স্মৃতি উস্কে বহরমপুরের রাস্তা দাপাচ্ছে জুনিয়র শম্ভু

আবার সে এসেছে ফিরিয়া। সেই চেনা দাপট। চেনা মেজাজ। কয়েক দশক আগের শম্ভুর কথা মনে রেখে বহরমপুরের মানুষ ইতিমধ্যে তার নামকরণও করেছেন-- জুনিয়র শম্ভু। তার তাণ্ডবে পথচারী থেকে শুরু করে মোটর বাইক ও গাড়ির আরোহীসকলেই তটস্থ। ইতিমধ্যে সে কথা পৌঁছে গিয়েছে বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস ও বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের কানেও।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৭
Share:

জুনিয়ার শম্ভুর দাদাগিরি রাস্তায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

আবার সে এসেছে ফিরিয়া।

Advertisement

সেই চেনা দাপট। চেনা মেজাজ। কয়েক দশক আগের শম্ভুর কথা মনে রেখে বহরমপুরের মানুষ ইতিমধ্যে তার নামকরণও করেছেন-- জুনিয়র শম্ভু। তার তাণ্ডবে পথচারী থেকে শুরু করে মোটর বাইক ও গাড়ির আরোহীসকলেই তটস্থ। ইতিমধ্যে সে কথা পৌঁছে গিয়েছে বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস ও বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের কানেও। পুরপ্রধান বলছেন, “নাগরিকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জুনিয়র শম্ভুর বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ করব।” আর বহরমপুর মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস রীতিমতো ভারতীয় দণ্ডবিধি উল্টেপাল্টে দেখে বলছেন, “শম্ভু নম্বর টু যখন পাবলিক ন্যুইসেন্স তৈরি করছে তখন তো প্রশাসনিক ব্যবস্থা একটা নিতেই হবে। তবে তার জন্য কারও কাছে থেকে একটা লিখিত অভিযোগ পেতে হবে আমাদের। অভিযোগ পেলেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৩৩ নম্বর ধারায় শম্ভুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বন দফতরে নির্দেশ পাঠানো হবে।”

জুনিয়র শম্ভুর ত্রাসের সরণি বেয়ে শহরের লোকজনের মনে পড়ে যাচ্ছে কয়েক দশেক আগে প্রয়াত সিনিয়র শম্ভুর লম্বা কাহিনি। শহরের মোড়ে, রকে, চায়ের দোকানের আড্ডায় চলছে জুনিয়র ও সিনিয়র শম্ভুর মধ্যে তুলনা। জুনিয়র শম্ভুর রাজ্যপাট মূলত ভাগীরথী পাড়ের কান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে গ্রান্টহল মোড় পর্যন্ত। অন্য দিকে, কান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে শুরু করে উত্তরে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সে দাপিয়ে বেড়ায়। বহরমপুর শহরের ব্যস্ততম ওই এলাকায় কয়েক মাস ধরে চলছে জুনিয়র শম্ভুর দাদাগিরি। তবে সিনিয়রের রাজ্যপাট ছিল ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ ও লাগোয়া জেলা প্রশাসনিক অফিস, ফৌজদারি আদালত, রেজিস্ট্রি অফিস, টেক্সটাইল কলেজ, পুলিশ ব্যারাক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলাশাসকের বাংলো ও সার্কিট হাউস চত্বর। সিনিয়র শম্ভুর গায়ের রং লাল হলেও লাল রং ছিল তার বেজায় না-পসন্দ। লাল রঙের গাড়ি, বাইক, বা ছাতা দেখলেই পেল্লায় সিং বাগিয়ে তেড়ে যেত।

Advertisement

তার রোষ থেকে রেহাই মেলেনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। জেলা সফরে আসা বুদ্ধের কনভয়ের সামনে থাকা একটি গাড়িতে শিং-এর গুঁতো মেরেছিল সিনিয়র শম্ভু। অতঃপর পুলিশ প্রশাসনের গলদঘর্ম দশা। দোর্দণ্ডপ্রতাপ শম্ভুকে মগে করে দূর থেকে জল ছেটানো হলে সে যাত্রা রেহাই মেলে। ওই ঘটনার কয়েক মাস পরে বহরমপুরে একটি হাসপাতালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সিনিয়র শম্ভু যাতে কোনও রকম গোলমাল না করে সে জন্য প্রশাসন কড়া নজর রেখেছিল। সেই শম্ভুকে এক বার বহরমপুর পুরসভার পক্ষ থেকে আটক করে কয়েক মাস রাখা হয়েছিল পুরসভার চত্বরে একটি খোঁয়াড় তৈরি করে। সেখানে নিয়মিত চিকিৎসক গিয়ে তাকে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাও করেছিল। ২০০৫ সালে তার মৃত্যুর পর লরিতে করে মৃতদেহ নিয়ে শহর ঘুরিয়ে অন্তিম যাত্রা সম্পন্ন করা হয়। শহরের উত্তর প্রান্তে ফরাসডাঙায় শাস্ত্রীয় নিয়মবিধি মেনে শম্ভুর মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়। রানিবাগান ট্যাক্সি ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যাগযজ্ঞ করে হাজার খানেক মানুষ খাইয়ে শ্রাদ্ধশান্তিও করা হয়। সিনিয়র শম্ভুর নামে রানিবাগানে মন্দিরে একটি থানও রয়েছে।

সিনিয়রের সেই মর্যাদা জুনিয়র পাবে কি নাসে প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়। তবে শিং-এর গুঁতোয় জুনিয়র সবসময় মনে করিয়ে দিচ্ছে সিনিয়রের কথা। চলতে চলতে হঠাৎ শিং বাগিয়ে ঘাড় তুলে রাজপথের মাঝখানে সে দাঁড়িয়ে পড়ছে। পুরনো কান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজারের ফল ব্যবসায়ী শ্যামল ঘোষ বলছেন, “জুনিয়র শম্ভু সবসময় যে এমন করে তা নয়। মেজাজ বিগড়ে গেলেই সে এমন করে। তখন তার সামনে দাঁড়ায় সাধ্যি কার!” আর এক ব্যবসায়ী নিমাই হালদার জানান, সিনিয়রের মতো জুনিয়রও কিন্তু নিয়মিত দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুলোটা, কলাটা, পাঁউরুটিটা দিলেই চলে যায়। অন্যথা হলে শম্ভুবাবার মেজাজ চড়ে যায়। তখন সে দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে দেয়। “আর একটা মিল আছে দুই ষাঁড়ের। সিনিয়রের মতো জুনিয়রও কিন্তু জলে ভয় পায়।” হাসতে হাসতে বলছেন নিমাইবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন