পরপর হাতির হানায় আতঙ্ক বড়দিঘি বাগানে

লাগাতার হাতির হানায় বিপাকে পড়েছেন ডুয়ার্সের বড়দিঘী চা বাগানের শ্রমিকরা। গত দু’দিনে দাঁতালের হামলায় চা বাগানে ২৫টিরও বেশি শ্রমিক আবাস গুড়িয়ে গিয়েছে। দাঁতালের হামলায় চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে এক চা শ্রমিকেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০২:৪২
Share:

হাতির হানায় ভেঙেছে ঘর।—নিজস্ব চিত্র।

লাগাতার হাতির হানায় বিপাকে পড়েছেন ডুয়ার্সের বড়দিঘী চা বাগানের শ্রমিকরা। গত দু’দিনে দাঁতালের হামলায় চা বাগানে ২৫টিরও বেশি শ্রমিক আবাস গুড়িয়ে গিয়েছে। দাঁতালের হামলায় চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে এক চা শ্রমিকেরও। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা নামলেই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকছে বড়দিঘির শ্রমিকেরা।

Advertisement

গরুমারা জাতীয় উদ্যানের একেবারে লাগোয়া বড়দিঘি চা বাগানে এ ধরনের লাগাতার হাতির হামলা আগে কখনও হয়নি বলেই জানাচ্ছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক আবাসের পাশাপাশি প্রাথমিক স্কুলের রান্নাঘর, বড়দিঘি বিট অফিসেরও আংশিক ক্ষতি করেছে দাঁতালের দল। শুধু বড়দিঘি চা বাগান নয়, ঘনবসতির লাটাগুড়ি বাজার এলাকাতেও গত মঙ্গলবার গভীর রাতে দাঁতাল হানা দেওয়ায় ত্রস্ত হয়ে পড়েছে লাটাগুড়ির বাসিন্দারাও। সব মিলিয়ে টহলদারির অভাবকেই দায়ী করেছেন লাটাগুড়ির বাসিন্দারা।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ দুটি দাঁতাল একসঙ্গে গরুমারার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বড়দিঘি বিট অফিসে ঢুকে পড়ে। বিট অফিসের বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে দাঁতাল দু’টি সিমেন্টের খুঁটির বেড়া ভেঙে দিয়ে ছাওয়াফুলি বনবস্তিতে ঢুকে পড়ে। সেখানে দুটি ঘর ভেঙে দেয় তারা। এরপর এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের রান্নাঘরের জানালা ভেঙে বড়দিঘি চা বাগানের পাহাড়ি লাইনে ঢুকে পড়ে। সেখানে ১৮টি শ্রমিক আবাস গুড়িয়ে দেয় দাঁতাল দু’টি। টিনের চাল ও পাকা দেওয়ালের মজবুত শ্রমিক আবাসও জোড়া দাঁতালের হামলায় একের পর এক গুড়িয়ে গিয়েছে বড়দিঘি চা বাগানে।

Advertisement

বাগানের শ্রমিক বিনোদ ওঁরাও, বাবলু ওঁরাও, বন্ধন খেড়িয়ারা বলেন, ‘‘চা বাগানের মজবুত শ্রমিক আবাসও যে হাতি খুব সহজেই ভেঙে ফেলবে তা কোনদিনই ভাবিনি। ফের যদি দাঁতাল হামলা চালায় তাহলে কী করব তা ভেবেই এখন রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।’’ বড়দিঘি চা বাগানের ম্যানেজার ইন্দ্রজিত সিংহ চহ্বাণের কথাতেও দুশ্চিন্তার ছাপ। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু চলতি মাসেই হাতির হামলায় বাগানের ২৫টিরও বেশি শ্রমিক আবাস যেমন গুড়িয়ে গিয়েছে। তেমনি হাতির হামলায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই অবস্থায় বনদফতরের বাড়তি টহল দেওয়া উচিত। অথচ টহল তো দূরের কথা বনদফতরে ফোন করলেও তাদের দেখা মিলছে না।’’

হাতির হানায় আতঙ্ক গরুমারা লাগোয়া লাটাগুড়ি বাজারেও। একটি দাঁতাল গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর লাটাগুড়ি বাজারের ভেতর দিয়ে মিলপাড়া এলাকাতে চলে আসে। ঘন বসতি এলাকায় ঢুকে কোথাও বাড়ির বেড়া ভেঙে দিয়ে আবার কোথাও গাছের কাঁঠাল খেয়ে আতঙ্ক ছড়ায় দাঁতালটি। মিল পাড়ার বাসিন্দা অতসী দে, কস্তুরী চক্রবর্তীদের কথায়, ‘‘দাঁতাল যে ঘর ভাঙেনি সেটাই রক্ষা। লাটাগুড়ির রেঞ্জার শুভেন্দু দের কথায়, ‘‘বনকর্মীরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। বড়দিঘী চা বাগানে বাড়তি টহল দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। লাটাগুড়িতে গত মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই দাঁতালটি ঢুকে পড়ায় বনকর্মীদের সেটিকে জঙ্গলে পাঠাতে বেগ পেতে হয়েছে।’’

এদিকে মঙ্গলবার ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের গ্রাসমোড় চা বাগানেও দাঁতালের হানায় তিনটি শ্রমিক আবাসের ক্ষতি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন