Shobdo Jobdo

বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন

প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে যে শব্দগুলি অবিকৃতভাবে বাংলায় এসেছে বা প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে স্বল্প রূপান্তরিত হয়ে সেগুলিকেই বাংলার শব্দ ভাণ্ডারে মৌলিক শব্দ হিসেবে পরিচিত।  

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:৩২
Share:

বাংলা শব্দ ভাণ্ডার

ভাষা হিসাবে বাংলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে বাংলার বিস্তৃত শব্দ-ভাণ্ডার। বিভিন্ন ভাষার শব্দ গ্রহণে এবং আত্মীকরণে বাংলা ভাষা অত্যন্ত উদার। তবে, সেই ঔদার্য মূলত শব্দ-ভাণ্ডার পর্যায়েই সীমিত। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা সবসময়েই নিজস্ব বিন্যাসরীতিই অনুসরণের পক্ষপাতী। অথচ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কারণে বিবিধ ভাষার শব্দ বাংলা ভাষার অন্দরে প্রবেশ করেছে। সেই কারণেই বাংলা ভাষার সেই শব্দেকে মোট ৩টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে —

Advertisement

মৌলিক শব্দ — তদ্ভব শব্দ, তৎসম শব্দ, অর্ধতৎসম শব্দ

আগন্তুক শব্দ — দেশি শব্দ, বিদেশী শব্দ, প্রাদেশিক শব্দ

Advertisement

নব্যগঠিত শব্দ — অবিমিশ্র শব্দ, মিশ্র শব্দ

মৌলিক শব্দ: মনে করা হয়, বাংলা ভাষা অত্যন্ত প্রাচীন একটি ভাষা। সময়ের সঙ্গে যে ভাষার নিজের মতো করে বিবর্তন ঘটেছে। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে যে শব্দগুলি অবিকৃতভাবে বাংলায় এসেছে বা প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে স্বল্প রূপান্তরিত হয়ে সেগুলিকেই বাংলার শব্দ ভাণ্ডারে মৌলিক শব্দ হিসেবে পরিচিত।

মৌলিক শব্দগুলিকে মোট তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেগুলি হল —

  • তদ্ভব শব্দ: যে শব্দগুলি সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে সামান্য রূপান্তরিত হয়ে বাংলায় চলে এসেছে, সেগুলিকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। যেমন — সংস্কৃত শব্দ চন্দ্র থেকে প্রাকৃত শব্দ চন্দ হয়ে তা বাংলায় দাঁড়িয়েছে চাঁদ।
  • তৎসম শব্দ: আবার সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষা অভিধানে সরাসরি সংগৃহীত শব্দগুলিকে বলা হয় তৎসম শব্দ। যেমন — শ্রদ্ধা, ভক্তি, পিতা, মাতা ইত্যাদি।
  • অর্ধতৎসম শব্দ: আর্য ভাষা থেকে গৃহীত বহু তৎসম শব্দ লোকের মুখে বিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে বলা হয় অর্ধতৎসম শব্দ। যেমন — রত্ন থেকে এসেছে রতন, শক্তি থেকে এসেছে শকতি।

আগন্তুক শব্দ: যে শব্দগুলি বাইরের বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে গ্রহণ করা হয়েছে সেই শব্দগুলিকে বলা হয় আগন্তুক শব্দ। আগন্তুক শব্দকে মোট ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেগুলি হল —

  • দেশি শব্দ: আর্যরা আমাদের দেশে আসার পূর্বে যে সব প্রাচীন ভাষাগুলি প্রচলিত ছিল সেই ভাষার বহু শব্দ কখনও সরাসরি, আবার কখনও প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এই শব্দগুলিকেই বলা হয় দেশি শব্দ। যেমন — কম্বল, মেটে, চরুট ইত্যাদি।
  • বিদেশি শব্দ: মনে করা হয়, বাংলা ভাষায় আগত বিদেশী আগন্তুক শব্দগুলি এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে। যেমন — আরবি ভাষা থেকে গ্রহণ করা বাংলা শব্দগুলি হল আইন, আদালত, কেচ্ছা। আবার ফারসি ভাষা থেকে গৃহীত বাংলা কয়েকটি শব্দ হল চশমা, চাকরি, কোমর, বেচারা।
  • প্রাদেশিক শব্দ: ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের ভাষা ব্যবহৃত হয়। সেই ভাষা থেকে অনেক শব্দ বাংলা ভাষার শব্দকোষে প্রবেশ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। এগুলিকে প্রাদেশিক শব্দ বলা যায়। যেমন — গুজরাতি শব্দ হরতাল, খাদি, চরকা, বাঈ হয়েছে বাংলা শব্দ। মারাঠি শব্দ চৌথ, বর্গি, পেশোয়া, চামচা যুক্ত হয়েছে বাংলা শব্দ।

নবগঠিত শব্দ: বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে এমন কিছু শব্দ আছে, সেগুলি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের স্বার্থে নিজেরাই সৃষ্টি করে নিয়েছি। যেমন — বনচাড়াল, আবহাওয়া, ডাক্তার-বদ্যি, অফিস পাড়া ইত্যাদি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন