেসিডেন্সিয়াল হাতি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। ছোট ছোট তিন-চারটি দলে ভাগ হয়ে খাদ্যের সন্ধানে এত দিন জঙ্গল এলাকায় ঘুরে বেড়াত তারা। কিন্তু জঙ্গলে খাবারের অভাব বুঝে মাঝেমধ্যেই হাতি ঢুকছে লোকালয়ে। গত সোমবার গভীর রাতে ঝটিয়ার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ে দু’টি রেসিডেন্সিয়াল দাঁতাল। ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক পেরিয়ে কলাইকুণ্ডার অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রাধানগর, খুদামার হয়ে কৃষ্ণরক্ষিতচকে দাপিয়ে বেড়ায় তারা। মাটির দেওয়াল ভেঙে হাতি পিষে দেয় এক মহিলাকে। জখম হন আরও এক মহিলা। এরপর বনকর্মীরা এসে দু’টি হাতিকে সরিয়ে নিয়ে যায় কলাইকুণ্ডার জঙ্গলে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, কলাইকুণ্ডার জঙ্গল থেকেই বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে হাতি দু’টি ফের লোকালয়ে চলে আসছে। হাতির হামলায় ভেঙে গিয়েছে কৃষ্ণরক্ষিতচকের লোধা আশ্রম স্কুলের পাঁচিলের একাংশ ও গেট। হাতির আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে গ্রামবাসীর। রাত নামলেই কয়েকশো গ্রামবাসী আশ্রয় নিচ্ছে লোধা আশ্রমে। ওই আশ্রম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কাননবালা প্রামানিকের কথায়, “হাতির তাণ্ডব চলছেই। আমাদের আশ্রম স্কুলটি পাঁচিল ঘেরা হওয়ায় হাতি ঢোকে না। তাই গ্রামবাসীরা আশ্রয় নিয়েছে। রাত হলেই আবাসিক ছেলেমেয়েদের নিয়ে রাত জাগতে হচ্ছে।’’ গত চারদিনে অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাশোল, শালবনি, কৃষ্ণরক্ষিতচক, কালকেউদি, দমগেড়িয়া, জাফরপুর, ভুরুরচাটি-সহ বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে বাড়ি ভেঙেছে ওই দুই হাতি। বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ধান নষ্ট করেছে। শনিবার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আদল নায়েক বলেন, “রাত হলেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে দু’টি হাতি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তারা দাপিয়ে বেড়ানোয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’’

Advertisement

বন দফতরের জানিয়েছে, বৃষ্টির মধ্যে হুলা পার্টি কাজ করতে না পারার সুযোগ নিচ্ছে হাতিগুলি। সেই সুযোগে জঙ্গল ঘেঁষা লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ে প্রতিদিনই একটি-দু’টি করে বাড়ি ভাঙছে। খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “আমাদের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে জঙ্গলে হাতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার। আমরা গ্রামের লোকেদের ইতিমধ্যে হুলার সরঞ্জাম দিয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির সময় হুলা কাজ করে না। সেই সুযোগে ওই হাতিগুলি লোকালয়ে আসায় কিছু বাড়ির ক্ষতি হচ্ছে।’’ তাহলে কী ভাবে এই তাণ্ডব রোখা যায়? অঞ্জনবাবুর জবাব, “হাতিগুলিকে জোর করলে রেগে গিয়ে আরও বেশি অনিষ্ট করতে পারে। তাই ধীরে ধীরে তাদের গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন