নারী দিবসে ‘না’! এ বার নয়া চমক

দিনটা ৮ মার্চ। নারী দিবসে ছাড়! দোকানে দোকানে, জামাকাপড়ে, প্রসাধনীতে, রেস্তরাঁর খাওয়াদাওয়ায়। খানিক জীবনেও। ৩৬৪ দিন তো রইল যৌন হেনস্থা, নিগ্রহ, মারধর, আর সব নিঃশব্দ অপমানের জন্য।

Advertisement

অন্বেষা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৩১
Share:

—ফাইল চিত্র।

এই দিনটায় ভিড় বাসে বুঝি কেউ বিশ্রী ভাবে ছোঁবে না!

Advertisement

এই দিনটায় কোনও ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি হবে না!

এই দিনটায় নারী নির্যাতন শব্দটা ভুলে যাবে সবাই?

Advertisement

দিনটা ৮ মার্চ। নারী দিবসে ছাড়! দোকানে দোকানে, জামাকাপড়ে, প্রসাধনীতে, রেস্তরাঁর খাওয়াদাওয়ায়। খানিক জীবনেও। ৩৬৪ দিন তো রইল যৌন হেনস্থা, নিগ্রহ, মারধর, আর সব নিঃশব্দ অপমানের জন্য। ঠিক তেমনই কি নয়?

প্রশ্ন তুলেছে সাম্প্রতিক এক ভিডিও। একটি গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থা প্রচার করছে সেটি। যাতে সোজাসাপ্টা বলা হয়েছে, ‘লেটস আনসেলিব্রেট উইমেন্স ডে।’ নানা বয়সের নানা মহিলা বলে চলেছেন, নারীদিবস উদ্‌যাপন আর নয়।

কিন্তু কেন?

হ্যাশট্যাগে #আনসেলিব্রেট বললেই কি লিঙ্গবৈষম্য দূর হয়ে যাবে? ভিডিও-র অন্যতম মুখ পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘দিনটার ঐতিহাসিক তাৎপর্য অস্বীকার করা হচ্ছে না। পালন করতেও বাধা নেই। কিন্তু উদ্‌যাপনে বিষয়টা লঘু না হয়ে যায়।’’ ৮ মার্চ, সকাল থেকেই ‘হ্যাপি উইমেন্স ডে’-র শুভেচ্ছার যে ঢল নামে, প্রশ্ন করা হচ্ছে সেই ধরনটাকেই। এখানে এত ‘আনন্দ’ খুঁজে পাওয়ার মধ্যে দিনটার প্রকৃত গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে না তো? এটাই মনে করালেন পরমা।

আরও পড়ুন: আমার ছদ্মবেশী মেয়েদের কথা

একই কথা মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। তিনিও বলছেন, নারীদিবস পালন আর উদ্‌যাপনের মধ্যে একটা ফারাক আছে। নারী আন্দোলনের ইতিহাসের ফসল যে দিনটা, তাকে উদ‌্‌যাপন করে ‘বাজারিকরণ’ করে ফেলার মধ্যেই গলদ। ভিডিও-র প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো নতুন রকমের সংগ্রামের ভাষা তৈরি করুক, চান অনুত্তমা। শুধু উদ্‌যাপনের আনন্দে যে প্রশ্নগুলো এক দিনের ছাড়ের মতোই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

পণ্যায়নের যে ভাবনা সেলিব্রেট করানোর মধ্যে কাজ করে, #আনসেলিব্রেট বলার মধ্যে দিয়েও সেই ভাবনা চারিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো? ভিডিওটির পরিচালক অভিষেক সিংহ বললেন, ‘‘এটা সচেতনতা বাড়ানোর একটা চেষ্টা। লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে মহিলারা কে কী ভাবেন, তাঁদের বলতে বলা হয়েছিল। তাঁদের কথাপ্রসঙ্গেই উঠে এল, শুধু একটা দিনেই কেন আটকে থাকবে এই ভাবনা?’’

১৯০৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে প্রথম পালিত হয়েছিল ‘জাতীয় নারী দিবস।’ তার পর আরও অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম পেরিয়ে ১৯১৪ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ থেকে পালন শুরু। সেটা আর না মানলে সত্যিই কোনও বার্তা পৌঁছবে কি?

সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায় মনে করছেন, ‘‘সেলিব্রেট করে পরিবর্তন আনা যায়নি। এত দিনের অভিজ্ঞতা তাই বলছে। ফলে মনে হচ্ছে, এর কোনও মানে নেই। তাই হয়তো #আনসেলিব্রেট।’’ ব্যক্তিগত ভাবে নারী দিবস পালনের মধ্যে অন্য গুরুত্ব খুঁজে পান প্রশান্তবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘এই বিশেষ দিনে বেশ কিছু আলোচনা হয়। অনেক প্রাসঙ্গিক কথা সংবাদমাধ্যম থেকেও উঠে আসে। সে সব কথা বহু মানুষকে ছুঁয়ে যায়। সেটার একটা প্রভাব অবশ্যই আছে। সবটাই নেতিবাচক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন