দূষণ কমাতে নেতৃত্ব দিক ভারতও, চাপ ব্রিটেনের

দূষণ কমাতে ইতিমধ্যেই নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে ফেলেছে আমেরিকা ও চিন। এ বার এগিয়ে আসুক ভারতও। আর সেই উদ্যোগে সব রকম সাহায্য করবে ব্রিটেন। শনিবার এমনটাই জানালেন ব্রিটিশ সরকারের শক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্যারনেস বর্মা। তবে কয়লার উপর নির্ভরশীল ভারত যে রাতারাতি তা করতে পারবে না, সে কথাও বিলক্ষণ জানে ব্রিটেন। সে ক্ষেত্রে দূষণ কমাতে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে ভারতকে সাহায্য করবে ডেভিড ক্যামরনের সরকার, আশ্বাস দিয়েছেন ব্যারনেস বর্মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৭
Share:

দূষণ কমাতে ইতিমধ্যেই নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে ফেলেছে আমেরিকা ও চিন। এ বার এগিয়ে আসুক ভারতও। আর সেই উদ্যোগে সব রকম সাহায্য করবে ব্রিটেন। শনিবার এমনটাই জানালেন ব্রিটিশ সরকারের শক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্যারনেস বর্মা। তবে কয়লার উপর নির্ভরশীল ভারত যে রাতারাতি তা করতে পারবে না, সে কথাও বিলক্ষণ জানে ব্রিটেন। সে ক্ষেত্রে দূষণ কমাতে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে ভারতকে সাহায্য করবে ডেভিড ক্যামরনের সরকার, আশ্বাস দিয়েছেন ব্যারনেস বর্মা।

Advertisement

কার্বন দূষণ ছড়ানোর নিরিখে বিশ্বে প্রথম দুই স্থানে রয়েছে আমেরিকা ও চিন। তৃতীয় স্থানে ভারত। এর মধ্যে দিন তিনেক আগেই উষ্ণায়ন রুখতে ঐতিহাসিক চুক্তি সই করেছে আমেরিকা ও চিন। তাতে আগামী দু’দশকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে দূষণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। ওবামা ঘোষণা করেছেন, ২০২৫-এর মধ্যে কার্বন দূষণের হার ২০০৫-এর তুলনায় ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ কমিয়ে ফেলবে আমেরিকা। চিন ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। আর এ সবের ফলেই চাপে ভারত।

আসলে নয়াদিল্লি বরাবরই বলে এসেছে, দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলিরই বড় ভূমিকা নেওয়া উচিত। না হলে দূষণ কমাতে গিয়ে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হবে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্প। ব্যাহত হবে আর্থিক বৃদ্ধি। এ যুক্তিতে এত দিন চিনও সুরে সুর মিলিয়েছে ভারতের। কিন্তু সাম্প্রতিক চুক্তির পর ভারত এখন একা। ডিসেম্বরে পেরুর লিমা শহরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলন বসছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদীর সরকার কী অবস্থান নেয়, আপাতত তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।

Advertisement

তবে যে চুক্তি নিয়ে এত মাতামাতি তাতে খুশি হলেও সন্তুষ্ট নয় ব্রিটেন। আজ দিল্লিতে ব্যারনেস বলেন, “মার্কিন-চিন চুক্তি পুরোপুরি আশাপূরণ না করলেও তা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে আমরা চেয়েছিলাম, আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হোক।” ব্রিটেন নিজে ২০২০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে ভারতের পক্ষে যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়, সেটাও জানেন ব্যারনেস। আজ দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “জানি ভারত কয়লার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও দূষণ কমাতে পারে এমন প্রযুক্তি দিয়ে আমরা ভারতকে সাহায্য করতে পারি।” এর পাশাপাশি সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের মতো অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারের উপরও জোর দেন তিনি। তাঁর বয়ানে, “ব্রিটিশ সংস্থাগুলি সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের মতো ক্ষেত্রে ভারতে লগ্নি করতে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি নিয়েছেন। বিদেশি সংস্থাগুলিকে এ দেশে এসে কারখানা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ লগ্নিকারীরা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এ দেশে সৌর বিদ্যুতের মতো ক্ষেত্রে লগ্নি করতে চাইছেন।” এ বিষয়ে রাজস্থান, পঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন ব্যারনেস। বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের সঙ্গেও।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের মধ্যে দেশের সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। সে কাজে সৌর বিদ্যুতের মতো অপ্রচলিত শক্তিকেও কাজে লাগানোর কথা রয়েছে। কিন্তু তাতে যে কয়লার ব্যবহার কমছে না, তা নতুন করে কয়লা খনি বন্টনের ঘোষণা থেকেই স্পষ্ট। সরকারি সূত্রের খবর, দূষণ রুখতে আলোচনা হবে। নরেন্দ্র মোদী জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠন করেছেন। সেখানেই দূষণ-প্রশ্নে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে যা-ই হোক না কেন, ভারত ও চিনের লক্ষ্যমাত্রা যে কোনও ভাবেই এক হতে পারে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়াদিল্লি। তাদের যুক্তি, ভারতে মাথা পিছু কার্বন দূষণের পরিমাণ ১.৯ টন। চিনের ক্ষেত্রে তা ৭.২ টন। এ থেকেই পরিষ্কার উদ্যোগী হলেও চিনের মতো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করবে না ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন