ডুয়ার্সের বনাঞ্চলকে এড়িয়ে বিকল্প পথেই বেশি ট্রেন চালাতে রেল বাজেটে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ডুয়ার্সের জঙ্গল ও লাগোয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যু ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে রেল সূত্রের খবর।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নিউ কোচবিহার হয়ে শামুকতলা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬৯ কিলোমিটার ডবল লাইন তৈরির জন্য রেল বাজেটে ৩০০ কোটির সংস্থান রাখা হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে, শিলিগুড়ি থেকে মালবাজার হয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া ট্রেনকে ঘুরপথে চালানো সম্ভব হবে। মালগাড়ি এবং যে সব ট্রেনের ডুয়ার্সে স্টপেজ নেই সেই ট্রেনগুলিকে বিকল্প নিউ জলপাইগুড়ি শামুকতলা পথে চালানো হবে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাতে হাতি-করিডর বলে যে এলাকাটিকে ধরা হয়, তা এড়ানো যাবে। ট্রেনের সংখ্যা কমলে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর আশঙ্কাও কমবে বলে আশা করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
ডবল লাইনে বরাদ্দ হওয়ায়, আশাবাদী রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “মালগাড়ি বা অন্য যে ট্রেনগুলির ডুয়ার্স রুটে চলার প্রয়োজন নেই, সেগুলি বিকল্প লাইন দিয়ে চালানো হলে ওই সমস্যা কিছুটা মিটবে। এতে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি বা বন্যপ্রাণীর মৃত্যু অনেকটাই কমবে বলে আশা করছি।”
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সেবক-মালবাজার হয়ে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার রেল পথে মহানন্দা এবং চাপরামারি অভয়ারণ্য ছাড়াও ডায়না, রেতি এবং রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গল পড়ে। ২০০৪ সালে এই লাইনটি মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজ হওয়ার পরে ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ৫৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। হাতির মৃত্যু ঠেকাতে বন দফতর বারবার ওই লাইনে কম ট্রেন চালানোর আর্জি জানালেও, রেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। তাদের যুক্তি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার হয়ে শামুকতলার লাইনটি অসমের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান লাইন। কিন্তু সিঙ্গল লাইন হওয়ায় এই পথে বেশি ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। সে কারণেই মালগাড়ি এবং বেশ কয়েকটি ট্রেনকে জঙ্গলপথে বাধ্য হয়ে চালাতে হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। অসমগামী মূল লাইনটি ‘ডবল’ হয়ে গেলে সেই সমস্যা কাটবে।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুগত লাহিড়ি বলেন, “ডবল লাইনের কাজ চলছে। বাজেট বরাদ্দ মেলায় কাজে গতি আসবে। তবে কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে।”
শুধু বরাদ্দ নয়, দ্রুত কাজ শেষ করার উপরে জোর দিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “ডবল লাইনের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। যত দিন বিকল্প পথে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না, ততদিন বন্যপ্রাণ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।” আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সদস্য অমল দত্ত বলেন, “ডবল লাইনের কাজ সম্পূর্ণ হলে কিছু ট্রেন হয়ত কমবে। তবে পুরোপুরি হাতির মৃত্যু এড়াতে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”